ষোড়শ সংশোধনী রায়ে সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই
ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই ক্ষমতায় টিকে থাকার। এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ রায় ঐতিহাসিক। এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজের চিত্র উঠে এসেছে।
সারাদেশে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভায় ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা হবে বলে আলোচনা করা হয়েছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে কার বিরুদ্ধে এই জনমত গড়ে তুলবেন। যে রায়ে জনগণের আশা আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে জনমত? আমরা স্পষ্ট করে বলছি, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে জনগণকে পাশে পাবে না তারা ( আওয়ামী লীগ সরকার)।
দলটির মহাসচিব বলেন, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই ক্ষমতায় টিকে থাকার। এ রায় ঐতিহাসিক। এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এখন জনবিছিন্ন। প্রহসনের নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতায় এসেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে যাননি। তাহলে এরা কিসের জনপ্রতিনিধি দাবি করেন?
বিএনপি আদালত ও বিদেশির উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসতে চায় বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনায় মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কখনও কারও সঙ্গে রাতের অন্ধকারে অাঁতাত কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই জনগণের ভোটে এসেছে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়া জোর করে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে এবং বিদেশি রাষ্ট্রের (ভারত ইঙ্গিত) সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসেছে বলে সবাই জানে।
সরকারের নানা অনিয়ম, নির্যাতন ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিদিন হত্যা আর গুম অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশে বিএনপির ৭৪ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ১০ লাখের বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা দেয়ার উদ্দেশ্য একটাই বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ চায় এই সরকার কবে বিদায় হবে আর বিএনপি কবে ক্ষমতায় আসবে। ষোড়শ সংশোধনী রায় নিয়ে মন্ত্রিসভার আলোচনাকে উদ্বেগজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের এমপি মন্ত্রীরা কথায় কথায় আইনের শাসনের কথা বলেন। কোন সেই আইনের শাসন? যে সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, সেই সংসদে অনুমোদিত আইনের শাসন? এই আইন বেআইনি। এই আইন জনগণের বিরুদ্ধে। দলের আইনজীবীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ঐক্যবদ্ধ হোন। এই সরকার সহজে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না, সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় তাদের বাধ্য করতে হবে। কারণ বিএনপির লড়াই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে নয় বরং দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদের আলোচনায় আমরা মর্মাহত ও আতঙ্কিত বোধ করছি। কেননা এই রায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, রায়কে বিতর্কিত করেন তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন না। তারা চান না বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক। তিনি বলেন, যারা ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চান তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। মওদুদ আহমেদ বলেন, এই সরকারের জনসমর্থন তলিয়ে গেছে। যার জন্য এরা বিএনপিকে কোনো সভা সমাবেশ করতে দিতে চান না। ভয় পান। বিএনপির নানা কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করেন। তবে এটা ঠিক বাধা সত্ত্বেও দেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে ভোট দেবেন এতে কোনো সন্দেহ নাই।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া বলেন, ষোড়শ সংশোধনী রায় যতবার বাতিল করা হবে ততবারই সংসদে পাস করা হবে বলে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে জুডিশিয়ারিকে অপমান করা হয়েছে বলে অবিলম্বে সমন জারি করে তাকে (অর্থমন্ত্রী) গ্রেফতার করার দাবি করছি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম, যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমখ।
এফএইচ/ওআর/এমএস