ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বৈসাদৃশ্যপূর্ণ সামাজিক অবস্থা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?

শাহানা হুদা রঞ্জনা | প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ১৭ জুলাই ২০২৪

নিজেকে বোঝার জন্য মাঝেমাঝে স্মৃতি হাতড়াতে হয়। কোনো একটা লেখায় পড়েছিলাম, ভালো ও মন্দ স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা মানুষকে ঋদ্ধ করে। আর সেই অবস্থার সাথে যখন মানুষ বর্তমান সময়কে তুলনা করতে বা মেলাতে পারে, তখন ভবিষ্যত হয় সুন্দর। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্য কোনো মেলবন্ধন ঘটাতে পারছি না। সেরকমই একটি জীবনের গল্প দিয়ে লেখাটি শুরু করছি, যেখানে অতীত আছে, বর্তমানও জড়িয়ে আছে ওই অতীতকে ঘিরে।

একটা সময় অর্থাৎ ৭০/৮০ এর দশকে ঢাকা শহরের অসংখ্য বাসার মধ্যে হয়তো মাত্র কয়েকটি বাসাতেই টেলিফোন ছিল। খুব বনেদি বা ধনী বাড়িতে টেলিফোন নামক যন্ত্রটি থাকতো এবং সেটা সাধারণত বসবার ঘর বা ড্রয়িং রুমেই সাজানো থাকতো। অবাক করা ব্যাপার হলো, এরকম একটা সময়ে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বাড়িতেও একটা ফোনের লাইন লেগেছিল, অবশ্য সেটা আব্বার চাকরির সুবাদে।

১৯৭৩ সালে বাসায় প্রথম ফোনের লাইন আসার পর আমরা সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। বাসায় ফোন থাকাটা যে খুব অভিজাত বিষয় সেটা বুঝতে পারলেও, ফোনটা ব্যবহার করবো কিভাবে বা কাকে ফোন করবো সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কারণ তখন আমাদের পরিচিত কারো বাসায় ল্যান্ডফোন ছিল না। শুধু নারিন্দার ডাক্তার চাচার বাসায় ও জাহানারা ইমাম মানে জাহানারা চাচিদের বাসায় ফোন দেখেছিলাম। ফলে ভাইবোনরা একত্রিত হলেই ফোন তুলে ’হ্যালো হ্যালো’ বলে খেলতাম। আমাদের ফোন নাম্বারটি ছিল ৩১১৩২৩। এরপর এই নাম্বারে আর কোন পরিবর্তন হয়নি।

ফোন আসার পর প্রতিবেশিদের অনেকেই ফোনটা দেখতে আসতেন। কারণ তাদেরও হয়তো ফোন করার তেমন কেউ ছিল না। তবে আর কয়েকবছর পর এই ফোনটির ব্যবহার অনেক বেড়ে গিয়েছিল। অবাক করা ব্যাপার ছিল এই যে আশির দশকে এসে এই ফোনটা দিয়ে কথা বলেনি, আমাদের পরিচিত বা অপরিচিত এমন কোন বাসা ছিল না। যতদূরের বাসাই হোক কারো ফোন এলে আমরা ডেকে দিতাম। এজন্য অবশ্য সময় লাগতো। একবার ফোন করে কাউকে ডাকার অনুরোধ করা হতো, আরেকবার সেই ব্যক্তি এসে কথা বলতেন, যা এখন কল্পনারও বাইরে।

আসাদগেট নিউকলোনিতে আসার পর বিল্ডিংয়ের ১২ টা পরিবারের ফোন, অন্য বিল্ডিংয়েরও কারো কারো ফোন, আমাদের আত্মীয়-স্বজনের ফোন আসতে শুরু করলো এই নাম্বারে। সবাই নির্দ্ধিধায় নিজেদের ফোন নাম্বার মনে করে, এই ৩১১৩২৩ নাম্বারটি দিয়ে আসতো তাদের পরিচিত জনকে। আব্বা আমাদের এমন একটা ধারণা দিয়েছিল যে ফোন অতি প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। কারো ফোন এলেই তাকে যেন ডেকে দেয়া হয় এবং অন্যকে ফোন করতেও দেয়া হয়।

আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীর প্রেম, ভালোবাসা, ঝগড়াঝাটি, অসন্তোষ, ভালো খবর, খারাপ খবর সব এই ফোনের সুবাদে আমাদের দরজায় হাজির হতো। আমাদের বাসাটিকে আজকের দিনের ‘কমিউনিকেশন হাব’ বলা যেতে পারে। আমরা সবার খবর পেতাম এবং কেমন করে যেন সেই খবরগুলোর সাথে নিজেরা একাত্মও হয়ে যেতাম। আত্মীয়ের অসুখ, বোনের বিয়ে, ভাইয়ের চাকরি, গ্রামের বাড়ির বন্যা-খরা, পরীক্ষার ফলাফল এগুলো সব খবর এসে পৌঁছাতো প্রথমে আমাদের বাসায়। ফোনের মাধ্যমে যে বিয়ে হতে পারে, আমরা প্রথম তা জানতে পেরেছিলাম ১৯৭৬ সালে। বোনের বিয়ে হয়েছিল ঢাকা-জার্মানি। এমনকি বিয়ের ঘটকলি, বিয়ে ভাঙা, সংসার ভাঙা ও জোড়াতালি দেয়া সব ঘটেছে এই ফোনের মাধ্যমেই। কতজনকে প্রেম করতে দেখেছি, রং নাম্বারে কথা বলতে দেখেছি, তার ইয়ত্তা নেই।

আরেকটা ঐতিহাসিক ব্যাপার ছিল এই ফোনকে কেন্দ্র করে। কারণ এই নাম্বারের সবচেয়ে কাছাকাছি নাম্বার ছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমেদ এর বাসার, সেই নাম্বারটি ছিল ৩১১৩২১। ফলে ওনার বাসার এন্তার ফোন রং নাম্বার হয়ে আমাদের নাম্বারে চলে আসতো। তখনই আমরা ঐ বাসার ছেলেমেয়েদের নাম জেনে গিয়েছিলাম সিমিন, রিমিন এবং তাজ। জোহরা তাজউদ্দীনেরও ফোন আসতো। হয়তো পাশাপাশি নাম্বার বলে এই নাম্বারটাই রং নাম্বার হতো। এমনকি ৪২০ কিলোমিটার দূরের খাটুরিয়া গ্রাম থেকে সবাই এই নাম্বারেই ট্রাংকল করতো ঢাকা শহরের আত্মীয়-স্বজনদের বাসায়। ওই গ্রামের সবার একটাই নাম্বার ছিল ৩১১৩২৩।

দেশে গুটিকতক মানুষ কুয়োর ব্যাঙ হয়ে যেনতেনভাবে অর্থ উপার্জন করে, অসংখ্য জমি ও ফ্ল্যাট কিনে, সম্পদ বিদেশে পাচার করে শান-শওকতের জগতে ডুবে থাকছে। আর অন্যদিকে জীবনযাপনের টানাপোড়েনে অধিকাংশ মানুষের টালমাটাল অবস্থা। তাহলে এই বৈশাদৃশ্যপূর্ণ সামাজিক অবস্থা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ কী, গন্তব্য কোথায়?

সহমর্মিতার ও ভালোবাসার সেই দিনগুলো এখন গল্পের মতো লাগে। একটা ফোনের গল্প দিয়ে আমাদের হারানো জীবন ও সম্পর্কের কথা বলতে চাইছি। ’আত্মীয়’ ও ’প্রতিবেশী’ শব্দ দুটির সাথে এখন আর আমরা খুব একটা পরিচিত নই। সবাই কেমন যেন ছন্নছাড়া ও বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছি। কেউ কাউকে চিনতে চেষ্টা করি না, কারো কাছে থাকতে চাই না, কথা বলি না, খোঁজ জানতে চাই না। সবাই শুধু ছুটছি, যদিও জানিনা কিসের পেছনে, কেন ছুটছি।

গ্রাম থেকে শহরে এসেছি, শহর থেকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছি। নাগরিক থেকে বিশ্ব নাগরিক হয়েছি ঠিকই কিন্তু সম্পর্ক হারিয়েছি এবং হারিয়েছি শিকড়। বাংলাদেশ যে নাজুক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার চারিদিকে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এর অন্যতম কারণ এই ভালবাসাহীন সম্পর্ক। শিকড় থেকে ছিটকে পড়েছি, প্রকৃত ঠিকানা হারিয়ে ফেলছি, পড়াশোনা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের খবর রাখিনা, প্রাণখুলে হাসি না, গল্প করি না, পাশে থাকা মানুষকে চেনার চেষ্টা করি না। এখন মানুষ অর্থের পেছনে ছুটতে ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে বসবাস করতেই বেশি আরাম পায়। সম্পর্ককে মাপে স্বার্থ ও টাকার পাল্লায়।

সেইসাথে আরো একটি বড় সমস্যা হচ্ছে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকার প্রবণতা। মাত্র ৫০ বছর আগেও নিজেদের যে স্বকীয়তা, শিক্ষা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ছিল, তাতো ধ্বংস করেই ফেলেছি, সেইসাথে আধুনিক কোন কিছু গ্রহণ করার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলছি। বিশ্ব এখন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বটে। কিন্তু আমরা আমাদের শিকড় উপড়ে ফেলে কি বিশ্ব নাগরিক হতে পারছি? জ্ঞান বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য বা চিত্রকলার কোন শাখায় কি আমরা বিচরণ করছি? একথা সত্যি যে, কালো টাকা দিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করেছি, দুবাইয়ে মোটা টাকা বিনিয়োগ করেছি বা সুইসব্যাংকে চুরিদারির টাকা গচ্ছিত রেখেছি, কিন্তু তাতে আমরা কতটা এগুতে পেরেছি।

ব্লগার সিরাজুল হোসেন তাঁর একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন আমেরিকান অ্যানথ্রোপোলজিস্ট এডোয়ার্ড হল এর একটি মত। যাতে হল দেখিয়েছেন মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করে, যেখানে বড় হয়, সেই স্থানটি তার মনের মহাজগতটি তৈরি করে নানা ডাইমেনশনে। স্থানটি তার বাপ-দাদার জন্মস্থান হলে সেটি আরো সুসংহত হয়। এটার তিনি নাম দিয়েছেন স্থানের ‘চতুর্থ মাত্রা’ বা ‘ফোর্থ ডাইমেনশন’ যেটা একধরনের লুকানো মাত্রা বা ‘হিডেন ডাইমেনশন’। এই লুকানো মাত্রার মধ্যে থাকে নির্বাক ভাষা বা ‘সাইলেন্ট ল্যাংগুয়েজ’।

তিনি বলেছেন কেউ যখন নিজের জন্মস্থানে অর্থাৎ বাপ দাদার ভিটায় বাস করছেন তখন, এই ‘হিডেন ডাইমেনশন’ সেই ব্যক্তিকে স্থানের তিন মাত্রার চাইতেও আরো এক মাত্রার বেশি নিরাপত্তা দেয়। ঐ স্থানের গাছপালা, প্রাণি, মানুষ, জীব-জন্তু, নদী, পানি, পাহাড়, প্রকৃতি, হাওয়া, আবহাওয়া, কৃষ্টি, সংস্কৃতি সবই তাকে নানাভাবে ক্ষমতায়িত করে। এসবকিছুর যে শক্তি তা ব্যক্তিকে শক্তিধর করে এবং সেই পরিবেশ-পরিচিতির যে সাইলেন্ট ল্যাংগুয়েজ, মানুষ পড়তে বা বুঝতে পারে। ফলে কোন ব্যক্তি বা তার পরিবার মাইগ্রেটেড বা বাস্তুচ্যুত হলে মানুষ তার সেই ‘ফোর্থ ডাইমেনশন’কে হারিয়ে ফেলে। একই সাথে সেই ব্যক্তি নতুন স্থানের প্রাণ- প্রকৃতি, সংস্কৃতির ’সাইলেন্ট ল্যাংগুয়েজ’কে বোঝার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। সেইভাবেই সেই ব্যক্তি হয়ে যায় যান একজন ছন্নছাড়া মানুষ বা ’হাই পার্ফর্মিং এলিয়েন’।

আমার কেবলই আজকাল মনে হয়, আমরা সেই ‘ছন্নছাড়া এলিয়েন’ এ পরিণত হতে চলেছি, যাদের অতীত নাই, কারো বর্তমান দূষিত ও বিষন্ন এবং ভবিষ্যৎও অন্ধকার। বিভিন্ন সেক্টরে জ্ঞানচর্চার অভাব আমাদের দুর্বল থেকে দুর্বলতর করছে। তরুণ প্রজন্ম চোখে অন্ধকার দেখছে, মাদক ও বিষণ্ণতা তাদের একটা বড় অংশকে নিস্ক্রিয় করে রেখেছে। দেশের জ্ঞানীগুণী মানুষদের অনেকে কলুর বলদ হয়ে পড়েছেন, ফলে তাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা করতে পারি না।

আসলে মানুষ যে পরিবেশে বড় হয়, সেই পরিবেশের প্রভাব পড়ে তার উপরে আমরা যারা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি, তারা নানাধরনের সংকট, চাহিদা, অপ্রাপ্তি ভাগাভাগি করার মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছি। পরিবার শিখিয়েছে সবার যা আছে, আমাদের তা নাও থাকতে পারে, সবাই যা খায় আমরা তা নাও খেতে পারি, সবাই যেভাবে টাকা পয়সা খরচ করতে পারে, আমরা তা নাও করতে পারি।

ঠিক এমনই একটা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে বড় হয়েছি বলে আমরা অনেকেই সংসারের অভাব অনটনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি বা মোকাবিলা করি। পরিবারের যারা কর্ণধার তাদের কখনো দেখিনি অন্যের সম্পদ কেড়ে খেতে, অসৎ পথে টাকা আয় করতে বা চুরি করা সম্পদ দিয়ে জৌলুসের জীবন কাটাতে। তারা যতটুকু পেরেছেন, ততটুকুই আমাদের পড়াশোনা ও ন্যূনতম প্রয়োজনের পেছনে ব্যয় করেছেন।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এডোয়ার্ড হল এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, বিভিন্ন নোংরা ডোবায় ব্যাঙাচি থেকে ব্যাঙগুলো যখন বড় হয়, তারা কখনই বুঝতে পারে না তাদের নিজের নিজের ডোবাগুলোর পানি কতটা নোংরা। প্রত্যেকটি ব্যাঙেরই মনে হয় তার নিজের ডোবার পানি পরিষ্কার ও সেটাই আদর্শ। প্রতিটি ব্যাঙই এই বিভ্রান্তি নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়।

মানুষের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। আমরা প্রত্যেকটি মানুষ যে পারিবারিক, সামাজিক বা ব্যক্তিগত কলুষতা, কূপমন্ডকতা, অশিক্ষা বা দূষণ নিয়ে বড় হই, আমরা সেগুলোকেই পরিচ্ছন্ন ও আদর্শ ভাবি। তাঁর কথার আলোকে দেখছি যে বা যারা অসৎ পরিবেশে, বিদ্বেষ, হিংসা, লোভ, নারীর প্রতি অসম্মান দেখে ও পারিবারিক গোলযোগের মধ্যে বড় হয়, তারা লেখাপড়া শিখে যতোই বড় পদে চাকরি করুন না কেন, নিজেদের পারিবারিক ও সামাজিক চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না।

হল মনে করেন, কোন ব্যাঙ যদি কোনো কারণে নিজের ডোবা থেকে বের হয়ে আরও পরিষ্কার কোন ডোবায় গিয়ে পড়ে এবং তারপর আবার নিজের ডোবায় ফিরে আসে তখনই কেবল সে বুঝতে পারে, সে কত কলুষিত একটি পরিবেশে বাস করছে। তখন সে চেষ্টা করে সবাইকে বোঝাতে যে এই ডোবাটি শ্রেষ্ঠতম নয় এবং তখনই আসে পরিবর্তন। এটাই সংস্কৃতির গতিশীলতা। নিজের সংস্কৃতিকে বোঝার, উত্তম সংস্কৃতিকে ধারণ করার, ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার এবং সংস্কৃতিহীনতাকে বোঝার জন্য অবশ্যই মানুষকে ‘যোগাযোগ বলয়’ এর মধ্যে থাকতে হবে। পড়াশোনা করে জানতে হবে দেশ ও বিশ্বের পরিবেশ-পরিস্থিতিকে।

নিজের এবং নিজের পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোর ভাল-মন্দ বিচার- বিশ্লেষণ করার ও বোঝার যে শক্তি, সেই শক্তি যখন মানুষ নিয়োজিত করে আশেপাশের মানুষের মনোভাবকে বুঝতে, তখনই পাওয়া যায় এর ফলাফল। এই যোগাযোগ আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় ও নিরাপদ করে। যেহেতু আমাদের মতো অনেক শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ আন্তঃসাংস্কৃতিক পরিবেশ ও নিজের দেশ, ভাষা এবং শিকড়কে বোঝার চেষ্টা করি না, তাই ভয়াবহরকম এক নিরাপত্তাহীনতা আমাদের পেয়ে বসেছে। কিছুতেই যেন আস্থা পাই না, অন্যকে বিশ্বাস করি না এমন কী নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। আর এইটা কাটানোর জন্য আমরা যে উপায় বেছে নিচ্ছি, তা মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলছে আমাদের উপরে।

আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে মেধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি না। যোগাযোগ বলয়ে থেকে নিজেদের কমিউনিটি ফিলিংসকে শক্তিশালী করছি না। শুধু ছুটছি সম্পদ আহরণ, মিথ্যা, শঠতা, প্রবঞ্চনা ও অসততার পেছনে। তাই এখন আর আমরা অল্পতে তুষ্ট থাকতে পারছি না।

দেশে গুটিকতক মানুষ কুয়োর ব্যাঙ হয়ে যেনতেনভাবে অর্থ উপার্জন করে, অসংখ্য জমি ও ফ্ল্যাট কিনে, সম্পদ বিদেশে পাচার করে শান-শওকতের জগতে ডুবে থাকছে। আর অন্যদিকে জীবনযাপনের টানাপোড়েনে অধিকাংশ মানুষের টালমাটাল অবস্থা। তাহলে এই বৈশাদৃশ্যপূর্ণ সামাজিক অবস্থা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ কী, গন্তব্য কোথায়?

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।

এইচআর/জেআইএম