নির্বাচনে হেরে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যাওয়ায় বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এ নির্বাচনে হারের পেছনে কেন্দ্রের অনেক নেতা কুমিল্লার স্থানীয় নেতা বাহার-আফজালের বিভাজনের রাজনীতিকে দায়ী করেছেন। স্থানীয় এই দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
কেন্দ্র থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও এ দু’নেতার সমর্থকদের এক করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের নির্দেশে কুমিল্লায় দলের প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বলছেন- বিএনপি প্রার্থীর টাকা ছড়ানোর কাছে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে ২৫ জনেরও অধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান নেন কুমিল্লা শহরে। তারা প্রত্যেকে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ভাগ করে নিয়ে দিনরাত চষে বেরিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। কেন্দ্রের নেতা হয়েও জেলা শহরের একটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করেছেন তারা। এরপরও কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় নেতারা দারুণ বিব্রত।
কুমিল্লায় নির্বাচনের ফলাফল জানার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো নেতা অবস্থান নিলে বা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
আওয়ামী লীগের যেসব কেন্দ্রীয় নেতা কুমিল্লায় প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য দীর্ঘসময় অবস্থান করেছেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমার বিপক্ষে কাজ করেছেন। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ছিল ওপরে ওপরে মিটমাট হয়ে গেলেও ভেতরে ভেতরে উল্টোপথে হেঁটেছেন তারা। যে কারণে এই হার। এ ছাড়া বিএনপি প্রার্থীর ভোটার ও সমর্থকরা কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিলেন যে কারণে তাদের জয় আরও সুনিশ্চিত হয়েছে।
দলের একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লায় বিএনপির প্রার্থী সদ্যবিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু অনেক শক্তিশালী। তা ছাড়া সীমার বাবা আফজাল খান ও তার দলীয় প্রতিপক্ষ সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্ব প্রায় তিন যুগের। এ জন্য দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য আওয়ামী লীগ দফায় দফায় বৈঠক করলেও তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন কেন্দ্রের নেতাদের চাপে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তারা ছিলেন মনোক্ষুণ্ণ। তাদের কর্মী-সমর্থকরাও অনেকে উল্টোপথে হেঁটেছেন। যে কারণে এই ভরাডুবি।
কুমিল্লার নির্বাচনে দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে প্রধান সমন্বয়কারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীমকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এ ছাড়া নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতা যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্ড নং-১ কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক, ফরিদুন্নাহার লাইলী; ওয়ার্ড নং-২ তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক, অ্যাড. আফজাল হোসেন; ওয়ার্ড নং-৩ ও ৪ ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক, শ্রী সুজিত রায় নন্দী; ওয়ার্ড নং- ৫ ও ৬ বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক, দেলোয়ার হোসেন; ওয়ার্ড নং-৭ ও ৮ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর; ওয়ার্ড নং-৯ যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, হারুনুর রশীদ; ওয়ার্ড নং-১০ শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক, শামসুন নাহার চাঁপা; ওয়ার্ড নং-১১ ও ১২ সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক, শ্রী অসীম কুমার উকিল; ওয়ার্ড নং-১৩ স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক, ডা. রোকেয়া সুলতানা; ওয়ার্ড নং-১৪ উপ-প্রচার সম্পাদক, আমিনুল ইসলাম; ওয়ার্ড নং-১৫ উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং; ওয়ার্ড নং-১৬ অ্যাড. নজিবুল্লাহ হিরু; ওয়ার্ড নং-১৭ অ্যাড. মো. আমিরুল আলম মিলন; ওয়ার্ড নং-১৮ মো; গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু; ওয়ার্ড নং-১৯ অ্যাড. এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার; ওয়ার্ড নং-২০ পারভীন জামান কল্পনা; ওয়ার্ড নং-২১ ও ২২, আনোয়ার হোসেন; ওয়ার্ড নং-২৩ ও ২৪ ইকবাল হোসেন অপ; ওয়ার্ড নং-২৫ মেরিনা জাহান; ওয়ার্ড নং-২৬ ড. শাম্মী আহমেদ ও ওয়ার্ড নং-২৭ মারুফা আক্তার পপি।
এফএইচএস/বিএ