গণতন্ত্রের প্রতি এ আঘাত : ফখরুল
পাহাড়ধসে দুর্গতদের দেখতে রাঙামাটি যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় হামলার ঘটনাটি ‘গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে রোববার বেলা ১টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রক্তাক্ত হয়েছেন। আমি আঘাত পেয়েছি, আরও কয়েকজন আঘাত পেয়েছেন।
‘কে কতটুকু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তা বড় কথা নয়। আসল কথা হচ্ছে এ আঘাত গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত।’
প্রসঙ্গত, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালী এলাকায় বিএনপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার পর রাঙামাটি যেতে না পেরে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন- এ আঘাত তাদের প্রতি। এ আঘাত মুক্তবুদ্ধি ও সুস্থ চিন্তার প্রতি আঘাত। সরকারের খারাপ কাজের প্রতিবাদ যারা করেন তাদের প্রতিও এ আঘাত। এ আঘাতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের চরিত্র আরও বেশি উন্মোচিত হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পাহাড়ধসে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে আমরা ঢাকা থেকে চারজনের একটি দল চট্টগ্রামে আসি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে আমরা রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা হই। রাস্তায় জানতে পারি রাঙামাটির যে রাস্তায় ভাঙন শুরু হয়েছিল সেটি ভেঙে গেছে। ওই রাস্তা হয়ে রাঙামাটি যাওয়া সম্ভব নয়। তখন সিদ্ধান্ত নেই কাপ্তাই লেক হয়ে নদীপথে রাঙামাটি পৌঁছাব। যে কারণে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কাপ্তাই যাওয়ার জন্য বের হই। ইছাখালী বাজারে যেতে না যেতেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এরই মধ্যে কিছু দূর যেতেই হঠাৎ অর্ধশত যুবক লাঠিসোটা, হকিস্টিক, রামদা ও বড় বড় পাথর নিয়ে আমাদের গাড়িতে আক্রমণ করে। প্রথমে তারা গাড়ির সামনের গ্লাস পাথর ছুড়ে ভাঙচুর করে। এরপর হকিস্টিক, লাঠিসোটা দিয়ে অনবরত ভাঙচুর চালানো হয়।’
‘তাদের হামলায় আমাদের কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রক্তাক্ত হন, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী আহত হন, আমি নিজেও আহত হই।’
‘আওয়ামী লীগ সব সময় দাবি করে তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। আসলে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, ভিন্ন মতেও তাদের বিশ্বাস নেই। সহনশীলতা বলতে তাদের কিছুই নেই। এ আক্রমণ অবিশ্বাস্য এবং এখনও এটি আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমাদের পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের ওপর যদি এ ধরনের হামলা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়’- বলেন মির্জা ফখরুল।
‘আমরা তো সেখানে জনসভা অথবা পার্টির মিটিং করতে যাচ্ছিলাম না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুর্গতদের, ক্ষতিগ্রস্তদের দলের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাতে যাচ্ছিলাম। এ আক্রমণের একমাত্র প্রতিবাদ তখনই হবে যখন আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এ ফ্যাসিস্ট, অপশক্তিকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
আক্রমণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এ আক্রমণ কোথা থেকে হতে পারে সেটি আপনারাই তদন্ত করে দেখবেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এটি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হামলায় আহত স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের আক্রমণ হতে পারে না।
‘আমাদের রাজনীতি করতে দেবেন না, এখন ত্রাণও দিতে পারব না- এমনটি তো হতে পারে না’
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব ও জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের ওপর যদি আক্রমণ হয় তাহলে আর বাকি থাকে কী? এরপর কি আর রাজনীতি থাকে? রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।
হামলা ও ভাঙচুরের সময় দুর্বৃত্তরা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদের সমর্থকরা জড়িত থাকতে পারেন বলেও অভিযোগ করেন আমির খসরু।
যদিও হাছান মাহমুদ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এটি রহস্যজনক’।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রহুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহববুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ নেতাকর্মীরা।
এমএআর/জেআইএম