আইনপ্রণেতা বলেই কি আইনের ঊর্ধ্বে?
রীতিমতো অবিশ্বাস্য কিন্তু সেই দৃশ্যই দেখতে হলো দেশের মানুষকে। একজন আইনপ্রণেতা কানধরে উঠবস করাচ্ছেন একজন সম্মানিত শিক্ষককে। নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ধর্মীয় অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সেখানকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের এই ভিডিও বিক্ষুব্ধ করেছে দেশবাসীকে। শিক্ষামন্ত্রীও এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন, মর্মাহত হয়েছেন। যে কোনো বিবেকবান মানুষই তা হবেন। হওয়া উচিতও। সমাজ থেকে শিক্ষা, সভ্যতা, ভদ্রতা লুপ্ত হতে হতে আমরা যে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছি তার নিকৃষ্ট উদাহরণ যেন এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি। কিন্তু একটি সমাজ তো এভাবে চলতে পারে না। এর একটি বিহীত হওয়া দরকার।
একজন প্রবীণ শিক্ষাগুরুকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তর্জনী ওঠানামা করিয়ে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছেন-সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওচিত্র ইতিমধ্যেই নাগরিকদের যথেষ্ট বিক্ষুব্ধ করেছে। জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রধান শিক্ষক ঘটনার দিন স্কুলে দেখতে পান একজন শিক্ষক ক্লাশে পড়াচ্ছেন, কিন্তু কিছু ছাত্র অমনোযোগী। এ অবস্থায় তিনি শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারী সেই ছাত্রদের শাস্তি দেন। সেটি কতোটা বিধিসম্মত হয়েছে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে কিন্তু তাই বলে ধর্ম অবমাননার স্পর্শকাতর অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষকের সঙ্গে যা করা হলো তা কোনোভাবেই বিধিসম্মততো নয়ই বরং ঘটনাটি সভ্যতা-ভব্যতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। দুঃখজনক হচ্ছে এ কাজটি করেছেন একজন আইন প্রণেতা।
গণমাধ্যমের নানা খবরে ওঠে এসেছে ওই আইন প্রণেতা বনিবনা না হওয়ায় প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তার স্থলে বসাতে চেয়েছিলেন তারই এক আত্মীয়কে। অথচ নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন ওই প্রতিষ্ঠান। এরপরও যদি প্রধান শিক্ষককে বদলানো বা সরিয়ে দেওয়ার যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ থাকে তাহলে সেটার জন্যও তো আইনানুগ প্রক্রিয়া রয়েছে। সে পথে না গিয়ে ওই জঘন্য ঘটনার অবতারণা কেন করা হলো? দেশে কি আইন-কানুন বলে কিছু নেই? যে যার খুশিমতো সবকিছু করতে পারবে। এটা আর যাই হোক ভালো কিছুর ইঙ্গিত বহন করে না। এই ঘটনায় যে সামাজিক বিপর্যয় ঘটলো তা কি টের পেয়েছে ক্ষমতাসীন মহল? এখনই রুখে না দাঁড়ালে এই বিপর্যয় গ্রাস করতে পারে তাদেরও যারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।
এইচআর/পিআর