নেত্রী আপনিই থাকুন
আমরা আপনাকেই চাই। দলে আপনার কোনো বিকল্প নেই। নেত্রী আপনিই থাকুন। ভরসা আর বিশ্বাসের মাপকাঠিতেই নেতাকর্মীদের এমন আকুতি প্রকাশ পাচ্ছিল আজ। পদ থেকে অব্যাহতির কথা মুখে আনতেই ‘না না’ শব্দের প্রতিধ্বনিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন।
রোববার কাউন্সিল অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বয়স এখন সত্তরের উপরে। ৩৫ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমি দলকে যে সময় দিয়েছি, তা পরিবার এবং ছেলেমেয়েকও দিতে পারি নাই। এখন নতুনকে দায়িত্ব দিন। জীবিত থাকতেই নতুনের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে যেতে চাই।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি করেন। কিন্তু তাতে মন গলেনি ভক্তদের। অব্যাহতি চাওয়ার পর মুহূর্তেই ‘না না’ বলে জবাব দেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় সম্মেলনের প্রথম দিনও। সম্প্রতি গণভবনেও একই ঘটনা ঘটে। নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা তিনি। তার বিকল্প তিনিই। কে আসবে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, এমন সাধ্য কার- নেতাকর্মীদের দৃঢ় মনোবলে অন্তত তাই প্রকাশ পায়। সুবর্ণ সময়ে নয়, তিনি এসেছিলেন দুঃসময়ে দলের কাণ্ডারি হয়ে।
১৭ মে, ১৯৮১ সাল। টানা ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ফিরলেন দেশমাতৃকায়। ওইদিন বিমানবন্দরে নেমেই কাঁদলেন, সবাইকে কাঁদালেন বঙ্গবন্ধুর তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। বৃষ্টি জলে নয়নের জল মিশে যেন একাকার। সেদিন হৃদয়বিদারক এমন দৃশ্যে করুণের সুরলহরি বেজে উঠলেও জ্যৈষ্ঠের তাপদাহ নিমিশেই যেন শীতলে রূপ নেয়।
ঢাকার সব রাস্তা সেদিন মিলেছিল বিমানবন্দরে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে স্বাগত জানাতে। গোটা ঢাকা যেন পরিণত হয় এক মহাজনসমুদ্রে। দীর্ঘ ছয় বছর প্রায় নির্বাসিত প্রবাস জীবন ছেড়ে আটপৌঢ়ে গৃহবধূ শেখ হাসিনা ছুটে এসেছিলেন বাংলামায়ের কোলে।
প্রত্যাবর্তনের দিন বিমানবন্দরে নেমেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আজ আমি এসেছি বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে। আমার আজ হারানোর কিছু নেই।’
দেশে তখন গণতন্ত্রের বদলে সামরিক শাসন। সামরিক শাসনের এমন দিনে শেখ হাসিনা এসেছিলেন মুক্তির দিশারী হয়ে। আঘাত করলেন গণতন্ত্রের বদ্ধ দুয়ারে। হাল ধরলেন, বাবার হাতে তিল তিল করে গড়ে ওঠা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
দায়িত্ব পেয়েই বাবার দেখানো পথে দলকে পুনর্গঠন করতে থাকেন শেখ হাসিনা। দলের মধ্যে একক নেতৃত্বে অবস্থান করেন তিনি। দীর্ঘ সংগ্রাম আর আন্দোলনের পর তারই নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসে। দলের সভাপতি পদে থেকেই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
ধারাবাহিক নেতৃত্বে শেখ হাসিনা আজ সরকারের মধ্যে যেমন অধিক শক্তিশালী, তেমনি দলের মধ্যে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সুদিনে সবাইকে পাশে নিয়ে আর দুর্দিনে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বন্ধুর পথ মাড়িয়ে চলছেন এক দুর্বার গতিতে।
তাই তো তৃণমূল কর্মীদেরও বিনীত আহ্বান ‘নেত্রী আপনিই থাকুন’।
এএসএস/বিএ/পিআর