বিরোধী দলকে বাইরে রেখে জঙ্গি সমস্যার সমাধান হবে না
জঙ্গিবাদ দমনে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিরোধী দলকে বাইরে রেখে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আমরা এর আগেও বলেছি এখনো বলছি সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি জাতীয় কনভেনশন গঠন করুন। তবে জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। “সহাবস্থান, পরমত সহিষ্ণু ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে আগামী দিনের জাতীয় নেতৃত্ব বিকাশে ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক এ আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। মানুষের গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার নেই। মানুষ কথা বলতে পারে না। সবাইকে ঘরের মধ্যে বসে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এক কথায়, বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের কথা বলে সরকার গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য- জঙ্গিবাদ দমন নয়, জঙ্গিবাদের বিষয়টি ব্যবহার করে বিরোধী দলসমূহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। সেজন্য গুপ্তহত্যার ঘটনায় তারা প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে এর দায় বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছে। আর যাদেরকে ধরা হচ্ছে তাদেরকে ক্রসফায়ারে হত্যা করছে। এর মধ্য দিয়ে তারা সত্যকে গোপন করে জনগণকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক হয়েছে। দেশ ধ্বংস করে দিয়েছেন। উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ দমন করা না গেলে দেশ আরো ভয়াবহ অবস্থার দিকে চলে যাবে। তাই এটাকে বন্ধ করার চেষ্টা করুন। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন। অন্যথায় এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো উপায় নেই।
দেশবাসীর সামনে ঘোর অন্ধকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্রমেই অন্ধকারের দিকে চলে যাচ্ছি। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আশার কথা, সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আর সেই আশার আলো হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন, এখনো করছেন। তাই আসুন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অধিকার আদায়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তোমরা কি শুধু ইফতার আর দোয়া মাহফিলে নিজেদের আবদ্ধ রাখবে, না তোমাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করবে?
বাংলাদেশের সকল অর্জনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশের এমন কোনো অর্জন নেই, যার সঙ্গে ঢাবির সম্পর্ক নেই। এখানকার ছাত্ররাই সাধারণ মানুষের সব অধিকার শাসকগোষ্ঠী থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আজ দুঃখ হয় যখন দেশব্যাপি হত্যা, খুন, গুম, নির্যাতনের সময় এখান থেকে একটি মিছিলও বের হয় না। আমি শুধু ছাত্রদলের কথা বলছি না সব ছাত্র সংগঠনই এ সাহস হারিয়েছে।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন কেন হচ্ছে না কিংবা বিরোধী মতের ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এটি তোমাদের অধিকার, তোমাদেরকেই ছিনিয়ে নিতে হবে।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাবির সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভীর রেজা রুবেল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের প্রমুখ।
এমএম/এমএইচ/বিএ