ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ

প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দূর্ঘটনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির তিন বছর পূর্তি হল। দেশের ইতিহাসে মানবসৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিভে যায় এক হাজার ১৩৭টি তাজা প্রাণ। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে আরো দুই হাজার চারশ’ পোশাক শ্রমিক। রানা প্লাজা ধস কেবল বাংলাদেশকেই নয়, বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। সে সময় লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠে গোটা সাভার এলাকা। নিহত আর নিখোঁজদের স্বজনের আহাজারি স্থান পায় সাভারের রানা প্লাজা এলাকার আকাশে বাতাশে। গোটা বিশ্ব অবলোকন করে এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। জীবিকার তাগিদে গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমানো শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ নানা বর্ণ এবং বয়সের মানুষের লাশের স্তূপে পরিণত হয় সাভার।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ার আগের দিন ২৩ এপ্রিলই ধরা পড়েছিল বিশাল এক ফাটল। পরের দিন কাজে যোগ দিতে গিয়েও থেমে যায় শ্রমিকরা। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটে স্মরণ কালের ভয়াবহ এই শিল্প বিপর্যয়। সে এক বিভীষিকার গল্প। নয়তলা ভবনটি ধসে মুহূর্তেই দুই তলার সমান হয়ে যায়। ইট কংক্রিটে চাপা পড়ে হাজারো মানুষ। বাঁচার জন্য আকুতি ছড়িয়ে পড়ে দেয়াালের কোণে কোণে। কারো মৃত্যু হয়েছে নিমিষেই, কেউ মারা গেছেন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে। ধসে পড়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় নিবেদিত মানুষ। প্রাণপণ চেষ্টা শুরু হয় জীবন বাঁচানোর। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও নামেন উদ্ধার তৎপরতায়। টানা বিশ দিন চলে উদ্ধার অভিযান। প্রাণে বেঁচে থাকার সম্ভবনা যখন ক্ষীণ হয়ে যায়, তখনি শুরু করা হয় যান্ত্রিক উদ্ধার অভিযান।

rana-plaza

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই তৈরি পোশাক শিল্প খাতে এমন মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলা সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সরকারের যুগোপযোগী সিন্ধান্ত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ঘুড়ে দাঁড়ায় এই খাত। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে স্বজনহারা মানুষ।  দেশ বিদেশের সাহায্য সহযোগিতা এবং সঠিক কর্মপন্থা নির্ধাণের মাধ্যমে এ দুর্ঘটনা কবলিতদের পুর্নবাসন করতে তেমন বেগ পোহাতে হয়নি। হতাহতদের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয় অর্থ সহায়তা। এই ট্র্যাজেডির পর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রানা প্লাজার মালিককে গ্রেফতার করা হয়। এঘটনায় নিহত এবং আহত শ্রমিকদের পরিবারকে অনুদান এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান ও পুর্নবাসন করা হয়েছে। এখনো এইসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে সংস্কার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ এ সেক্টরে উত্তরোত্তর উন্নতি, মজুরি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ শ্রম আইনের যুগোপযোগী সংশোধনসহ নানাবিধ অভূতপূর্ব অবদানের বিষয়সমূহ উল্লেখযোগ্য। সরকার ‘নিন্মতম মজুরি বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারীদের নিন্মতম মজুরি দুই ধাপে প্রায় ২০০% বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও সংশোধিত এ শ্রম আইন কর্মপরিবেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ মালিক শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও রানা প্লাজা ও পরবর্তী পরিক্রমায় বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং বিজিএমইএ কর্তৃক প্রশংসনীয় এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নানা ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। রানা প্লাজা ধসে নিহত ৯৭৬ জনের স্বজনদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ২২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭২০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা যাতে সুবিধা পায়, সেজন্য ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতকরণ পূর্ব স্বজনদের প্রত্যেকদের (বাবা, মা, ভাইবোন, স্ত্রী বা স্বামী) আলাদাভাবে চেক দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২২টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ১ কোটি ৪২ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা, আহত উদ্ধারকর্মী কায়কোবাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে  পাঠাতে ৩৫ লক্ষ এবং অশনাক্ত শ্রমিকদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গুরুতর আহত ৪১ জনের প্রত্যেককে ১০-১৫ লক্ষ টাকা করে  আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ৯৬২ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। সহায়তার প্রথম পর্যায়ে নিহত একশত পরিবারকে প্রতি দুই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।

rana-plaza

২০১৩ সালের ডিসেম্বর তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও তা বাস্তবায়ন করা হয়ছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধিত) ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ শতাংশ শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতপূর্ব ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নীতিমালা যুগোপযোগী হয়েছে। বাংলাদেশের সব পোশাক কারখানার মানোন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এ্যাকশন প্ল্যান এর আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলও’র সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি ত্রিপক্ষীয় যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার প্রেক্ষিতে ত্রুটিপূর্ণ কারখানাসমূহে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কারখানা মহাপরিদর্শক নিয়োগ করা হয়। কারখানা পরিদর্শনের জন্য সাম্প্রতিক শ্রমবিধির আলোকে শিল্প খাতে সব কারখানাকে সমন্বয় করে শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সরকারেরর উদ্যোগে নিহতদের ১৪ অনাথ শিশুকে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ হোমে আশ্রয় ও শিক্ষার সুযোগ এবং আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ১৭টি শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।  দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ৭৭৭ জনকে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদান করেছে। সরকারের প্রচেষ্টায় আন্তর্জার্তিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র তহবিলে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান জমা দিয়েছে। পেশাগত দক্ষতা এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ জাতীয় নীতি ২০১৪ প্রণয়ণ করা হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স গঠিত হয়। কারখানা নিবন্ধন, কেমিক্যাল ও পরিবেশ সনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধনে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এছাড়াও সাব কন্ট্রাক্ট কারখানার জন্য গাইড লাইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করে।

রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য বিজিএমইএ ও অন্যান্য সংস্থা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চিকিৎসা সহায়তা ৩ কোটি ৯০ লাখ, বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ৭ কোটি ৬০ লাখ, প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে অনুদান ২ কোটি, প্রসূতি শ্রমিকদের সহায়তা ৪ লাখ ২০ হাজার, উদ্ধার কাজ ও পুনর্বাসন ৯৬ লাখ ৬০ হাজারসহ মোট  ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার টাকা বিজিএমইএ থেকে প্রদান করা হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৫ জন। ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এদের মধ্যে গুরুতর আহত প্রায় ৮৫০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।  দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির শিকার হওয়া ২৬ জন শ্রমিক ভাই-বোনকে কৃত্রিম অঙ্গ সরবরাহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ডিএনএ টেস্ট-এর মাধ্যমে শনাক্ত হয়েছে ২০৬ জন নিহত শ্রমিক ভাই-বোনের পরিচয়। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গুরুতর আহত ৩৬ জনের প্রত্যেককে ১০-১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৯৬২ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএ-এর প্রত্যক্ষ তৎপরতায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ১৪২ জন বিভিন্ন পোশাক কারখানায় যোগাযোগ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। বিজিএমইএ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শহীদ ইজাজ উদ্দিন চৌধুরী কাইকোবাদ ও ফ্যান্টম এ্যাপারেল টেকের নির্বাহী পরিচালক এম এম আবু সাঈদের সন্তানদের লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া নিহত ইথারটেক্স লিমিটেডের হেড অব প্রোডাকশন কো-অর্ডিনেটর মো. ইসাহাকের ছেলে মোস্তফা কামালকে বিইউএফটি (বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি)-তে চার বছর মেয়াদি (অনার্স) মার্চেন্ডাইজিং কোর্সে বিনা খরচে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে তাকে বিজিএমইএ-এর উত্তরা শাখা অফিসে জুনিয়র নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছে। বিজিএমইএ, ব্যাসিস ও টেরা-টেকের যৌথ উদ্যোগে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।

rana-plaza

এছাড়াও মালিক পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে নানা কার্যক্রম। তা হলো ৮০-৯০ শতাংশ কারখানায় মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হারে মজুরি প্রদান। অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার বেতন মাসিক বেতনের সঙ্গে দেয়া প্রচলন। অধিকাংশ কারখানায় অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ না করানোর প্রচেষ্টা। কারখানার অধিকাংশ শাখায় নিয়মমাফিক অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ না করানোর প্রচেষ্টা। কারখানার অধিকাংশ শাখায় নিয়মমাফিক অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা কাজ করানো। কাঠামোগত, বৈদ্যুতিক সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য এনটিসি আওতায় অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও বুয়েট কর্তৃক জরিপ চলমান। অধিকাংশ কারখানায় আইনের বিধান বাস্তবায়নের প্রচলন শুরু হয়েছে। ৩০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন। দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার ও মালিক পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগে যে এই ধরনের মানবিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এটা তার বড় প্রমাণ।

এদিকে রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতে উন্নয়নের জন্য নেয়া পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়নে সন্তোষজনক ও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন বছরে কারখানা নিরাপত্তাজনিত গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ শতাংশ, সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে ৩৬ শতাংশ, ধীর অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ এবং স্থবির রয়েছে ১৩ শতাংশ। এছাড়া রানা প্লাজা ধসের পর বিভিন্ন অংশীজনের নেয়া ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ৭৭ শতাংশ বাস্তবায়ন ও সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। বাকি ২৩ শতাংশ উদ্যোগ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বা স্থবির হয়ে আছে। অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখা, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহের বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সব অংশীজনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। রানা প্লাজা ধসের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যে বড় ধরনের একটি সংকটের আভাস দেখা গিয়েছিল তিন বছর পর এখন সেই শিল্প অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত বছর গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে সাড়ে নয় শতাংশের বেশি। রানা প্লাজা ধসের পর সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা ছিল, গার্মেন্টসের সেলাই মেশিনের এই চাকা আগের মত সচল থাকবে কিনা। তাৎক্ষণিকভাবে বড় একটি ধাক্কার মুখে পড়লেও, তিন বছর পর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.৮ শতাংশ। রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়, তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা তদারকির জন্য তৈরি হয় ইউরোপীয় ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড এবং মার্কিন ক্রেতাদের সংগঠন অ্যালায়েন্স। যাদের ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কাজ করার কথা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের মধ্যেই বর্তমান রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ করে ৫ হাজার কোটি ডলার তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা সরকার নিয়েছে। ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এখনো বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে। কাজেই পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন অংশীজনদের বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাঙালি জাতি বীরের জাতি। প্রতিনিয়ত আমাদের চলার পথে আসে নানা বাধা বিপত্তি। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সংকট সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ জাতি তাতে থেমে থাকে না। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের গার্মেন্টস খাত থমকে যায়নি বরং এখাতে আরো অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হচ্ছে।

লেখক : সাংবাদিক

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন