ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া যা বললেন

প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার জরুরী সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে শুরুর আগ পর্যন্ত এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। বুধবার সন্ধ্যা সাড়েটায় সব কল্পনার অবশান ঘটলো।

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি মূলত সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি দেশে জাতীয় সংকট চলছে দাবি করে এসব সংকট সমাধানে ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।

নিচে খালেদা জিয়ার পুরো বক্তব্য তুলে ধরা হলো:

আজ ইংরেজি ২০১৪ সালের শেষ দিন। আমাদের জাতীয় জীবনে এই সালটি ছিল আরো একটি দুঃসহ বছর।

আগামীকাল ভোরে উঠবে নতুন বছরের নতুন সূর্য। আমি আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে নতুন ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শুভ নববর্ষ।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেরও শেষ দিন আজ। ৪৩ বছর আগে এই ডিসেম্বর মাসে সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। গণতন্ত্র, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের ভাইবোনেরা জীবন দিয়েছিলেন। আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দখলদারেরা সেসব লক্ষ্যের কবর রচনা করেছে। আমরা মনে করি, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন এ বাংলাদেশের মালিকানা এখন আর জনগণের হাতে নেই। আওয়ামী লীগ বহুল বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী পাস এবং জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের খেয়ালখুশি ও সুবিধামতো একতরফাভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করেছে। কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে এবং কার্যত: একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। ধূর্ত অপকৌশলের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে গিয়ে তারা জনমতের কোনো তোয়াক্কা করেনি। এতে জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চেপে বসেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হয়েছে এবং জাতীয় সংসদ কার্যত: বিরোধীদল শূন্য হয়ে পড়েছে। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের তথাকথিত নির্বাচন পরিণত হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসনে। কোনো বিরোধী দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় সংসদের ৩শ’ আসনে নির্বাচন হবার বিধান রয়েছে। তার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বদ্বীতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে ভোটগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হলে শতকরা ৫ জন ভোটারও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। অর্থাৎ, কেবল বিরোধী দল নয়, শতকরা ৯৫ জনেরও বেশি ভোটার ওই একতরফা নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করে। যে তরুণেরা নতুন ভোটার হয়েছিলো তারাও ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকার, সংসদ, মন্ত্রিসভা, স্পিকার ও বিরোধীদলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন হয়ে পড়েছে। দেশের জনগণের কাছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এই ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছেন। এ থেকে যে জাতীয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা দিন দিন ঘণীভ‚ত হচ্ছে জনপ্রতিনিধিত্বহীন বর্তমান শাসন ব্যবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এই রকম একটি হীনপন্থায় ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে। জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতা দখলের কারণে জনগণের কল্যাণ তাদের কাছে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারা কোনো ধরণের জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না। তারা বলেছিল, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে নাকি ৫ জানুয়ারির  ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচন করতে হয়েছে। খুব শিগগিরই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তারা নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তারপর একটি বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সমাজসহ সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকবৃন্দ একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সমঝোতার আহব্বান জানিয়ে আসছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল সকল দলের অংশগ্রহনে গ্রহনযোগ্য একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু নিজেদের দেওয়া অঙ্গীকারও এখন আর আওয়ামী লীগ মানছে না। তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। তারা বলছে, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নাকি গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা পেয়েছে। এই দাবি সম্পূর্ণ যুক্তিহীন। বিরোধীদলের অংশগ্রহনে একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারলে গণতন্ত্র ও সংবিধান লঙ্ঘণ হয় না। বরং বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী ঘোষণাই অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। ভোটার-বর্জিত ওপ্রতিদ্বন্দ্বীতাবিহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমেই সংবিধান লঙ্ঘণ ও গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। জনগণের সম্মতি ছাড়া গঠিত সরকারই হচ্ছে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এ ধরনের একটি সরকারের দেশ পরিচালনার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা এই কথাগুলো বারবার বলছি। তাই ক্ষমতার দখলদারেরা আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চায়। দেশবাসী দেখেছে, কী ফ্যাসিবাদী কায়দায় গাজীপুরে আমাদেরকে সমাবেশ করতে দেওয়া হলো না। আমাদের সমাবেশ স্থলে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে একটি পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা তারা দেয়। আর প্রশাসন সেই বেআইনী সমাবেশ আহ্বানকারীদের নিরস্ত না করে ১৪৪ ধারা জারি করে। আমাদের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। গাজীপুরে আমাদের নেতা-কর্মীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ তাদের উপর আক্রমণ করে। অথচ পুলিশী ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের সমর্থক সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। মিথ্যা মামলায় অস্থায়ী আদালতে আমি হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় আমাদের নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ ও আমার গাড়িবহরের উপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সশস্ত্র হামলার দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। সশস্ত্র হামলাকারীদের নাম-পরিচয় ও ছবিসহ সংবাদ-মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। সেই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দূরে থাকুক তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি। অথচ আমাদের দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আপনারা দেখছেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলোতে কিভাবে হামলা করা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে আমরা সর্বোচ্চ সংযম বজায় রেখে সংঘাত এড়িয়ে চলছি। অথচ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে কুৎসিত ও আক্রমণাত্মক ভাষায় হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাকে নাকি তারা মাইনাস করে দেবে। আমি মনে করি, চুড়ান্ত বিচারে মাইনাস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। অতীতে যারা মাইনাস করতে চেয়েছেন, তারাই মাইনাস হয়ে গেছেন। আর রাজনীতি থেকে আমাকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশবাসী নিতে পারেন। অন্য কেউ নন। যারা হুমকি দিচ্ছে তারা তাদের ফ্যাসিবাদী চেহারাই সকলের সামনে তুলে ধরছে। দেশবাসীই যথাসময়ে তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, বর্তমান জবরদখলকারী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। বাক-ব্যক্তি-মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। সমাবেশ ও প্রতিবাদের অধিকার রহিত করা হয়েছে। জনগণ ন্যায়বিচারেরর অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থা চরমে পৌঁচেছে গত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতা জবরদখল করার পর থেকেই। তারা জনগণের সমস্যা, আশা-আকাক্সক্ষা দাবি-দাওয়া, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অবনতিশীল অর্থনীতি, জনগণের জীবন-জীবিকা কোনো কিছুর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না। ছলে-বলে-কৌশলে জবরদখল করা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্যে। সেই লক্ষ্যেই তারা সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করেছে বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোকে পুরোপুরি কব্জায় নিতে। দলীয়করণ ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়া বিচার বিভাগকে পূর্ণনিয়ন্ত্রণ করার হীন লক্ষ্যে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য আইন পাস করেছে।

যারা সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করছে তাদের উপর নগ্ন হামলা চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং গুম ও খুন করে স্তব্ধ করার চেষ্টা করছে। মাঠে-ময়দানে এমনকি হলরুমে পর্যন্ত রাজনৈতিক সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। মানববন্ধনের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও প্রতিবাদী জনগণকে দাঁড়াতে বাধা দেয়া ও হামলা করা হচ্ছে। সবখানে বিএনপি, ২০ দল ও অন্যান্য বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাতে প্রকাশ্য উস্কানি ও নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। দেখামাত্র গুলি করার আদেশ দিয়ে আজ তারা জনগণের মত প্রকাশের মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করছে। আইনের শাসন এখন পুরোপুরি নির্বাসিত। রাজনীতির ভাষাকে এরা কলুষিত করে সন্ত্রাসীর ভাষায় পরিণত করেছে। তারা সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তের ভাষায় কথা বলছে। আমি বলতে চাই, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আগামীতে আরো সরকার আসবে। এখন আপনারা যেসব অপকর্ম করছেন, যেমন আচরণ করছেন, তার প্রতিফল আগামীতে ভয়ঙ্কর হতে পারে। কাজেই বুঝে শুনে কথা বলবেন ও কাজ করবেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
ক্ষমতার অবৈধ দখলদার দলের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখল, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, হামলা, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের জমি ও সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান প্রভৃতি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো জনগণের কাছে ধিকৃত হতে হতে এখন বিভীষিকা ও মূর্তিমান আতংকে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সন্ত্রাস ও অত্যাচারে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক সদস্য নিজ দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের হাতে নিহত হয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে সংগঠিত ছাত্র ও শিক্ষক হত্যাকান্ড সকলকে হতবাক করে দিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার এতোটা অবনতি এর আগে আর কখনও হয়নি। বিচার বহিঃর্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ, সাংবাদিক নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ, টেন্ডার ডাকাতি অবাধে চলছে। সংবাদ-মাধ্যমে শুধু হত্যার খবর আর লাশের ছবি। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন আতংকের জনপদের নাম বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং জনপ্রশাসন ও পুলিশসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী নগ্ন দলীয়করণের শিকার হয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশের কেউ কেউ আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী কিংবা কর্মীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। তাদের একটি অংশ এখন ভাড়াটে খুনী হিসেবে কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জে ১১ খুনের নৃশংস ঘটনার পর র‌্যাব সদস্যদের কার্যকলাপ এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আমরা এ কারণেই র‌্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছি।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক আগেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের আরেক দফা দাম বাড়াবার পাঁয়তারা চলছে। আমরা বলেছি, আজ আবারো বলছি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র লাগাতার আন্দোলন শুরু করা হবে।

রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনে তেল দূষণে বিনষ্ট করা হয়েছে পরিবেশ। ঐ এলাকার জীববৈচিত্র্য আজ গুরতর হুমকির মুখে। শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাবলিক পরীক্ষাকে পরিকল্পিত উপায়ে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করা হচ্ছে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটিয়ে।

সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লুণ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় মন্ত্রী ও এমপিদের সম্পদের পরিমাণ গত ৫ বছরে কত গুণ বেড়েছে সে তথ্য আপনারা, সাংবাদিকরাই প্রকাশ করেছেন। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, হলমার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে। অস্ত্র ক্রয় কেলেঙ্কারি ও রেলের কালো বিড়ালসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের দুর্নীতির তালিকা অনেক দীর্ঘ। তাদের লোভ এতো দূর পর্যন্ত গেছে যে, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননার মেডেলের স্বর্ণ পর্যন্ত তারা চুরি করেছে।

আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি, নিজেদের অপকর্ম ও ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ওরা সবসময় বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়, সকল মানুষকে বোকা বানাতে চায়। কিন্তু দেশবাসী ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন যে, কোনো ক্ষেত্রেই এদের কোনো সাফল্য নেই। তাদের সাফল্য কেবল জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন, মিথ্যাচার, সন্ত্রাস, দখল, দলীয়করণ, নির্যাতন ও দুর্নীতিতে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই সংকট উত্তরণে অনতিবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ, ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

সেই লক্ষ্যে আমরা প্রস্তাব করছি:
১. জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।
২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বদ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যাতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভ‚মিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।
৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্ব›দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
৪. নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
৫. নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদূষ্ট ও বিতর্কিত হিসাবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
৬.সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।
৭.বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।
 
আমরা উপরোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ মেনে নিয়ে জাতীয় সংকট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি এবং ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল গণতান্ত্রিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে জনগণের ভোটাধিকার হরণের দিন, অর্থাৎ, ৫ জানুয়ারিকে আমরা ইতোমধ্যে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছি।

গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ঐ দিন সারা-দেশে সভা-সমাবেশ ও কালোপতাকা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আমরা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ করতে চেয়েছি। আশা করি আমাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেয়া হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিতে চাই। পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি আসবে। বাধা দিয়ে, আক্রমণ করে জনগণের আন্দোলনকে কেউ কখনও দমাতে পারেনি। এবারও পারবে না ইনশাআল্লাহ।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। জনগণ অধিকার হারিয়েছে। সবখানে অস্বাভাবিক অবস্থা। সকলেই আজ জীবন, সম্পদ, সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত।

কাজেই এবারের সংগ্রাম কেবল বিএনপি বা ২০ দলের নয়, সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের। তাই আমি সকলকেই এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাই।

আমাদের দলমতের পার্থক্য আছে। সকলেরই নিজস্ব রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংষ্কৃতিক পৃথক ভাবনা ও কর্মসূচি আছে। কিন্তু দেশ রক্ষায়, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলকে আজ একমত হতে হবে। আমি সকলকে এক প্লাটফরমে এসে কিংবা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে এ আন্দোলন করতে হবে। একজন গ্রেফতার হলে আরেকজনকে এগিয়ে এসে আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিতে হবে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের হাত আলেম, সেনা অফিসার ও নাগরিকদের রক্তে রঞ্জিত । এদের পায়ের তলায় মাটি নেই। এরা জনসমর্থনহীন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন। এরা বলপ্রয়োগ ও ভয় দেখিয়ে টিকে থাকতে চায়। জনগণ সাহস নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ালে এই অগণতান্ত্রিক এবং অবৈধ সরকারের পতন অনিবার্য।

আমি মনে করি জনগণের বিজয় আসন্ন।  আমি বিশ্বাস করি, আগামী বছর হবে জনগণের বিজয়ের বছর। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ্ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।