ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে রইলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী
কালো গাউন তখনও গায়ে জড়ানো। গলায় বেল্ট (আইনজীবীদের ব্যবহৃত) বাঁধা। প্রতিদিনের মতো আজও ক্লিন সেভ। গাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। নির্বাক দৃষ্টিতে বুলডোজারের বাকেটে চোখ। বুলডোজার যখন মালামাল তুলে ডাম্পট্রাকে ঢালছিল, তখন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
বুধবার দুপুরের পরই রাজধানীর গুলশান-২ এর প্রধান সড়ক হয়ে পড়ে যানজটে স্থবির। যানজট ঠেলে ১৫৯ নং বাড়ির সামনে আসতে-যেতেই বিশাল জটলা। শতেক পুলিশ, পুলিশের কর্তা, র্যাব, রাজউক কর্মকর্তা, রাজউক শ্রমিক আর সাংবাদিকদের ভিড়ে ঢাকা পড়ে বাড়ির কালো গেট। পুলিশ বাঁশি ফুঁকিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে।
গেটের সামনের ফাঁকা জায়গাতেই এলোমেলো করে রাখা হয় দামি আসবাবপত্র। গেট ঘেঁষেই পায়চারী করছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ। শত মানুষের জলটা আর কোলাহল থাকলেও মওদুদ ছিলেন একেবারেই নির্বিকার। পুলিশের ভিড়ের মধ্য থেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি। বাড়ির ভেতরেও যেতে পারছিলেন না। খানিক পরে গেটের বাইরে রাখা সোফায়ই ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে বসে পড়েন।
দল ভাঙার কারিগর নামে পরিচিত বিশিষ্ট রাজনীতিক মওদুদকে এভাবে বাড়ি ছাড়তে হবে, তা যেন বড়ই বেমানান ঠেকছিল। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মওদুদ সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষিপ্ত বয়ানে বলছিলেন, কোনো নোটিশ করেনি রাজউক। আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। এ অবস্থায় উচ্ছেদ অভিযানে আমি অবাক হয়েছি। রাজনীতির কারণেই আমাকে হয়রানি করা হলো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কৌঁসুলি ছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। বঙ্গবন্ধু খুনের পর ভেড়েন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দলে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের পতনের পর আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের আস্থাভাজনে আসেন। কূটকৌশল আর প্রজ্ঞার রাজনীতির বিনিময়ে হন এরশাদের কেবিনেটের উপ-রাষ্ট্রপতি। এরশাদ জামানার শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীও হন মওদুদ। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ফের যোগ দেন বিএনপিতে। বিএনপির আমলে দায়িত্ব পান আইনমন্ত্রীর। বিএনপির রাজনীতিতে এখনও তিনি গুরুত্বপূর্ণ নেতা। দলটির স্থায়ী কমিটিতে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, অবৈধভাবে বসবাস করে আসা বাড়ি নিয়ে দায়ের করা মামলায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন গত ৪ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
গত বছরের আগস্টে গুলশান-২ নম্বরের বাড়িটি মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন (নামজারি) ও ডিক্রি জারি করতে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপিল বিভাগে বাতিল হয়। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে রাজউক বাড়িটি নিজেদের তত্ত্বাবধানে নেয় বুধবার।
এএসএস/জেডএ/ওআর/পিআর