তবে কি হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দিতে হবে?
পরিবহন সেক্টরের কাছে জিম্মি দশার বিষয়টি আবারো ওঠে এলো খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে। এই ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা। রবিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার এ পরিবহন ধর্মঘট। শেষ হবে আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায়। মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মিশুক-তারেকের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষে ঘোষিত সাতদিনের আল্টিমেটাম সরকার মেনে না নেয়ায় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ ধরনের ধর্মঘট স্পষ্টতই যাত্রীস্বার্থ বিরোধী।
যাত্রীদের জিম্মি করে এর আগেও নানা দাবি আদায় করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক সব এক। যখনই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার কোনো কঠোর পদক্ষেপের দিকে এগিয়েছে তখনই ধর্মঘট ডেকে অচল করে দেয়া হয়েছে সবকিছু। অথচ জনদাবি হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর আইন প্রণয়ন। যাতে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমিয়ে আনা যায়। এক হিসেবে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে দেশে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি লোক প্রাণ হারায়। আহতের সংখ্যা এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কি বলতে পারবেন দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত লোক মারা যায় তার জন্য তাদের কোনো দায় নেই? একটি হত্যার যদি বিচার হয় তাহলে যে হত্যাযজ্ঞ চলে সড়কে তার কেন বিচার করা যাবে না বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে না। আইন থাকলেই যে পরিবহন-মালিক শ্রমিকদের ধরে ধরে জেলে ভরা হবে- বিষয়টি তো এমন নয়। যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে যে কেউ ছাড়া পাবে-এটাই তো বিচারের রীতি। একটা দেশে বসবাস করে তার নিয়ম-নীতি আইন-কানুন মানবো না- এটা হতে পারে না। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলে এবং সেটাতে চালক বা অন্য কারো অবহেলা থাকলে তার বিচার করা যাবে না-এটা কোনো আবদারের বিষয় নয়। কাউকে তো আর হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতেই হবে। আর ধর্মঘট ডেকে সবকিছু অচল করে দিয়ে দাবি আদায়ের অচল পন্থা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
এইচআর/এমএস