হত্যাযজ্ঞ চলবেই?
আরেকজন মুক্তমনা লেখককে হত্যা করা হলো। ফেসবুকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চেয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই খুন হলেন নাজিমুদ্দিন সামাদ। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে সূত্রাপুরের একরামপুর মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে ও গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নাজিমুদ্দিন। একই সময় আক্রমণের শিকার হন সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিব। তবে সৌভাগ্যক্রমে নাজিব বেঁচে যান। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকায় বেশ কয়েকবার হামলার আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। শেষমেশ নিজের আশঙ্কাই সত্যি হলো। দৃর্বৃত্তের হাতে অকালে জীবন দিতে হলো তাকে।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে লেখক-প্রকাশক-ব্লগারদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে লিস্ট ধরে ধরে। একদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে অন্যদিকে বিচারের দাবিতে যারা সোচ্চার তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে এই হত্যাযজ্ঞ।
গত দুই বছরে দেশে পাঁচজন মুক্তমনা ব্লগার এবং একজন প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। মূলত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে খুনের মাধ্যমে শুরু হয় ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাযজ্ঞ। একই ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির কাছে নৃশংসভাবে খুন করা হয় মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশি ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে। এর এক মাসের মাথায় খুন হন ওয়াশিকুর রহমান। এ ঘটনার দুই মাস পরই মার্চে সিলেটে খুন হন অনন্ত বিজয় দাস নামে আরেক ব্লগার। আগস্টে হত্যা করা হয় নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে। ব্লগারদের পর সবর্শেষ আঘাত আসলো নাজিমুদ্দিন সামাদের ওপর।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশকদের ওপর এ ধরনের আঘাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পথে এক বিরাট বাধা। মানুষের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করে এসব ঘটনা। ফলে একটি রাষ্ট্র বা সমাজ তার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি হারায়। হয়ে পড়ে দিকভ্রান্তহীন। অপরাধীরা পার পেয়ে যায় বলেই আরও অপরাধ করতে উৎসাহিত হয়। হত্যার পর মামলা হয়। নিয়মমাফিক তদন্তও চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হত্যার কোনো কিনারা হয় না। এ কারণে বিচার চাওয়ার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ভুক্তভোগীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে হত্যার বিচারের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে তদন্ত আর এগোয় না। কিংবা তদন্তের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারে না। চরমপন্থার উত্থান ঠেকাতে হলে আইন-আদালতের প্রথাগত শাস্তির বাইরেও বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করতে হবে। সমাজে বা রাষ্ট্রে কেন, কোন পরিস্থিতিতে চরমপন্থার উত্থান ঘটছে এবং তারা অবাধে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারছে সে বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধও এখানে বড় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
এইচআর/পিআর