নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে
এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে আছে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতা। সেটা জাতীয় নির্বাচনই হোক, আর স্থানীয় নির্বাচনই হোক। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কিংবা কার অধীনে হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায়ই দেশে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার পর এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে হচ্ছে। ২২ মার্চ প্রথমধাপে দেশের ৭১২টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অাজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে দেশের ৪৭ জেলার ৭৮টি উপজেলার ৬৪৩ ইউপিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই নির্বাচন যাতে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ১৭টি দল চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ৫০৭ জন প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করছেন ১ হাজার ১৭৭ জন প্রার্থী। এ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮১ জন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা, জালভোট, কেন্দ্রদখল , নির্বাচন বর্জনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। শুধু তাই নয় নির্বাচনী সহিংসতায় ২৪ জনের জীবন গেছে। আহত হয়েছে প্রায় ২ হাজার জন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হবে- এমনটিই আশা করেছিল দেশের মানুষ। কিন্তু এরই মধ্যে নানা জায়গা থেকে সংঘাত-সহিংসতার খবর অাসছে। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। এটা কোনোভাবেই শুভলক্ষণ নয়। নির্বাচন কমিশনকে এক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই হচ্ছে কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠূ ও নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য সকল পক্ষেরই দায় রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের দায়িত্বও কম নয়। তবে সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে সুষ্ঠুভাবে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে তার সকল ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকেই করতে হবে। নির্বাচনের সময় স্থানীয় প্রশাসন কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানেই চলে। কাজেই অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়াই এখন নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই।
এইচআর/এমএস