জঙ্গিরা ইসলাম ধর্মকে মানুষের কাছে হেয় করছে : প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। আজ আমাদের দুঃখ হয়, যে ধর্মটা শান্তির বাণী শুনিয়েছে, আজ সেই ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে ইসলাম ধর্মকে মানুষের কাছে হেয় করছে জঙ্গিরা। কলুষিত করছে। আত্মহনন করা, আত্মহত্যা করা মহাপাপ আমাদের ধর্মে। তারপরও দেখা যাচ্ছে আত্মহনন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আত্মহনন করে মানুষ মারতে পারলে জান্নাতে যাবে, সঙ্গে নাকি ৭০জনকে নিয়ে যেতে পারবে। যারা এ পর্যন্ত আত্মহনন করেছে তারা কে কোথায়? জান্নাতে আছে না জাহানামে আছে কেউ কি বলতে পারবে। কেউ কি কোন খবর দিতে পেরেছে। কেউ কোন মেসেস পাঠাতে পেরেছে? পারে নাই। তাহলে বিভ্রান্ত করে মূলত কি করছে, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম, সেই ধর্মের সুনামটা নষ্ট করছে। আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে। মসুলমানদের জীবনটাকে অতিষ্ট করে তুলছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমিন।
প্রধানমন্ত্রী মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে ধর্মচর্চাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওলামা-মাশায়েক, শিক্ষক এমনকি অভিভাবকরা তাদের নিজেদের ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি যে যেখানে কাজ করেন, কেউ জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না নিজেরাই খুঁজে রেব করেন। ওই বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। তাদের মেধা জ্ঞান এভাবে বিপথে গিয়ে যেন নষ্ট না হয়।
বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোন ঠাঁই হবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ জন্য যা যা করণীয় আমরা করব। কারণ আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করায় আমাদের লক্ষ্য। এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ আমরা চাইনা। যারা বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন, বাড়ি ভাড়া দিলে প্রত্যেকে (ভাড়াটেদের) খবরটা নিজেরা রাখবেন, তা না হলে ক্ষতিটা আপনাদেরই হবে। আজ যেমনটা হচ্ছে। আমরা চাই এদেশ একটা শান্তির দেশ হোক। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান যেমন চলবে, দেশকে অথনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও তেমনই চলবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেব না বৃথা যেতে দেবনা।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হতাকারীদের তারা পুরস্কৃত করেছিল, আর যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী উপদেষ্টা করে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কাজেই যারা খুনিদের মদদদাতাদের পুরস্কৃত করে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করে, যারা গণহত্যা দিবস পালন করে না, তারা এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা এ দেশের মানুষের মঙ্গল চায় না, কল্যাণও চায় না। এটা জাতিকে মনে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ এবং বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস যেন না জানতে পারে পঁচাত্তরের পর সেভাবেই ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর ২১ বছর তারা মিথ্যা বয়ান গেয়ে গেছে। কে স্বাধীনতার ঘোষণা দিল তা নিয়ে আলোচনার দরকার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলোচনার দরকার নেই এ কারণে যে, মানুষের কাছে সত্য স্পষ্ট। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বিতর্ক, সেটা উচ্চ আদালতই সমাধান করে দিয়েছে। রায় যারা মানে না, তাদের উদ্দেশ্যটা কি?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কারও বাঁশির হুইসেলে এ দেশ একদিনে স্বাধীন হয়নি। কোন দেশ বাঁশি বাজিয়ে স্বাধীন হয়না। ১৯৯৬ সালে এসে প্রকৃতটা জানতে শুরু করি। মাঝখানে আবারও খারাপ সময় গেছে। আমরা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসলাম তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকৃত কথা জানা যাচ্ছে। প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে প্রযুক্তির যুগে সঠিক বিষয়টি জানা যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস আন্তর্জাতিক টেলিভিশনের আর্কাইভে গিয়ে তথ্য সংগ্রহেরও সুযোগ আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন মানুষ একটু সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছে, যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই যেন তাদের অন্তর্জালা শুরু হয়। তারা দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অপপ্রচার করে বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করে। যখন সারাবিশ্বের মানুষ আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলছেন তখন বিএনপি জামায়াতের নেতারা কুৎসা রটনা করছে।
এফএইচএস/ওআর/আরআইপি