রাজপথে নাজুক ছাত্রদল
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় কর্মসূচী সাধারণত তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোকেই সফল করতে দেখা যায়। এ জন্য দলগুলোর কাছে তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো সবসময় বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তবে দেশের প্রধান বৃহত্তম দল বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল দলের কর্মসূচী বাস্তবায়নে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে বলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এর পেছনের নানা কারণ । আর এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ।
জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর, আংশিক কমিটি গঠন করার পর, দীর্ঘ ৩ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে। গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চূড়ান্ত আন্দােলনের ডাক দেন। এর ৫ দিন পরও অন্তত ৫০ জন কর্মীকে জড়ো করে রাজধানীতে কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি ছাত্রদল।
বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনটির এরকম নাজুক অবস্থায় চলমান আন্দােলনের ফলাফল বিএনপি’র জন্য নেতিবাচক হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আওয়ামী পরিবারের সন্তানকে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি করা এবং রাজপথের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন না করার মতো বিতর্কেও সম্প্রতি জড়িয়েছে ছাত্রদল। ফলে সঙগঠনটি কর্মী সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিগুলোতে নগরীর বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদল ঢাবি শাখার পদপ্রত্যাশী এক নেতা জাগোনিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫টি হলে কমিটি গঠন করতে পারলে বিএনপির বাঁচা-মরার এই আন্দােলনে অন্তত এক হাজার নেতাকে মাঠে পাওয়া যেতো। কিন্তু টানা ৭/৮ বছর রাজনীতি করার পরও দল থেকে কোন পরিচয় না পাওয়ার কারণে জীবন বাজি রেখে সাধারণ কর্মীরা মাঠে নামার উৎসাহ পাচ্ছে না। আবার তদবির করে যারা পদ বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের অনেকেই দলের এই সংকট মুহূর্তে মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। কেউ কেউ আবার রাজপথে না থেকে ঘরে বসে টেলিভিশনে বিএনপির আন্দােলন পর্যবেক্ষণ করছেন।
সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, জগন্নাথ ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলােতে কমিটি গঠন করার নিদের্শ ছিল বিএনপির হাই কমান্ড থেকে। কিন্তু স্বয়ং খালেদা জিয়ার নির্দেশনা থাকার পরও কেন কমিটি গঠন হয়নি তা নিয়ে নানা অালোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্য থেকে মাত্র ২০০ শিক্ষার্থীকেও মাঠে নামাতে পারছে না ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির নেতারা। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না দেয়াকেই দায়ী করছেন অনেকে। এমনকি যে ১৫৩ জনকে দিয়ে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে সেসব নেতাদের মধ্যে মাত্র ২০/২৫ জনকে মাঠে দেখা গেছে। বাকী নেতাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
খালেদা জিয়া চূড়ান্ত আন্দােলনে যাবেন এরকম কথা বেশ আগে থেকে শোনা গেলেও কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা এখন খেই হারিয়ে ফেলছেন বলেও মনে করছেন ছাত্রদলের ঢাবি হল শাখার পদপ্রত্যাশী এক নেতা।
তিনি জাগােনিউজকে বলেন, এখন ছাত্রদলের বড় ভাইরা আত্মগোপন কৌশল অবলম্বন করছেন। অনেকে বলছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে একত্রিত হতে পারছেন না। এরকম পরিস্থিতি এর আগেও হয়েছে জানিয়ে এ যুক্তি খন্ডন করেন এই ছাত্রদল নেতা। আন্দােলন ঘোষণার আগে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে কমিটি না দেয়ায় রাজপথে সাধারণ কর্মী ও পদপ্রত্যাশীদেরকে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন সিনিয়র নেতারা। তাদের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার কারণে রাজপথের এই আন্দােলনে বিএনপিকে চরম খেসারত দিতে হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমান ব্যর্থতার দায় সবার। কমিটি গঠন হলেও এখনো নেতা এবং কর্মী দুই ভূমিকাতেই আমদেরই থাকতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক ছাত্রদলকে কমিটি গঠনের মাধ্যমে চাঙ্গা করতে পারলে রাজপথে আরো ভাল করতে পারতেন বলেও মত দেন তিনি। পাশাপাশি ইউনিটগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে ছাত্রদল রাজপথ কাঁপাতে পারতো বলেও মনে করেন তিনি।
আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগাে নিউজকে বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত কিছু নেতাকে নবগঠিত কমিটি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দেয়ায় বর্তমানে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আরেক নেতা দাবি করেন, খালেদা জিয়ার চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে তারা অংশ নিচ্ছেন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তিনি নিজেও ছাত্রদলের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন বলে জানান।