ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দুই মেয়রের এক বছর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪ এএম, ০৭ মে ২০১৬

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দুই মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পার করলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক নির্বাচনের সময় নগরীর উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এক বছর মেয়াদ পার করার পর এখন হিসেব মিলিয়ে দেখার অবকাশ এসেছে বৈকি। যদিও এক বছর খুব বেশি সময় নয় তবে উদিত সূর্যই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে। তাই বিগত দিনে কাজের মূল্যায়ন করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য একটি নগরী হিসেবে উপহার দেওয়াই হবে দুই মেয়রের অন্যতম দায়িত্ব।  

একটি নগরে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য নগরজীবনকে স্বচ্ছন্দ, পরিবেশবান্ধব, টেকসই, উন্নয়নমুখি এবং পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।  

আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বুঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল কলেজ হাসপাতাল হবে, অফিস আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবকিছুই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফঃস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে হঠে। জনজীবনকে তা বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।

সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন  জরিপ সংস্থার মতে বিশ্বের বসবাসের উপযোগিতার বিবেচনায় সবচেয়ে অযোগ্য শহর ঢাকা। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য সুবিধা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোসহ ৩০টি মানদণ্ডের বিবেচনায় ঢাকার স্থান তলানিতে।

আমাদের রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী- এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! এই অবস্থা যে আমাদের জন্য গৌরবজনক নয় সেটি কি বলার অপেক্ষা রাখে? একটি শহরের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে নিয়ামকগুলো কাজ করে এরমধ্যে রয়েছে- নগরীতে বসবাসের সুযোগ সুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, অপরাধের হার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, পানীয়, ভোক্তাপণ্য এবং সেবা, সরকারি বাসগৃহের প্রাপ্যতা ইত্যাদি। এসব দিক থেকে ঢাকাসহ আমাদের নগরগুলোর কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এছাড়া ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিপূর্বে অন্য জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থায়ই এই জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট। এছাড়া যানজট, যানবাহন এবং কলকারখানার কালো ধোয়া, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ্ব এই শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুত, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুতেই পরিকল্পনাহীনতার ছাপ। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এই শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বিশিষ্টতা হারাচ্ছে। এক জগাখিচুরি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

দুই মেয়র হয়তো ঢাকার সব সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। কিন্তু যে টুকু তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে সেটুকুই যদি সম্পন্ন করেন তাহলে নগরবাসী অনেক দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশা-মাছির উৎপাত থেকে রক্ষা, জলাবদ্ধতা দূর করা, ঢাকার পাশের নদীগুলো রক্ষা, ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা সর্বোপরি সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে একটি বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দেওয়ার জন্য যা যা করণীয় আছে সকলের সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে তা করা। মেয়রদ্বয় এ ব্যাপারো আরো আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হবেন-এমনটিই আশা করছেন নগরবাসী।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন