নাসিক নির্বাচনে উভয় সঙ্কটে আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে বৈঠক করছেন বারবার। শামীম ওসমানকে সঙ্গে নিয়েও বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।
দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই এখন নারায়ণগঞ্জে। আছেন যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দও। চষে বেড়াচ্ছেন নগরের আনাচে-কানাচে। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এর আগে অন্য কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এভাবে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বলেই নাসিক নির্বাচনে আমাদের অধিক গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।’
প্রচার-প্রচারণায় অনেকটাই এগিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তবুও শঙ্কা, উদ্বেগ দানা বাঁধছে আওয়ামী লীগের হিসাব-নিকাশে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই হিসাবে হেরফের দেখছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, নির্বাচনের হিসাব-নিকেশ ঠিক আগের মতো হচ্ছে না। দিনকে দিন সমীকরণ পাল্টে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় রাজনীতি, শামীম ওসমানের ভূমিকা, দলের স্থানীয় বিভাজন, দলীয় একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আরও ফ্যাক্টর আমলে নিতেই হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে জাতীয় নির্বাচেনের আগে রাজধানীর পাশে গুরুত্বপূর্ণ এই নগরীর নির্বাচনকে আইকন হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনের মতো জবর-দখল করলে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে দলের একটি অংশ মনে করছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী জোটের অভিযোগ, তা অনেকটাই জোরালো হওয়ার সুযোগ মিলবে।
অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলের নৌকা প্রতীকের পরাজয় হলেও জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের অনেকে।
নাসিক নির্বাচন সরকারের জন্য গলার কাটা বলেও মত দিচ্ছেন স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড সভাপতি বলেন, আমরা বড় বেকাদায় পড়ে আছি। কেন্দ্র যে হিসাব কষছে, তার অনেক কিছুই মিলছে না। বিভাজন এখনও স্পষ্ট। শেষ পর্যন্ত কি হয় বুঝতে পারছি না। আমাদের সমস্যা দুই দিকে। হারজিত উভয় দিক নিয়েই বিপদে আছি।
কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। বলেন, ‘অবশ্যই নাসিক নির্বাচন আমাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত রাজধানীর কাছে এমন শিল্প নগরীর এই নির্বাচন বিশেষ অর্থ বহন করে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তাও যাচাইয়ের সুযোগ মিলবে।’
তিনি বলেন, ‘ভালো-মন্দ যাই হোক নাসিক নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবেই। নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হলে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। আবার হারলেও সরকারের জন্য ভালো খবর হবে না। তাই আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হোক এবং এর মধ্য দিয়েই আমাদের প্রার্থী জয় লাভ করুক।’
নারায়গঞ্জ আওয়ামী লীগের বিভাজন অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছেন। দ্বন্দ্ব কমিয়ে এনেছেন। আমাদের প্রার্থীর পারবারিক এবং ব্যক্তিগত ইমেজ রয়েছে। দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। ফলে আমরা তার জয়ের ব্যাপারে শত ভাগ আশাবাদী।
এএসএস/এআরএস/এমএস