মির্জা ফখরুল গ্রেফতার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ডিবি পুলিশ। এর আগে প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার তাকে তার গাড়িতে করেই ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিএমপি মিডিয়া মাসুদুর রহমান গ্রেফতারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রেসক্লাব এলাকা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম এবং ডিবি কার্যালয় থেকে জসিম উদ্দীন জানান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের মুহূর্তে প্রেসক্লাবের গেইটে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ তার গাড়িতে ওঠে বসে এবং সেই গাড়িতে করেই ডিবি অফিসে নিয়ে যান।
এর আগে মির্জা ফখরুল প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে আমি প্রেসক্লাবে ছিলাম। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। গোটা দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে। গণতন্ত্র আজ বিপন্ন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার ভোটের অধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্রকে কবর রচনা করেছে। দুর্নীতির করে অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনের নামে এই সরকার হত্যা, গুম ও নির্যাতনের করে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে ও দেশের গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় খালেদা জিয়ার ডাকা চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে নেতাকর্মী ও দেশবাসির প্রতি আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনের পর মির্জা ফখরুল নিজের গাড়িতে করে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তার গাড়ি ঘিরে রাখে এবং তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে। কিন্তু তিনি নামতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তার গাড়িতে ওঠে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নির্ধারিত সমাবেশ কর্মসূচির দিন পেশাজীবীদের এক অনুষ্ঠানে যোগদিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেসক্লাবে যান। পরে প্রেসক্লাবের তিনটি গেটের বাহিরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আবস্থান নেয়। তারপর থেকে গ্রেফতারের ভয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা প্রেসক্লাবে অবস্থান করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি নেতার প্রেসক্লাবে অবস্থানকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রেসক্লাব থেকে বের না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সদস্যরা। এর নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও বিএফইউজে’র প্রাক্তণ সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রেসক্লাব কোনো রাজনৈতিক নের্তৃত্বের অবস্থানের স্থান নয়। মির্জা ফখরুল তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এখানে অবস্থান কোনো সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। এটি প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।
অন্যদিকে, ফখরুলকে যারা আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদের এক নেতা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে একাংশ) সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেছেন, “জাতীয় প্রেসক্লাবে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার অবস্থানে দোষের কিছু নেই। স্বৈরাচার এরশাদের সময় এবং ১/১১’র সময়ে রাজনৈতিক দলে নেতারা অবস্থান করেছিলেন।”
শওকত মাহমুদ বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতাদের প্রেসক্লাবে আশ্রয় দেওয়া একটি ঐতিহ্য।
এ সময় প্রেসক্লাবের বাহিরে পুলিশের সামনে অবস্থা করে মুক্তিযোদ্ধা প্রজম্ম লীগ তারা মির্জা ফখরুলকে বের করে দিতে নানা স্লোগান দেন।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি সচিবালয়ের সামনে গাড়িতে আগুন দেওয়া ঘটনার মামলাতেও তার নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ সম্পর্কিত আরো কয়েকটি খবর
# বুধবার আদালতে হাজির করা হবে ফখরুলকে
# ফখরুলকে গ্রেফতারে খালেদার নিন্দা প্রকাশ
# ঠাকুরগাঁওয়ে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল