মাহে রমজান
সফর ও অসুস্থতায় রোজা
পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের ৫ম দিন আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। দেশের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছে। আল্লাহপাকের কাছে হাজারো শুকরিয়া যে, সুস্থ এবং আরামের সাথে তিনি আমাদেরকে রোজার দিনগুলো অতিবাহিত করাচ্ছেন।
দ্রুতই কেটে যাচ্ছে মাহে রমজানের দিনগুলো। জানিনা এ দিনগুলোতে কতটুকু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারছি। দয়াময় আল্লাহর কাছে আমাদের সকাতর প্রার্থনা, হে দয়াময় প্রভূ! আমরা তোমার দুর্বল বান্দা, আমাদেরকে তুমি ক্ষমা করে তোমার রহমতের বারি ধারায় সিক্ত কর।
আমাদের মধ্যে অনেকে এমনও আছেন যারা রমজানের রোজা রাখার জন্য অনেক আগ্রহী ছিলেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারছেন না। যাদের নিয়ত ছিল রোজা রাখার কিন্তু অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারছেন না তাদের বলবো আপনারা মন খারাপ না করে দোয়া করুন। আপনারা এই দোয়া করুন যেন সুস্থ হলে রোজা পূর্ণ করতে পারেন, তাহলে দেখবেন আল্লাহতায়ালা আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তর দেখেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু অবস্থায় রোজা রাখতে বারণ করেছেন, যেমন সফরে অথবা অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এছাড়া শিশুদের, গর্ভবতীদের এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদেরও রোজা না রাখার নির্দেশ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও অনেকে গায়ের জোরে অসুস্থ অবস্থায় এবং সফরে রোজা রাখেন, এটা মোটেও আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির কারণ নয়। আল্লাহ যা আদেশ দিয়েছেন তা পালন করার মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মাঝে যে এ মাসকে পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে। কিন্তু যে অসুস্থ অথবা সফরে থাকে তাকে অন্যান্য দিনে রোজার এ সংখ্যা পূর্ণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮৫)।
এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সহজ চান আর তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে চান না।’ কিন্তু আমাদের আফসোস হয় তাদের জন্য যারা এই রোজাকে কষ্টদায়ক বানিয়ে নেয়। তারা রোজার বিষয়ে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করে। সমস্ত রোজাকেই তারা ইসলাম মনে করে আর তাই যতই অসুস্থ হোক বা দুর্বল, বৃদ্ধ হোক বা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী তাদের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে চায় না।
অসুস্থতা যদি বেড়েও যায় অথবা স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তারপরেও রোজা ছাড়ে না। রোজার ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোরতা কোনো ভাবেই ইসলাম সম্মত নয়। আল্লাহপাক মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য চান, মানুষের কষ্ট হোক এটা তিনি চান না।
অপর দিকে কিছু মানুষ এমনও আছে যাদের কাছে রমজানের দিনগুলোর যেন কোনো গুরুত্বই নেই। রমজানুল মোবারক মাস আসে আর তার ফজল ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে চলে যায় কিন্তু তাদের এ দিকে খেয়ালও থাকে না যে, রমজান আসলো এবং চলে গেল।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম নিজের কিছু বিধি বিধানের এমন কিছু শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, যদি এই শর্ত কারো মধ্যে পাওয়া যায় তবে সে যেন এই হুকুমের ওপর আমল করে আর যদি না পাওয়া যায় তবে যেন না করে। যেমন হজ্জ বা জাকাত ইত্যাদির বিধি বিধান। এগুলো সবার জন্য আবশ্যকীয় নয়। রমজান মাসে সফর করা অবস্থায় রোজা রাখায় প্রকৃত পক্ষে এতে কোনো কল্যাণ নেই। এমন অবস্থায় রোজা না রাখাটাই কল্যাণ।
আমরা নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য আমল শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার নির্দেশেই করে থাকি, তাই রোজা সম্পর্কে আল্লাহর যে আদেশ-নিষেধ রয়েছে তাও মানতে হবে। অসুস্থতা এমনই যদি হয় যে, তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে সে ফিদিয়া আদায় করবে।
আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে রমজানের রোজা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম। এই রোজা রাখার বিষয়ে আমরা যদি কোনো দুর্বলতা দেখাই তাহলে এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। এছাড়া কোনো উপযুক্ত কারণ ব্যতিত নগণ্য বিষয়ে অজুহাত দাঁড় করিয়ে রমজানের রোজা ত্যাগ করা মোটেও উচিত নয়।
আমরা অনেককেই দেখতে পাই সামান্য কারণেই রোজা ছেড়ে দেন বা রাখেন না।
এছাড়া যারা জেনে বুঝে রোজা ত্যাগ করে তাদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়াই রমজানের একটি রোজাও ত্যাগ করে বা ছেড়ে দেয় সে ব্যক্তি যদি পরবর্তিতে জীবন ভরও ঐ রোজার বদলে রোজা রাখে তবুও সেটা তার পরিপূরক হবে না’ (মুসনাদ দারমি)।
আমাদের উচিত হবে সামান্য কোনো কারণ দেখিয়ে যেন রোজা থেকে বিরত না হই। রোজা রাখতে একান্তই যদি অপারগ হই সেটা ভিন্ন বিষয় কিন্তু কোন ধরনের বাহানা যেন আমরা অন্বেষণ না করি। এছাড়া আল্লাহ তার বান্দার অন্তর দেখে থাকেন সে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
আল্লাহপাক আমাদেরকে তার নির্দেশ পূর্ণভাবে মান্য করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস