হাসিনার সুইডেন সফর ‘আনন্দ ভ্রমণ’ : খালেদা
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য দুই জেলায় পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইডেন সফরকে ‘আনন্দ ভ্রমণ’ বলে সমালোচনা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন পাহাড়ধসের ঘটনা উল্লেখ করে এ সমালোচনা করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এর আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১৫৫ জন লোক মারা গেছেন। আর্মির লোকজনও সেখানে মারা গেছেন। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের নেত্রী এখন প্লেজার ট্রিপ আছেন, আনন্দ ভ্রমণে আছেন। তার দেশের মানুষের প্রতি কোনো মমতা নেই।’
‘সে (প্রধানমন্ত্রী) বলে তিনি নাকি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। দেশের মানুষ জীবন দিচ্ছে, তিনি ভ্রমণ করছেন। তাহলে এটায় কী প্রমাণ হয়? তিনি কী দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত নয়।’
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ছেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মইনউদ্দিন-ফখরুউদ্দিন বললো, তারপরই তো তিনি গেলেন দেশে ছেড়ে। তারপরে তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক নাটক করে আবার আসলেন। আসার পরে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সবকিছু করেছেন।’
ওই সময়ের সেনা সমর্থিত সরকারের ইচ্ছায় তার বিদেশে চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাকেও দেশের বাইরে চলে যেতে ওরা বলেছিলো। আজকে যদি আমরা চলে যেতাম দেশের বাইরে, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তাহলে আমরা বড় ছেলেটাও ভালো থাকতো, আমার ছোট ছেলেটাকেও আমি হারাতাম না।’
‘আমি কিন্তু দেশে ছেড়ে যাইনি, দেশের মানুষকে ছেড়ে যাইনি। আমি বলেছি, এই দেশ আমার, এই দেশের মাটি ছেড়ে আমি যাব না। আল্লাহর ইচ্ছা দেখেন, আমি দেশ ছেড়ে যাইনি কিন্তু মঈন-ফখরুদ্দিন দেশে ছেড়ে পালিয়েছে। আজকে বুঝতে হবে দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করে, দেশের সঙ্গে বেঈমানি করে কোনোদিনও কিন্তু আল্লাহর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।’-বলেন বিএনপি প্রধান।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের যে অবস্থা বিরাজমান, মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, দেশে অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। ২০১৪ সালে নির্বাচন হয় নাই। কেউ ওই নির্বাচনে স্বীকৃতি দেয় নাই, একমাত্র আমাদের প্রতিবেশী দিয়েছে। কিন্তু এবার তাদের (প্রতিবেশী দেশ) সুরটাও একটু বদল। তাদের সুরও বদল হয়েছে, তারা বুঝেছে, তারা ভুল করেছে, ঠিক করেনি। সেজন্য এবার বিএনপি যদি না যায়, ২০ দল যদি না যায় এদেশের কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ একলা নির্বাচন করতে পারবে না।’
একাদশ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ও ২০ দল নির্বাচনে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জিতব।’
‘সেজন্য আমরা বলতে চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচনটা তখনই সম্ভব- হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার যেটা আওয়ামী লীগ দাবি করেছিলো আমাদের সময়ে (১৯৯৫ সালে), আমরা দিয়েছিলাম। তখন তত্ত্বাবধায়ক নাম ছিলো, এখন যেকোনো নাম দিতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবে না, হতে পারে না।’
খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘ আমরা বিশ্বাস করি, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দেশের মানুষ আরেকবারের মতো শিক্ষা দেবে। তারা দেশে যত অপরাধ করেছে, দেশের মানুষের সঙ্গে যত অপরাধ করেছে, কত মা-বোন তাদের ভাই হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে- তাদের কান্না, তাদের আহাজারি। কত লোক পঙ্গু হয়েছে, বহু লোক জেলে আছে। আমি বলব এখন বিরোধী দলের যেসব লোক জেলে আছে, তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় ঢুকানো হয়েছে, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিন।’
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ছোট ছোট নেতারা যারা আছেন তারা বুঝতে পারছেন সময়টা কিন্তু সামনে ভালো নয়। আপনাদের সময় ভালো আসছে না। যারা গণনা করেন, গণনাকারীরাও এটা বলেছে। কাজেই ছোট-খাটো নেতারা যারা আছেন, যা কিছু বানিয়েছেন, ওগুলো নিয়ে কেটে পড়ার ব্যবস্থা করেন। বড় নেতারা তাদের ব্যবস্থা করেছে, পকেটে টিকিট নিয়ে ঘুরছে। অবস্থা দেখলেই তারা উড়াল দেবে- আপনাদের দিকে চাইবে না ফিরে।’
বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ বলেছিলো ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। এখন দরিদ্র মানুষের সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা। সাধারণ মানুষের অবস্থা দুর্বিসহ। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। পত্রিকায় দেখলাম বিনা টেন্ডারে চাল আমদানি করা হচ্ছে। সেই চাল আমদানি করে কি গরিব মানুষকে কম মূল্যে দেয়া হবে, নাকি চালের অর্ধেক টাকা পকেটে যাবে। বাকি টাকা যাবে আওয়ামী লীগওয়ালাদের পেটে কিংবা তারা সেই টাকা পাঁচার করবে। লুট করা অর্থ নিরাপদে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনরা বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত।’
বিএনপির এই ইফতার মাহফিলে এতে ১০ সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। সুশৃঙ্খল এই ইফতার অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাইরে-ভেতরে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবির সঙ্গে ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছবিও দেখা গেছে।
মূল মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ দক্ষিণের নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদীর লুনা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এম এ মালেক, মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতানা সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।
এছাড়া দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হুদা, ইউনুস মৃধা, মীর হোসেন মীরু, নাসিমা আখতার কল্পনা, সাজ্জাদ জহির, মোশাররফ হোসেন খোকন, মো. মোহন, জয়নাল আবেদীন রতন, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ,হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি, সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইদুর রহমান মিন্টু, আবদুল হাই পল্লব, উত্তরের সিনিয়র সহ সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজিএম শামসুল হক, খন্দকার জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গরীবে নেওয়াজ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ।
এমএম/এসআর/জেআইএম