ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দায়মোচনের পথে আরেক ধাপ

প্রকাশিত: ০৩:০২ এএম, ০৬ মে ২০১৬

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।  এই রায়ের মধ্যদিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারে আরো একটি মাইলফলক স্থাপিত হলো। কলঙ্কমোচনের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানি দেয়াসহ তিন অপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন করার পর রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠায়। গত ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় শোনানো হয়। এর আগে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীর মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তার আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার এক মামলায় নিজামীকে আটক করা হয়। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জেলে পাঠানো হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, এখন রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করবে। তবে নিজামীর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চায় তাহলে কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করবে।

স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিলো একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশ আবার পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ স্রোতে। এসময় জেলে আটক যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন সামরিক শাসক জিয়া। শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেন জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে তুলে দেন শহীদের রক্তখচিত লাল-সবুজ পতাকা। কিন্তু সবদিন সমান যায় না। অবেশেষে ঘাতকের দিন শেষ হতে থাকে। জনরায় নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করেন। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের। ইতিমধ্যেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, এম কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সবশেষ নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকলো আপিলে। এর মধ্যদিয়ে জাতি একে একে কলঙ্কমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায়।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে জাতি। অপরাধ করলে যে কেউ পার পায় না এই বার্তাটিও পৌঁছে যাচ্ছে সমাজে। এরমধ্য দিয়ে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। গণতন্ত্র আরো মজবুত ভিত্তি পাবে। শোষণ, বঞ্চনাহীন অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য হোক সেই দিকে।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন