রাহুমুক্ত রাজশাহী প্রেস ক্লাব: ঐতিহ্য ফিরে আসুক
রাজশাহী প্রেস ক্লাব জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। প্রায় ২০ বছর পর সংগঠনটির নেতৃত্বে পরিবর্তন এলো। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধাক্কা অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো রাজশাহী প্রেস ক্লাবেও লাগে। রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকদের একটি বৃহৎ অংশের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটেছে। বছরের পর বছর প্রেস ক্লাবকে কুক্ষিগত করে রাখা আগের কমিটি বাতিল করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রেস ক্লাবের সুস্থ পরিবেশ বলতে যা বোঝায়, এতদিন তাতে ঘাটতি ছিল। ক্লাবটি দীর্ঘদিন ধরে মূলত একজন সাংবাদিক নেতার কর্তৃত্ববাদের ঘেরাটোপে জিম্মি ছিল। টানা নেতৃত্বে অগণতান্ত্রিকভাবে কখনো তিনি সেক্রেটারি, কখনো সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। একটি বিভাগীয় শহরে ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন এই প্রেস ক্লাবের এমন দৈন্যতা সাংবাদিকদের সবসময় আহত করতো। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ক্লাবটি শৃঙ্খলমুক্ত করার সুযোগ ঘটে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্লাবকে রাহুমুক্ত করা হয়। বর্তমান কমিটি প্রেস ক্লাবকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনে সাংবাদিকদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।
নানা কারণে গড়ে ওঠা রাজশাহীর অন্য প্রেস ক্লাবকে বিলুপ্ত করে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাথে একাত্ম করা হবে-এই মানসিকতা নিয়ে এখানকার সাংবাদিকরা দীর্ঘকাল ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন, সিটি মেয়র, এমনকি স্থানীয় এমপির সরাসরি সহায়তায়ও নেওয়া হয়েছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই একজন সাংবাদিক নেতার শক্তির কাছে তারা বার বার কেন ব্যর্থ হয়েছেন- তা নগরবাসীর অনেকের কাছেই ছিল একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। তবে একটি কথা না বললেই নয়। যার যতটুকু অবদান, সেটুকু মনে করে তাকে ততটুকুই সন্মানের জায়গাটা দেওয়া মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
মূলধারার প্রায় অনেক সাংবাদিকের নিজেদের গণমাধ্যমের অফিসেই সময় কেটে যায়। প্রেস ক্লাবে হাজিরা দেওয়ার মতো সুযোগ হয়ে ওঠে না তাদের। সেই কারণে ক্লাবগুলোতে বাতি জ্বালানোর মতো কাউকে পাওয়া দুষ্কর। এরকম অবস্থায় নানান প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অনেক কিছু ম্যানেজ করে ওই বিতর্কিত সাংবাদিক নেতা অন্তত প্রেস ক্লাবের বাতিটা জ্বালিয়ে রাখতেন। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ক্লাবের জন্য কিছু খরচও করতেন। প্রায় সময় নানান দিবস পালন, স্মরণসভা, আলোচনা সভা, মানববন্ধনের মাধ্যমে ক্লাব চাঙ্গা রাখতেন।
চিরকুমার বয়স্ক এই অসুস্থ সাংবাদিকের সংসারে কেউ নেই। প্রেস ক্লাবই ছিল তার ধ্যান। এটাকেই তিনি সংসার মনে করতেন। তাই মানবিক দিকটা চিন্তা করে এবং সন্মানের দিক লক্ষ্য রেখে, তাকে তার যোগ্যতা ও মর্যাদার স্থানের দিকটা বিবেচনা করাটা সমীচীন হবে বলে অনেকেই মনে করেন।
গত ২৬ আগস্ট এনটিভির রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার শ.ম সাজুকে আহ্বায়ক ও দৈনিক কালবেলার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আমজাদ হোসেন শিমুলকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট রাজশাহী প্রেস ক্লাবের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই আহ্বায়ক কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করবে এবং যথাযথ নিয়ম প্রতিপালন করে নতুন সদস্যপদ প্রদানের উদ্যোগ নেবে। ইতোমধ্যে রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সদস্য হতে আগ্রহী মূলধারার সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে।
সব আঁধার কাটিয়ে, রাজনৈতিক পেশিশক্তি উপেক্ষা করে, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে ক্লাবের একটি শক্তিশালী এবং আদর্শবাদী কমিটি গঠন হবে। তারাই আমাদের প্রাণপ্রিয় রাজশাহী প্রেস ক্লাবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে এবং সুস্থ সাংবাদিকতার সহাবস্থানের একটি স্বচ্ছ অঙ্গন প্রতিষ্ঠা করবে। যেখানে থাকবে না কোনো দুষ্টচক্রের নোংরা হানাহানি। এভাবেই রাজশাহী প্রেস ক্লাব তার ঐতিহ্য লালন করে একদিন হয়ে উঠতে পারে জনগণের বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসার প্রতীক।
গত ৯ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী প্রেস ক্লাবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য নানান পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে বর্তমান এডহক কমিটি। তারা সাংবাদিকদের জন্য একটা উন্নত পরিবেশসহ পুরাতন ভবন সংস্কার এবং সাংবাদিকদের ক্লাবমুখী করার জন্য চিত্তবিনোদনের সামগ্রীসহ যা যা প্রয়োজন সবকিছু করবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে নানা সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। ক্লাবের মূল্যবান সম্পত্তিসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ের হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নব্বই দশকের পর থেকে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিএফইউজের নোংরা দলীয় স্বার্থে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিলে রাজশাহীতেও তার প্রভাব পড়ে। রাজশাহী প্রেস ক্লাবে নানা স্বার্থের হানাহানিতে কয়েকজন সাংবাদিক এখান থেকে বেরিয়ে যান। পরে বেশ কয়েকটি নতুন প্রেস ক্লাব গড়ে ওঠে। এই সুপ্রাচীন গৌরবান্বিত প্রেস ক্লাবটি রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। এখান থেকে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আপাদমস্তক অনেক সাংবাদিক প্রয়াত হয়েছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া এই ক্লাবের কয়েকজন সাংবাদিক ক্লাবের স্মৃতি বুকে ধারণ করে এখনো বেঁচে আছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের পর পরই ১৯৫৪ সালে ইতিহাসের এক পরিবর্তনশীল সময়ে রাজশাহী প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সেনানী, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আপসহীন চিরবিপ্লবী নেতা তৎকালীন প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য এমপিএ এম আতাউর রহমানের সহায়তায় রাজশাহী প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আজীবন সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার অন্যতম মন্ত্রী রাজশাহীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রধান বিপ্লবী নেতা প্রভাস চন্দ্র লাহিড়ী প্রেস ক্লাবের উদ্বোধন করেন। তখন প্রেস ক্লাব ছিল রাণীবাজার মোড়ে অধুনালুপ্ত নাজ বোডিংয়ের নিচতলার একটি ঘরে। এটা ছিল ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান নেতা লিয়াকত আলী লিকুদের বোডিং।
প্রতিষ্ঠালগ্নে এম. আতাউর রহমান এই ক্লাবের জন্য ঘর পাওয়া থেকে শুরু করে আসবাবপত্রসহ অনেক কিছু সহায়তা করেছেন। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'ইনসাফ' পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৭২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি 'নতুন কাল' নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় তিনি সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন। সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত সাইদ উদ্দিন আহমেদ। সে সময় পত্রিকাটি খুবই জনপ্রিয় ছিল।
প্রচার সংখ্যা ৬ হাজার পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। মফস্বল এলাকা থেকে প্রচার সংখ্যায় ঈর্ষণীয় এই পত্রিকায় তখন একঝাঁক বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ সাংবাদিক কাজ করতেন। তন্মধ্যে সেকেন্দার আবু জাফর, অ্যাডভোকেট নূর মোহাম্মদ খান, প্রশান্ত কুমার সাহা, ওবায়দুর রহমান, আহমেদ শফিউদ্দিন অন্যতম। সাংবাদিক ওবায়দুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী সরকারের অনুমোদনক্রমে ‘বাংলার কথা’ নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এই সাপ্তাহিকটির নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত ছিল ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। এই সময়কালে তিনি রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকায় মেডিকেল কলেজে পড়া অবস্থায় সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করতেন। এদের মধ্যে প্রশান্ত কুমার এবং আহমেদ শফিউদ্দিন এখনো বেঁচে আছেন। তবে প্রশান্তদা বেশ অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন।
রাজশাহীর অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক এই প্রেস ক্লাবের ছায়াতলে থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী নেতা অ্যাডভোকেট বীরেন্দ্রনাথ সরকার। তিনি ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) রাজশাহীর সংবাদদাতা ছিলেন। তিনি রাজশাহীর সাংবাদিকদের অভিভাবক ছিলেন। সাংবাদিকদের যে কোনো বিপদ আপদে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রেরণার উৎস ছিলেন। সাংবাদিক সাইদ উদ্দিন আহমেদের এক লেখায় পাওয়া যায়, ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বৈরশাসক মোনায়েম খানের সময় সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার প্রয়াসে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে রাজশাহী প্রেস ক্লাবের প্রচণ্ড মতবিরোধ হয়।
একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক ক্লাবের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেন। প্রশাসনের এই অন্যায় আচরণে বীরেন সরকার চরম ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসককে তার আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু দাবি না মানায় তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলায় প্রশাসন হেরে যায়। এভাবে রাজশাহী প্রেস ক্লাবকে তিনি বিপদ থেকে রক্ষা করেন। কখনো তিনি ক্লাবের সভাপতি আবার কখনও বা নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী তার বাড়িতে গুলি করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি আমৃত্যু রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন।
রাজশাহীতে সেই সময় সাংবাদিকদের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা কয়েকজন। এই প্রেস ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকে যারা জড়িত ছিলেন, যাদের শ্রম-মেধা ভালোবাসায় আজকের এই ক্লাব এখনো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, যাদের দেশপ্রেম এবং আদর্শ সাংবাদিকতায় এখনো রাজশাহীবাসী গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, সেইসব নমস্যদের মধ্যে ছিলেন শহীদ আবুল কাশেম চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী, আনোয়ার জাহিদ, ভাষাসৈনিক সাইদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সাইদ উদ্দিন আহমেদ প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। এরপর আরেকজন আপাদমস্তক সাংবাদিক প্রয়াত মনজুরুল হোসেনের নাম কৃতজ্ঞভরে স্মরণ করা যায়। পরে ১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে রাজশাহীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ‘দৈনিক বার্তা’ নামের একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ঢাকার বাঘা বাঘা সাংবাদিক এই পত্রিকায় যোগদান করেন। তাদের অনেকেই রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন। তন্মধ্যে আজিজ মিসির, মীর নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, রনজিৎ পালসহ আরো অনেকে এই প্রেস ক্লাবকে মর্যাদার উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
এছাড়া সত্তর দশক থেকে নব্বই দশকের মধ্যে এই ক্লাবের গুণী এবং নামকরা সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের হিশাম উদ্দিন, ডাক্তার বুলবুল, খুরশিদ আলম চৌধুরী, ডাক্তার দায়েম উদ্দিন, দৈনিক বাংলার বুলবুল চৌধুরী, অধ্যাপক মলয়কুমার ভৌমিক, বাসস এর মোহায়মেন, শাহ আনিসুর রহমান, আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান, আনু বসুনিয়া, মুকুল বর্ধনসহ আরো অনেকে। এসব বাঘা বাঘা সাংবাদিক এই প্রেস ক্লাব সবসময় উজ্জীবিত করে রাখতেন। তখন প্রেস ক্লাব চলতো প্রেস ক্লাবের মতোই।
প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের জন্য একটি সামাজিক মিলনকেন্দ্র বা অবসর বিনোদনের একটি স্থল। সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা কর্তব্য পালন করার সংগ্রামে ব্যাপৃত থাকতে হয়। নাওয়া-খাওয়া, বিশ্রামের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। পারিবারিক জীবনে সময়ের কারণে তাকে সুখ পেতে বাধা দেয়। সব সময় আতঙ্ক থাকে মনে। উদ্বিগ্ন ভর করে প্রতি মুহূর্তেই। বিপদের ভয় থাকে। তাকে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় প্রতিদিন।
প্রেস ক্লাব হলো তাদের দম ফেলার একটি প্রাঙ্গণ। চিত্তবিনোদনের জায়গা। এখানে এসে তারা সবকিছু ভুলে আনন্দ স্ফূর্তি করবে। আলাপে-আড্ডায় মেতে ওঠে মনটাকে হালকা করবে। এই আলাপে আড্ডার মধ্যে তারা বুদ্ধিচর্চাও করবে। রাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন খবরের বিচার বিশ্লেষণ করবে। খবরের নানা দিক নিয়ে সাংবাদিকরা গঠনমূলক আলোচনা করবে, চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে। এটাই তো প্রেস ক্লাবের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির বাতিঘর এই প্রেস ক্লাব। এখানে নানা মত-পথের সাংবাদিক থাকতে পারে। প্রেস ক্লাব থাকবে সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে। সাংবাদিকদের সম্মিলিতভাবে তাদের পেশাগত মর্যাদার আঘাতের জায়গায় একত্রিত থাকতে হবে। রাজনীতিবিদ কিংবা রাষ্ট্র সবসময় সাংবাদিকদের বিভক্তি রাখতে চায় তাদের নোংরা স্বার্থের কারণে। এ বিষয়টি সাংবাদিকদের মাথায় রাখতে হবে। ঐক্যের প্রতীক হতে না পারলে সাংবাদিকদের কোনো ন্যায্য দাবিও পূরণ হওয়ার কথা নয়।
প্রেস ক্লাব জনতার আস্থার একটি জায়গা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসে এই প্রেস ক্লাবে। তাদের যত অভাব অভিযোগ, সমস্যা, বিপদ-আপদ, আন্দোলন সংগ্রামের কথা জানায় এই প্রেস ক্লাবে এসে। তাদের মধ্যে একটা আশাই কাজ করে, বিষয়টা দেশবাসী জানবেন, সরকারের দৃষ্টিতে পড়বে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে উঠবে, তাহলে তাদের সমস্যা সমাধানের সুযোগ আসবে। এভাবেই প্রেস ক্লাব হয়ে ওঠে সাংবাদিক-জনতার মাঝে এক সেতুবন্ধ।
আমরা আশা করি, সব আঁধার কাটিয়ে, রাজনৈতিক পেশিশক্তিকে উপেক্ষা করে, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে ক্লাবের একটি শক্তিশালী এবং আদর্শবাদী কমিটি গঠন হবে। তারাই আমাদের প্রাণপ্রিয় রাজশাহী প্রেস ক্লাবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে এবং সুস্থ সাংবাদিকতার সহাবস্থানের একটি স্বচ্ছ অঙ্গন প্রতিষ্ঠা করবে। যেখানে থাকবে না কোনো দুষ্টচক্রের নোংরা হানাহানি। এভাবেই রাজশাহী প্রেস ক্লাব তার ঐতিহ্য লালন করে একদিন হয়ে উঠতে পারে জনগণের বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসার প্রতীক।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম, রাজশাহী বিভাগ।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস/ফারুক