আওয়ামী লীগের সান্ত্বনা সুষ্ঠু নির্বাচন
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বিএনপি শুরু থেকেই নানা ধরনের অভিযোগ করে আসছিল। ভোটের দিনও রাজধানীর নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। জাল ভোট দেয়া হচ্ছে, জোর করে ব্যালটে সিল মারছে ক্ষমতাসীনরা। অথচ নির্বাচনে তাদের সমর্থিত প্রার্থীর জয় হয়েছে। তবে হেরে গেলেও ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ এতেই সন্তুষ্ট থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এত অভিযোগের পরও বিএনপি প্রার্থী জিতেছে। এতেই প্রমাণ হয় যে, বিএনপি যে সব অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা। বিএনপি প্রার্থীর বিজয় আরও প্রমাণ করে যে, কুমিল্লায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিজয়ের জন্য তারা অনেক চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্র থেকে অনেক নেতাকর্মী কুমিল্লায় গিয়ে দিনের পর দিন ভোট প্রার্থনা করেছেন।
তারা আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শামীম ওসমান ও আইভী রহমানের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ছিল তা তারা মেটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ ছাড়া কুমিল্লার মতো নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় নেতারা দিনের পর দিন পরিশ্রম করেছেন। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করেছেন। ফলে নারায়ণগঞ্জের বিজয় আওয়ামী লীগকে আরও চাঙ্গা করেছে।
কুমিল্লা নির্বাচনেও আফজাল-বাহারের দ্বন্দ্ব-বিরোধ মেটাতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নেতারা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা হেরে গেছেন বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। অনেকে স্থানীয় নেতাদের আচরণের কারণে কেন্দ্রের অনেক নেতা ক্ষুব্ধও হয়েছেন। দলীয় প্রার্থী হেরে যাওয়ায় অনেকে দুঃখও পেয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের সান্তনা এতটুকুই যে কুমিল্লায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পেছনে দলের অনৈক্যকে দায়ী করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কুমিল্লায় দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে ঐক্যবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছিল। এ কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা হেরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। জয় পরাজয় বিষয় জনগণের। নারায়ণগঞ্জের মতো কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
কুমিল্লার নির্বাচন প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কুমিল্লা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপি এ নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল। আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী হারলেও কুমিল্লার নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কুমিল্লা নির্বাচন প্রমাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি মাগুরা-মিরপুরে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তা থেকে মানুষকে আমরা মুক্ত করেছি। আগামীতে আশা করি, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং সে নির্বাচনে জনগণ নৌকার পক্ষে ভোট দেবে।
এফএইচএস/জেএইচ/আরএস/পিআর