পানি সংকট দূর করুন
গ্রীষ্মের দাবদাহে জনজীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলছে পানি সংকট। রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, মিরপুর ১, ১০, ১৪ নম্বর, সেনপাড়া-পর্বতা, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, কাঁটাসুরসহ বেশ কিছু এলাকা ও পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কোথাও পানি পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও সামান্য পানি পাওয়া গেলেও তা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। পানের অযোগ্য এই পানি দিয়ে গোসলও করা যায় না। অথচ রাজধানীতে পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসা রয়েছে। প্রতিবছর গ্রীষ্মমৌসুমে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করলেও সে অনুযায়ী ওয়াসার প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। ফলে এবারও পানি সংকটে ভোগতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
রাজধানীতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রয়োজন মিটাতে রাজধানীর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে তা আরও নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকট বেড়ে যায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের মতে, রাজধানীতে প্রতিবছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা না হলে ৫ বছর পরে প্রতিবছর ১০ মিটার করে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। অথচ সত্তরের দশকে যেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানিতল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এক মিটারেরও কম গভীরতায় ছিল, বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ৭০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে।
একদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহার, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কারণে পানির স্তর দিনদিন ভয়াবহ হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মওসুমে নদীনালা খালবিল, পুকুরে পানি থাকে না। ফলে পরিবেশের উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। একই কারণে বিল্ডিং বা স্থাপনার ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে। তা থেকে পরিত্রাণে সুপেয় পানি হিসেবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নদীনালা, খালবিলের পানি সংরক্ষণ করে তা সেচসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করার উপর জোর দেয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
পানি সংকট দূর করতে ভূউপরিস্থ পানির উৎস সৃষ্টি করতে হবে। নদী-নালা-খালবিল দখলমুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানির মানোন্নয়ন ও শোধনের মাধ্যমে সরবরাহ করা গেলে পানি সংকট অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। ওয়াসাকে এ ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত সেবামূলক এই সংস্থাটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করুক সেটাই দেখতে চায় দেশের মানুষ।
এইচআর/আরআইপি