ইসি গঠনে জাসদ ইনুর ৭ প্রস্তাব
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু)।
সোমবার বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলটি এই প্রস্তাব দেয়। বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের গেটে দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার সাংবাদিকদের কাছে এই সাত দফা প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর প্রস্তাব নিম্নরূপ :
২০১১ সালে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সমীপে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর পক্ষ থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন পরিস্থিতিতে ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা মোতাবেক একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অনুযায়ী বাছাই কমিটি গঠন অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাছাই কমিটি গঠনের ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সুদৃঢ় করবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর প্রস্তাব :
১. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি অর্থাৎ সংবিধানের চার মূলনীতিতে আস্থাশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা।
২. সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা।
৩. সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের পূর্বে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠন করা।
৪. সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হবার ছয় মাস পূর্বে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরু করা।
৫. বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দলসমূহ, সামাজিক নাগরিক সংস্থা এবং দেশের যে কোনো নিবন্ধিত ভোটারের কাছ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নামের প্রস্তাব আহ্বান করা। বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে তিন জন করে নামের প্রস্তাব মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা।
৬. বাছাই কমিটি কর্তৃক ১/৩ ভিত্তিতে বাছাইকৃত ১৫ জনের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণের পূর্বে উক্ত তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
৭. রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ন্যূনতম একজন নারী নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
একঘণ্টার বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের গেটে এসব প্রস্তাবের কথা জানান জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে আইন করতে আগামী সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাব করবে জাসদ। আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসা গেলে, এটি খুবই ভালো একটি পদক্ষেপ হবে।’
শিরীন আখতার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব। রাষ্ট্রপতি আমাদের বলেছেন, এটি নীতিগতভাবে উত্তম প্রস্তাব। বিবেচনা করে দেখব।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আগের নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি সংলাপের আয়োজন করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপিসহ কোনো দলই সেই কমিশন বাতিলের দাবি তোলেনি।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির এবারের উদ্যোগও ফলপ্রসূ হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনও গঠিত হবে।’
বৈঠকে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরী সভাপতি অ্যাড. রবিউল আলম, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য ডা. এম এ করিম, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন খান, অ্যাড. হাবিবুর রহমান শওকত, অ্যাড. জিকরুল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আখতার, নাদের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এইউএ/এসএইচএস/জেআইএম