ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আয়তন বাড়লো, সেবা বাড়বে তো?

প্রকাশিত: ০৬:০৩ এএম, ১০ মে ২০১৬

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) সঙ্গে নতুন আরো এলাকা যুক্ত করায় প্রায় দ্বিগুণ হলো ঢাকা মহানগরীর এলাকা। নতুন করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করেছে সরকার, যার মধ্য দিয়ে এই মহানগরীর আয়তন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।  গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়। বাস্তবতার নিরীখে ঢাকার আয়তন বাড়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত। কিন্তু শুধু আয়তনে বাড়লেই হবে না যে সমস্ত এলাকা নতুন যুক্ত করা হলো সেসব এলাকায় যেন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। একদিকে করের বোঝা বাড়বে অন্যদিকে সেবার মান থেকে যাবে একই এটি হতে পারে না।

একটি নগরে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য নগরজীবনকে স্বচ্ছন্দ, পরিবেশবান্ধব, টেকসই, উন্নয়নমুখি এবং পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।  আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বুঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল কলেজ হাসপাতাল হবে, অফিস আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবকিছুই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফঃস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে হঠে। জনজীবনকে তা বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।

দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন  জরিপ সংস্থার মতে বিশ্বের বসবাসের উপযোগিতার বিবেচনায় সবচেয়ে অযোগ্য শহর ঢাকা। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য সুবিধা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোসহ ৩০টি মানদণ্ডের বিবেচনায় ঢাকার স্থান তলানিতে।  আমাদের রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী- এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! এই অবস্থা যে আমাদের জন্য গৌরবজনক নয় সেটি কি বলার অপেক্ষা রাখে? একটি শহরের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে নিয়ামকগুলো কাজ করে এরমধ্যে রয়েছে- নগরীতে বসবাসের সুযোগ সুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, অপরাধের হার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, পানীয়, ভোক্তাপণ্য এবং সেবা, সরকারি বাসগৃহের প্রাপ্যতা ইত্যাদি। এসব দিক থেকে ঢাকার কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই অবস্থায় ঢাকার আয়তন বাড়ার বিষয়টি সমস্যাকে যাতে আরো প্রকট না করে সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুত, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। শুধু  নতুন এলাকা যুক্ত করে আয়তন বাড়িয়ে বসে থাকলে চলবে না নাগরিক সুবিধাও বাড়াতে হবে সমানতালে। নাগরিক প্রত্যাশা এটাই।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন