ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিএনপি কি মেজর হাফিজের কথা শুনবে?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা | প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ১১ নভেম্বর ২০২৩

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা। তথ্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আকস্মিকভাবে জানিয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব:) হাফিজের নেতৃত্বে নতুন এক বিএনপি হবে এবং সে দলটি নির্বাচনে আসবে। বিষযটি সেরকম নয় বলেই জানালেন মেজর হাফিজ। বুধবার ঢাকার বনানী এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপিতে আছেন এবং এই দলের রাজনীতি থেকেই বিদায় নিতে চান। তবে মেজর হাফিজ মনে করেন, বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তাদের তত্ত্বাবধায়ক বাদ দিয়ে বিকল্প খোঁজা উচিত।

বিএনপি কি মেজর হাফিজের এই কথাটা শুনবে? সেটা মনে হচ্ছে না। নির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে বিএনপি অনঢ়। কিন্তু সরকারও অনঢ় নির্বাচন করতে। নির্বাচন কমিশনও মনে করছে তফসিল ঘোষণার ভালো পরিবেশ এখন বিরাজ করছে।

বুধবার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যাসন্ন। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার কমিশন রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করেছেনও।

গত ২৮ অক্টোবরের ঢাকার সমাবেশ কর্মসূচি পণ্ড হয়ে ব্যাপক সহিংসতার পর ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিল যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা, সেটা আদায়ের পথ আরও দুরুহ হয়ে পড়লো বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। দাবি মানানোর সব পথ এখন এসে থেমেছে সড়ক অবরোধে। বিচ্ছিন্ন সহিংসতা দিয়ে যে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না সেটা বুঝতে পারলেও কিছু করতে পারছে না বিএনপি নেতৃত্ব। একটা বড় ভরসার জায়গা যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সেদিক থেকেও যে বড় কোনো ফল আসবে সেটা মনে হচ্ছে না।

মেজর হাফিজ মনে করেন, বিএনপি ভোটে অংশ না নিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, একইভাবে জাতীয় নির্বাচনও হয়ে যাবে। তার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। সেটাই কি তাহলে পথ হবে দলটির? ঠিক তা বলা যায় না। বরং সরকারি দলের ভাবনাটা ভিন্ন রকম। আরেকটি বিএনপি না তৈরি করে, আওয়ামী লীগ চায় বিএনপির নেতারা দল ছেড়ে এসে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করুক। এর বাইরে দলের নির্বাচন করার জন্য তৃণমূল বিএনপি তো রয়েছেই। নতুন নিবন্ধিত এই দলটি ৩০০ আসেই নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সমাকেশ থেকে এই ঘোষণা আসে। সেদিনই বিভিন্ন দল ও সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা এই দলে যোগ দিয়েছেন।

সব মিলিয়ে বলতেই হয় যে, দেশে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। কিন্তু নির্বাচন বিরোধী আন্দোলনও চলছে পাশাপাশি। কোনটা শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে সেটা সময়েই বোঝা যাবে।

 

বড় দুটি দল তাদের নিজেদের দিক থেকে সমঝোতার কোনো জায়গা রাখেনি। সংলাপের পথ ছেড়ে সংঘাতের পথে চলেছে সবকিছু। ঠিক এই পথে বেশিদূর যেহেতু এগুনো যায় না, তাই বিএনপির সামনের পথটি এখন অনেকটাই অজানা। কেমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দেশে যে, কোনো কিছুই মানুষের চাওয়ার মতো করে ঘটছে না।

 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এ নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের যুক্তি মানুষ গ্রহণ করছে না। ডলার সংকটেও সরকার বড় ধরনের চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলনে বড় আকার জনসম্পৃক্ততা প্রত্যাশা করেছিল বিএনপি। কিন্তু সেটা এখনও হয়নি, এবং আর হবে বলেও মনে হচ্ছে না।

বিএনপি বলছে আরেকটা ২০১৪ এর মতো এক তরফা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগও তো সে পথে হাঁটছে না। বরং আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টা যেকোনো উপায়ে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানো এবং সেটা করতে হবে বিএনপি যদি নাও আসে নির্বাচনে সেটা মাথায় রেখে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের যে চাপটা আছে সেটা মনে রেখে এমন এক উদ্যোগে উদ্যমী হয়ে কাজ করছে দলটি।

বড় দুটি দল তাদের নিজেদের দিক থেকে সমঝোতার কোনো জায়গা রাখেনি। সংলাপের পথ ছেড়ে সংঘাতের পথে চলেছে সবকিছু। ঠিক এই পথে বেশিদূর যেহেতু এগুনো যায় না, তাই বিএনপির সামনের পথটি এখন অনেকটাই অজানা। কেমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দেশে যে, কোনো কিছুই মানুষের চাওয়ার মতো করে ঘটছে না।

বিএনপি ভাবছে এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ করে ফেলে তাহলে বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক অবরোধের মতো কিছু আসবে। কিন্তু তাতে বিএনপির লাভ কী সেটা বোঝা যাচ্ছে না। নির্বাচন হয়ে যাবে, সরকার গঠিত হবে, সংসদ বসবে এবং সরকার কূটনৈতিকভাবে সেসব আন্তর্জাতিক অবরোধ মোকাবেলা করবে। পারবে কি পারবে না সেটা পরের বিষয় হবে।

বিএনপির জন্য বড় বাস্তবতা হলো বিগত দুটি নির্বাচনে ভোট প্রতিহত করতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা ভোটে গিয়ে সফল না হওয়া। দলকে যদি এবার সাফল্য পেতে হয় তাহলে নির্বাচনে গিয়েই সেটা করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজি হবে না। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক যদি আওয়ামী লীগ দেখাতে পারে এবং সে নির্বাচনে যদি বিএনপি না থাকে তাহলে আরও একটি ওয়াক ওভারের সুযোগ পাবে আওয়ামী লীগ।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন।

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন