ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মাহে রমজান

নাজাতের দশকে শেষ জুমা

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ০৫ এপ্রিল ২০২৪

আজ পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা। রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে 'জুমাতুল বিদা' নামে অভিহিত করা হয়। এটি নব আবিষ্কৃত একটি পরিভাষা। শরিয়তে জুমাতুল বিদার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তবুও অনেকের ধারণা, এর বিশেষ ফজিলত রয়েছে। যার ফলে যাদেরকে সচরাচর মসজিদে দেখা যায়না তাদেরকেও আজকে অনেক আগে থেকেই মসজিদে দেখা যাবে। তারা এই জুমাকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ প্রত্যেক জুমাকে আল্লাহপাক বরকতমণ্ডিত আখ্যায়িত করেছেন।

সপ্তাহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ফজিলতপূর্ণ দিন হল পবিত্র জুমার দিন। সপ্তাহের সেরা দিন হল পবিত্র জুমার দিন। আল্লাহতায়ালার কাছে অন্য সব দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত দিন হল জুমা। এ দিনকে আল্লাহতায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন।

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় রমজানের দিনগুলো আমরা সুস্থ্যতার সাথে কাটানোর তৌফিক লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। তাই মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। এখন আমাদের কর্তব্য রমজানের ইবাদতগুলোকে বছর ব্যাপী জারি রাখা।

আমরা যদি রমজানের দিনগুলোর ন্যায় সারা বছরই ইবাদত-বন্দেগি ও দান-খয়রাতের প্রতি মনোযোগী হই তাহলে আমরা আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন হতে পারবো।

রমজানের দিনগুলোতে যেভাবে আমরা সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি ও দয়ার আচরণ করেছি ঠিক একইভাবে রমজানের পরেও তা বহমান রাখতে হবে। আমরা যদি সারা বছরই রমজানের ন্যায় উত্তম কাজ করতে থাকি তাহলে তা হবে আমাদের নিজেদের জন্যই কল্যাণকর।

জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে সুরা জুমা নামে একটি সুরা আল্লাহতায়ালা নাজিল করেছেন।
জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে’ (সহিহ মুসলিম)।

জুমার ফজিলত সম্পর্কে মহানবি (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)।

হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবি (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)।
একটু ভেবে দেখুন, মহান আল্লাহপাক পবিত্র জুমার দিনকে আমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এই দিনের যথাযথ মূল্যায়ণ করছি? আমরা কি আমাদের জাগতিক কাজকর্ম বন্ধ করে আজানের সাথে সাথে মসজিদে গিয়ে খুতবা, নামাজ আদায় এবং দিনের অন্যান্য সময় আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করি?

তাই এদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বনবি (সা.) আরো বলেছেন, ‘হে মুসলমানগণ, তোমরা এ দিন মিসওয়াক করো, গোসল করো ও সুগন্ধি লাগাও’ (মিশকাত)।

পবিত্র জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখেন’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত)

মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, কেননা আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সপ্তাহে বিশেষ একটি দিন নিদ্ধারণ করে দিয়েছেন, আমরা যেন এই দিনে বিশেষভাবে তার ইবাদতে রত হই। এছাড়া এ দিনে আমরা যেন বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করি।

হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আওস ইবনে আওস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম একটি দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর। কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়’ (আবু দাউদ)।
আজ পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা। শেষ জুমা বলে যে আজ বিশেষ মাহাত্ম রয়েছে তা কিন্তু নয় বরং প্রত্যেক জুমার দিনই আল্লাহর কাছে বিশেষ দিন। আমরা সাধারণত দেখি, যারা সারা বছর মসজিদে যায় না তারাও চেষ্টা করে রমজানের শেষ জুমায় মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার জন্য। কিন্তু হ্যা, তাদের জন্য এই শেষ জুমা বিশেষ হতে পারে যারা পবিত্র রমজানের প্রত্যেকটি মুহূর্ত দোয়া ও ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করেছেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে রাতগুলোকে নফল ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত রাখতেন।
এছাড়া জুমার দিনগুলোতে এমন বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন বান্দার দোয়া আল্লাহ গ্রহণ করেন। তাই জুমার গুরুত্ব উপলব্ধি করে মহান আল্লাহপাকের কাছে বিনীতভাবে এই দোয়া করা উচিত, তিনি যেন আমাদের ক্ষমা করে তার নাজাত লাভে ধন্য করেন। আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন