বিএনপি এখন টেমস নদীর তীরে
বিএনপি এখন টেমস নদীর তীরে নির্বাসনে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার সন্ধায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে সুপ্রিম কোটে আয়োজিত আইনজীবী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “কারা চক্রান্ত করে? কারা চক্রান্তের চোরাগলি খোঁজে? তারা (বিএনপি) যখন দেখেছে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই, ঠিক তখনই ষড়যন্ত্রের চোরাগোপ্তা পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কখনও দেশে, কখনও বিদেশে।”
আগামী নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা না দেখে বিএনপি ষড়যন্ত্রের চোরাগোপ্তা পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পরিচিতি সভা ও কর্মী সমাবেশে করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।
ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ছেড়ে ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে না আসলে বিএনপি’র অবস্থা মুসলিম লীগের মতো হবে বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “নেতিবাচক রাজনীতি তাদের আরও দুর্বল করে ফেলছে। তারা ইতিবাচক রাজনীতিতে যদি ফিরে না আসে তবে তাদের ভবিষ্যৎ মুসলিম লীগের মতোই অন্ধকার। বিএনপি নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে নেতিবাচক রাজনীতি করে।”
এ সময় দলের নেতাকর্মীদের বিএনপি’র আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে বিচলিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, “বিএনপিকে নিয়ে আপনাদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হবেন না। বিএনপির অবস্থা এখন বেহাল সড়কের মতো। তাদের বুদ্ধিজীবীরাই বলে কোমরভাঙা দল, কেউ বলে হাঁটুভাঙা দল। আমরা সেটা বলতে চাই না।”
কাদের বলেন, “দুর্বার আন্দোলন ঈদের পরে, বেগম জিয়ার মুখের কথা। কোথায় গেল এই দুর্বার আন্দোলন? ঈদের পর একমাস চলে গেল, এ দুর্বার আন্দোলন বেগম জিয়ার সঙ্গে এখন টেমস নদীর পাড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে। মানুষ এখন বলে এই ঈদ না ওই ঈদ, এই মাস না ওই মাস, এই বছর না ওই বছর- আন্দোলন হবে কোন বছর?”
কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “ওরা এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাক, আপনারা সঙ্গে সঙ্গে রিঅ্যাক্ট করবেন না। শরৎ বাবুর একটা কথা, এখনও বাস্তব- মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তখন তার মুখের বিষ উগ্র হয়ে ওঠে। শক্তি কমে গেছে দুর্বল বিএনপি’র এখন মুখের বিষই পুঁজি। কান্নাকাটি আর নালিশ হচ্ছে এখন কর্মসূচি। বিএনপির নাম আমি দিয়েছি বাংলাদেশ নালিশ পার্টি- বিএনপি।”
আওয়ামী লীগপন্থী ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ’ ও ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ এক হয়ে গঠন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’।
এ প্রসঙ্গে কিাদের বলেন, “এই দুইটাকে এক করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এই কাগুজে ঐক্যে কাজ হবে না। মুখে ঐক্যের দরকার নেই। ঐক্য মনে চাই, চেতনার ঐক্য চাই।
ঐক্যের অন্যতম উপাদান হলো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা ছাড়া ঐক্য হয় না। আর আমরা নেতারা যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ না হই তাহলে আমরা কর্মীদের সুশৃঙ্খল হওয়ার নির্দেশ দেব, অনুরোধ করব, সেটা হয় না।”
বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের দল এবং দলীয় প্রধান সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনার সমালোচকদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “যে যাই বলুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তার শেকড় থেকে এক চুলও সরে যায়নি। যে যাই বলুক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মকালের চেতনা থেকে একটুও সরে যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার আদর্শ আমরা ধারণ করে আছি দৃঢ়ভাবে। কৌশলের পরিবর্তন হয়। বস্তবতার প্রয়োজনে আমাদের কৌশলের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু শিকড় থেকে আমরা কখনও সরে যাইনি।”
“আমরা সবাই আমাদের নেত্রীকে চিনি। সমালোচনার খাতিরে যারা সমালোচনা করেন, আমি শুধু একটা কথা বলতে পারি- কে পারত বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো দুঃসাহসিক কাজ করতে? আমি চ্যালেঞ্জ করি শেখ হাসিনা ছাড়া এত সাহসী নেতা পচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে জন্ম নেয়নি। তিনি আপস করবেন? তিনি আদর্শের প্রশ্নে আপস করবেন? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আপস করবেন? এটাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদেরকে বলি- মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখাবেন না।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, আব্দুল বাসেত মজুমদার, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
এফএইচ/ওআর/বিএ