ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ধন্যবাদ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬ এএম, ১১ মে ২০১৬

জাতির কপাল থেকে কলঙ্কের তিলক মুছে ফেলার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে বাঙালির ওই কলঙ্ক যে দূর করা যাবে তা কয়েক বছর আগেও কল্পনা করা যেত না। আর আওয়ামী লীগ ছাড়া এই কাজটি করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তিও নেই। আরো পরিষ্কার করে বললে বলতেই হবে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউই এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করতে পারতেন না। এমনকি শেখ হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগের পক্ষেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ আছে। আর বিএনপিতো আদর্শিক কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে না। তাই শেখ হাসিনাকে আবারো ধন্যবাদ।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার করেছিল ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। এর অনেক আগে পঞ্চম সংসদে ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযমের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। সেদিন তিনি সংসদে গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ, যুদ্ধ ও গণহত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সাধন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পরও পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের নামে বাংলাদেশের বিরোধিতা, নিবন্ধীকৃত বিদেশি নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে বেআইনি তৎপরতায় লিপ্ত পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৯২-এর ২৬ মার্চের গণ-আদালতে জনগণের যে মতামত প্রতিফলিত হয়েছে, তাকে প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুসারে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ বিচারের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ অর্থাৎ শেখ হাসিনা শুরু থেকেই রাজাকার আলবদরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চেয়েছেন। অপেক্ষায় ছিলেন শুধু সময় ও সুযোগের।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন করা হয়নি এ প্রশ্নের মুখোমুখি প্রায়ই তাকে হতে হয়। আমি নিজেও সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় তাকে এ প্রশ্ন করেছিলাম। বরাবরের মতোই তিনি বলেছেন তখন তার দল ও সরকার অতোটা শক্তিশালী ছিল না। শেখ হাসিনার ওই জবাব যে সঠিক তা তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলেই জানা যায়। ২০০৯ সালেও ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনাকে শুনতে হয়েছে জামায়াতের সাথে  আপোস করেছে বলে বিচার দেরি হচ্ছে। কাদের মোল্লার বিচারের পর অনেক অর্বাচীন এমন কথাও বলেছেন জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হয়ে গেছে তাই কারো ফাঁসি হবে না। এসব সমালোচনা মুখ বুঝে সহ্য করে একে একে শীর্ষ সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে লটকানোর কাজটি হাজারো বাধার মুখে তিনি সম্পন্ন করেছেন। সবশেষ বদরবাহিনী প্রধান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে কলঙ্ক মোচনের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

দেশের ভেতর বিএনপির মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক দল সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাদের বিচার করা কতোটা কঠিন কাজ এটা বাইরে থেকে আমাদের পক্ষে বোঝা সত্যিই কঠিন। তাছাড়া জামায়াতিদের তাণ্ডব মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া চারটেখানি কথা নয়। তারা সারাদেশে গুপ্ত হত্যা, আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তখন অনেকেই বলেছিল সরকার আছে বলে মনে হয় না। সেই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে ধীর পায়ে এগিয়েছেন শেখ হাসিনা।

দেশের ভেতরে বিশেষ করে প্রাশাসনের মধ্যেও যখন জামায়াতিদের একটা বড় অংশ রয়ে গেছে তখন ধীরে ধীরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এগিয়ে নেওয়া শেখ হাসিনার জন্যই সম্ভব হয়েছে।

শুধু দেশের ভেতরেই নয়, জামায়াতিরা বিশ্বের সবচে ক্ষমতাধরদেরও কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু দৃঢ়তার সাথে শেখ হাসিনা তা উপেক্ষা করেছেন। আমরা দেখেছি রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগে ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েফে এরদোগান ফোন করেছেন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার নাভি পিল্লাই চিঠি দিয়েছেন মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করতে।

জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকাতে চায়নি। এর পেছেন যে জামায়াতিরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তা সহজেই অনুমেয়। এসব দেশের বাইরে তুরস্ক আর পাকিস্তানতো বিচার ঠেকানোর জন্য যারপর নেই চেষ্টা চালিয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার সেটি বন্ধ করে দেওয়ারও চেষ্টা তারা করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব কিছুই তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো সাহস দেখিয়েছেন।

দেশের ভেতরে ও বাইরে শুধু রাজনৈতিক শক্তিই নয় ‘সুশীল সমাজে’র একটি অংশও এ বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এই বলে যে ৪০ বছর আগের ঘটনা নিয়ে দেশকে বিভক্ত করার কী দরকার। অনেকেই যুক্তি দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ হাজারো বাধা পেরিয়েই আজ মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের আত্মায় শান্তি এনে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

রাজাকার আল বদরদের বিচার শুরু করায় বঙ্গবন্ধুকেও তথাকথিত প্রগতিশীলদের গালমন্দ শুনতে হয়েছিল। মওলানা ভাসানীও তাদের ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন সমান অধিকার চাই। আর আতাউর রহমান খান বলেছিলেন, ‘জাতি পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সমাধা না করে সরকার সারাদেশে দালাল ও কল্পিত শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় রত আছেন। মনে হচ্ছে, এটাই যেন সরকারের সব চাইতে প্রধান কর্তব্য।` এমন কথার প্রতিধ্বনি এখনো অনেকের মুখে শুনতে পাই। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে সব খুনিকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন