ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সাফল্য-ব্যর্থতার মানদণ্ডে অপরিহার্য বাহিনী র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৫:২৭ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৬

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন- র‌্যাব বাংলাদেশ পুলিশেরই অপরাধ ও সন্ত্রাস বিরোধী ‘এলিট ইউনিট’ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের জনগণের আস্থাশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত র‌্যাবের সদস্য হিসেবে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ পুলিশ, আনসার, বর্ডার গার্ড (বিজিবি) নিযুক্ত করা হয়। একই বছর ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ আমাদের নিরাপত্তার সামগ্রিক দায়িত্বে প্রশংসনীয় অনেক অবদান রেখেছে। আমেরিকা, জার্মান, চীন, ইসরাইল প্রভৃতি দেশের তৈরি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত র‌্যাব সদস্যরা ব্যাটনও ব্যবহার করে থাকেন উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনে। অভ্যন্তরীণ ৯টি বিভাগ নিয়ে র‌্যাবের প্রধান দপ্তর তাদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ডগ স্কোয়াড, বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটসহ গোয়েন্দা শাখাগুলো রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সর্বদা তৎপর। ‘লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং’ জনগণকে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত করে; অপারেশনের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিয়ে থাকে। র‌্যাব সদস্যদের সন্ত্রাস প্রতিরোধে ট্রেনিং গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তাদের ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশন কোর্সের বেসিক পাঠ, প্রাথমিক ড্রাইভিং, কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কিং-এর জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এছাড়া ফরেনসিক বিভাগ তাদের তদন্ত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। দেশজুড়ে র‌্যাবের ১২টি ব্যাটেলিয়নের মধ্যে ৫টিরই অবস্থান রাজধানীতে। মূলত র‌্যাব দেশের সকল এলাকা থেকে অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাপ্ত তথ্য তাদের ইন্টেলিজেন্স উইং নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ও নিশ্চিত করার পর দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে। র‌্যাবের দায়িত্ব ও কর্তব্য দিন দিন আরও বাড়ছে। কারণ ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাবের সাফল্যের পাশেই রয়েছে নতুন নতুন সন্ত্রাসী তৎপরতা। আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সঙ্গে দেশীয় জঙ্গিদের সম্পর্কের বিষয়ে সাইবার-ক্রাইম সংঘটিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও ব্যাটলিয়নসমূহের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় র‌্যাবের নিয়মিত টহল ডিউটি রয়েছে। এই টহল আরও বিস্তৃত করার সময় এসেছে। কারণ তাদের ওপর সরকারসহ সাধারণ জনগণের আস্থা রয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের অভিযানে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে অনেক র‌্যাব সদস্য নিহত এবং তিন’শরও বেশি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।         

র‌্যাবের কাজ আইনশৃঙ্খলার বিধান বলবৎ ও কার্যকর করা। দেশের বিচার ব্যবস্থার কাছে অপরাধীকে তুলে দেওয়া। দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত রাখা। সাইবার-ক্রাইম রোধ করা। সহিংসতা রোধে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় র‌্যাবকে সব সময় আইনের পথে পরিচালিত হতে হয়। বলা হয়ে থাকে, দোষী ব্যক্তিকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করলে অপরাধ কমে যাবে; নির্মূল হবে অরাজকতা। আইন-কানুনের বৈধতা দিয়ে অপরাধীকে কারারুদ্ধ করলে সমাজ থেকে অপরাধ ক্রমান্বয়ে অপসৃত হবে। র্যাবের ভিশন হলো সকল নাগরিককে বসবাস ও কাজের সুন্দর এবং নিরাপদ আঙিনা তৈরি করে দেওয়া। এ কাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষা করা, অপরাধ রোধ করা, অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করা তাদের প্রধান কাজ। জনজীবনে শান্তি ও সুখ আনয়নে এ সমস্ত ব্যবস্থাকে সর্বদা গুরুত্ব দিতে বাধ্য তারা। মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা ভালো হতে হবে সেই ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য র‌্যাবের ভূমিকা অনন্য। দুর্ধর্ষ অভিযানে গিয়ে সন্ত্রাসী মারা পড়লে কিংবা বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারে জীবন বাজি রেখে অপারেশন চালালে তার প্রশংসা পান না তারা। অথচ র‌্যাব সদস্যরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন। সমাজে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য তাদের কৃতিত্ব অনেক বেশি। অপরাধ দমন করে মানুষকে নিরাপদ জীবন নির্বাহ করার অক্লান্ত পরিশ্রম সার্থক হবে তাদের প্রতি আস্থার জায়গাটি চির জাগরুক থাকলে।               

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা র‌্যাবের একক দায়িত্ব না হলেও এই সংস্থাটি গত ১ যুগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। আবার সহিংসতা, নাশকতা আর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রাথমিক কাজ। সন্ত্রাসীদের আইনের হাতে সমর্পণ করে শাস্তি নিশ্চিত করলে ব্যক্তি পর্যায়ে নিরাপত্তা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। অপরাধীরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসে পুনরায় অপরাধে যুক্ত হতে যেন না পারে; সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। বিচার ব্যবস্থা ভালো হলে র‌্যাবের পক্ষে কাজ করা আরো সহজ হবে। উল্লেখ্য, র‌্যাবের মতো এলিট ফোর্স সামাজিক অবক্ষয় ও বিচার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে আরও বেশি আস্থাশীল সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আইনের শাসন কার্যকর করার জন্য আওয়ামী লীগের মতো গণসম্পৃক্ত সরকার এবং র‌্যাবের মতো প্রতিষ্ঠান থাকা খুবই জরুরি। কারণ উভয়ে দেশের সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সন্ত্রাস সম্পর্কে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। জীবনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিধানের অধিকার রয়েছে প্রত্যেকের। কাউকে নৃশংস অত্যাচার ও খুন করা হলে সেই দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। আর জন নিরাপত্তা বিণ্ঘিত হলে তার দায়ভার র‌্যাবের মতো সংস্থার ওপর এসে পড়ে। এজন্য জনগণের সচেতনতা আর র্যাবের আন্তরিকতা এবং সরকারের সদিচ্ছা নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে পারে। জন নিরাপত্তা বিধানে র‌্যাব তাদের দায়িত্ব সচেতনভাবে পালন করে চলেছে বলেই আমরা মনে করি। বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাণ্ড বর্তমানে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। ভয়ংকর অথবা সাধারণ যেকোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্তকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গত ৭ বছরে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত ১ হাজার ৪২৯ জন র‌্যাব সদস্যকে তদন্ত, বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা হয়। ফৌজদারি আদালত এবং প্রশাসনিক শাস্তির ফলে ৫২৫ জনের জেল ও ৯০৪ জনকে বরখাস্ত কিংবা বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আগেকার সরকারের র‌্যাবের মতো সংস্থাটির অপরাধী সদস্যদের অব্যাহতি দেওয়ার সংস্কৃতি বদলে গেছে। বর্তমানে যেকোনো র‌্যাব সদস্য অপরাধী হিসেবে গণ্য হলে কিংবা অপকর্মে লিপ্ত হলে তাকে জেল, পাওনা ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং সিভিল কোর্টে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। এছাড়া র‌্যাব সদস্যদের আরও বেশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইন্টারনাল ইনক্যুয়ারি সেল। এ সেলটি স্বাধীনভাবে ডিজি’র (র‌্যাব) অধীনে কাজ করছে। র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো নাগরিকের অভিযোগকে তদন্ত করা সেলটির অন্যতম দায়িত্ব। তবে অনেক সময় দেখা গেছে, এসব অভিযোগে ব্যক্তি বিশেষ জড়িত। পুরো বাহিনীকে এই ফ্রেমে বিবেচনা করা সমীচীন নয়। এসব অভিযোগ সহজে কেটে ওঠা সম্ভব। বৈশ্বিক বিবেচনায় দেখা যায়, বড় বড় ক্ষমতাসম্পন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধেও এসব অভিযোগ উঠেছে। তবে এটা সত্য যে, র‌্যাবের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও পিছু পা হয়নি এই বাহিনী। র‌্যাবের বড় কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আসায় আমরা দেখেছি সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বস্তুত বর্তমান সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং জাতির সংকটকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখায় র‌্যাবের অবদান আজ অনস্বীকার্য। কারণ অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের উন্নতির পথে অন্যতম বাধা। এজন্য অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং এই ধরনের ক্ষতিকারক দ্রব্য উদ্ধার, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান, যে কোনো সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান, সরকারি আদেশ অনুসারে অপরাধের তদন্ত করাসহ অন্যান্য সরকারি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে র্যাব সর্বদা নিয়োজিত।

 ২. প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পথে সাইবার-ক্রাইম অন্যতম প্রতিবন্ধক। সাইবার অপরাধ পরিচিত সাইবার-টেররিজম বা সাইবার সন্ত্রাস নামে। দুটি পর্যায়ে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে ভাগ করা সম্ভব। ১. ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক অবকাঠামোকে সরাসরি আক্রমণ। ২. ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তার ব্যত্যয় ঘটানো। এ দুই পর্যায়ে যেসব সাইবার অপরাধ ঘটতে পারে সেগুলো হলো : ক. ভাইরাস আক্রমণ। খ. ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইট হ্যাকিং। গ. মেলওয়্যার স্পামিং বা জাঙ্ক মেইল; এটি সম্পূর্ণই মেইল ভিত্তিক। ভুয়া আইডি/ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম-ঠিকানা, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার এমনকি ফোন নাম্বার নিয়ে মিষ্টি কথায় ভোলাতে চেষ্টা করবে অপরাধী চক্র। স্প্যাম ফোল্ডারে এমন মেইল প্রায়ই আসে। ঘ. সাইবার হয়রানি- ইমেইল বা ব্লগ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে হুমকি দেওয়া, ব্যক্তির নামে মিথ্যাচার/অপপ্রচার, নারী অবমাননা, যৌন হয়রানি। ঙ. ফিশিং- লগইন/অ্যাকসেস তথ্যচুরি, বিশেষত ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সাইটগুলো ফিশারিদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে। চ. অর্থ আত্মসাৎ ইন্টারনেট থেকে তথ্যচুরি করে ব্যাংকের এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর একটি উদাহরণ। ছ. সাইবার মাদক ব্যবসায়-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ইদানিং ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাদক ব্যবসার প্রবণতা বেড়েছে। জ. পাইরেসি সদ্য প্রকাশিত গান ও সিনেমার এমপিথ্রি বা মুভি ফাইল ইন্টারনেটে শেয়ার হয়ে যাচ্ছে। ঝ. ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ব্লগ ও ওয়েবসাইট থেকে কোনো লেখা ও ফটোগ্রাফি সহজেই কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে সাইবার কমিউনিটিতে। ঞ. পর্নোগ্রাফি শিশু পর্নোগ্রাফি ইন্টারনেটে ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। ট. ব্যক্তিগত তথ্য-পরিচয়-ছবি চুরি ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার বেড়েছে। ঠ. হ্যাকিং বাংলাদেশেও ওয়েবসাইট হ্যাকিং ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ড. ক্র্যাকিং ক্র্যাকিং হলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করে গোপনে অনলাইন ব্যাংক থেকে ডলার চুরি করা। দেশে ক্রমশ বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সরকারি হিসেবে, বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। এর মধ্যে কেবল গত দুবছরেই গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ কোটি। বিপুল সংখ্যক এসব মানুষ আবার যুক্ত হচ্ছেন সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে। বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান এই ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধের সংখ্যা। বেসরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় ৬০ ভাগই কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন।   

সাইবার অপরাধীরা ইন্টারনেট ও সামাজিক সাইট ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে ক্রমেই তাদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। এই সাইবার-ক্রাইম চক্রে অনেক নারী সদস্যও থাকেন, যাদের মাধ্যমে অনেকে সহজেই প্রতারিত হন। প্রতারণার কৌশল হিসেবে এ সব নারী প্রেমের প্রস্তাব বা অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাবও দিয়ে থাকে। পরে অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রতারক চক্রের নারী সদস্যের সঙ্গে ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করেন। তবে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন মূলত নারীরা। ইমেইল, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বনামে-বেনামে আইডি খুলে যৌন হয়রানি করে চলেছেন অপরাধীরা। তারা ভুয়া ফেসবুক-টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নারীদের কাছে আপত্তিকর ছবি পাঠাচ্ছে। গবেষণা থেকে জানা গেছে, ৭৫ শতাংশ নারী সাইবার নিপীড়নের শিকার। তবে এদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ অভিযোগ করেন, অন্যরা সামাজিকতার ভয়ে অভিযোগই করছেন না। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান অনুসারে বিটিআরসিতে ২২০টি অভিযোগের মধ্যে ৬০ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-সংক্রান্ত। এছাড়া, অ্যাডাল্ট ছবির সঙ্গে আরেকজনের ছবি জোড়া দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে এসব সোশ্যাল মিডিয়ায়। একইসঙ্গে নানা রকম এডাল্ট মুভির ভিডিও ক্লিপ এডিট করে নারীদের ছবি জুড়ে দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের চেষ্টা চলছে। এতে ব্যর্থ হলে ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক-ইউটিউবে। কেবল তাই নয়, এসব আপত্তিকর ছবি-মুভি টার্গেটকৃত নারীদের আত্মীয়-স্বজনের কাছেও পৌঁছে দিচ্ছে তারা। এ ধরনের অপরাধ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ‘র‌্যাব’। অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত করতে পারলেও অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাও দেখা যায়। এজন্য সাইবার অপরাধীরা অপরাধের পুনরাবৃত্তি করেই যাচ্ছে। ২০১৫ সালে কীভাবে পুলিশের ওপর হামলা করতে হবে, কীভাবে বোমা বানাতে হবে, পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ির ওপর কীভাবে হামলা করতে হবে এসব তথ্য প্রচার করেছে কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। কিন্তু তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। একই বছর ২৪ অক্টোবর সারারাত ডিএমপির সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ঊধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইলে বিদেশ থেকে ফোন এসেছে, হুমকি দিয়ে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে পুলিশি অভিযানের ছবি ফটোশপের মাধ্যমে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা থেকে অনুমান করা যায় কী হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। তাই এসব প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনে প্রযুক্তিকেই দক্ষভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্বখ্যাত উইকিলিকসের হ্যাকার বাহিনী বিস্ময়কর প্রযুক্তি ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের অতি গোপনীয় নথিপত্র ফাঁস করে আলোড়ন তুলেছে। এজন্য ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ রোধে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শীর্ষ সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিটের মাধ্যমে আগাম সাইবার আক্রমণের তথ্য প্রকাশ করবে। এছাড়া সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে পার্সোনাল কম্পিউটার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্ভারের সঙ্গে হ্যাকারদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবে। প্রতিষ্ঠানটির এ সেবার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য কম্পিউটার ব্যবহারকারী সম্ভাব্য সাইবার হামলার সম্পর্কে আগাম তথ্য জানতে পারবে। ফলে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় আগাম যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে গ্রাহকরা। বর্তমানে সক্রিয় ক্ষতিকারক ভাইরাসগুলো শনাক্তকরণে মাইক্রোসফটের এ পরিকল্পনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তবে ইংল্যান্ড বিশ্বে প্রথম সাইবার আইন প্রণেতা হিসেবে তৈরি করে ‘কম্পিউটার মিসইউজ অ্যাক্ট ১৯৯০’। ই-অপরাধ প্রতিরোধে ২০০৮ সালে জাতীয় ই-অপরাধ ইউনিটও গঠন করা হয়। ভারতেও তৈরি হয় ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০০’। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ আইন তৈরি হয় এবং ২০১৩ সালে এ আইন সংশোধন করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধের সংখ্যাও বাড়ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগেরই এ আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাই বুঝে হোক বা না বুঝে হোক সাইবার অপরাধ সংগঠিত করে যাচ্ছে ও দিন দিন সাইবার অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আইনের প্রচার বাড়াতে হবে ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরেকটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০১৫’ একটি ভালো উদ্যোগ। এখানে ‘সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট’ নামে একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যার অধীনে বাংলাদেশ সাইবার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম নামক একটি টিম গঠন করা হবে। বাংলাদেশের কোথাও সাইবার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বা সাইবার হামলা হলে এ টিম তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে এবং নিরাপত্তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। নিরাপত্তায় সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিল’ গঠনের বিষয়েও আইনে বলা হয়েছে। কম্পিউটার সংক্রান্ত যেকোনো প্রতারণা, সাইবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, পর্নোগ্রাফি ও এ সংশ্লিষ্ট অপরাধ ও অন্যান্য সাইবার অপরাধ দমন সর্বোপরি সাইবার নিরাপত্তা বিধানকল্পে আইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় কেবল কারও সম্মানহানি হলে, রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোনো তৎপরতা হলে, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রতারণা বা অন্য অপরাধ, যেমন এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালাতে পারে, সে ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো বিধান ছিল না।

৩. বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। গত বছরই বিশ্বে ১ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল ডিভাইস ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়। খুব কম খাতই আছে, যা এখন পর্যন্ত সাইবার হামলার শিকার হয়নি। আগেই উল্লেখ করেছি বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। তথ্য সুরক্ষা ও নানাবিধ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রায়শই ঘটছে সাইবার হামলা। ২০১০ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ৬৪টি জেলায় ওয়েবপোর্টাল উদ্বোধন করেন। সে বছর ২১ মার্চেই তা হ্যাকারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চাঁদে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা সাঈদীর মুখাবয়ব, বিচারকের রায়ের গোপন নথি প্রকাশ করে সামাজিক অস্থিরতা তৈরিসহ নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে এসব অপরাধীরা। মনে রাখতে হবে সাইবার অপরাধীরা কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্কিং-এ খুবই দক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অসংখ্য কিশোর-কিশোরীকে তারা দলে ভিড়াচ্ছে। ই-কমার্স বা ই-বিজনেস বাংলাদেশে ক্রমপ্রসারমান। খাবার কেনা থেকে শুরু করে শপিং, বুকিং সব অনলাইনে হচ্ছে। অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বার্ষিক ৫০ শতাংশ হারে বাড়ছে। আড়াইশ’র অধিক সাইট এবং প্রায় ৩ হাজারের মতো ফেসবুক পেজ অনলাইনে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। তাই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ (সাইবার-ক্রাইম) দমনে র‌্যাবের ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সাইবার অপরাধের ঘটনায় ৯’শ মামলা নথিভুক্তির কথা বলা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১.৭৮ গুণ বেশি। তবে বিশ্ব সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাইমেনটেকের মতে,  গত বছর মোট ৩৫ হাজার ২১৩টি সাইবার-ক্রাইমের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৮ম অধ্যায়ে এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিতের কথা উল্লেখ রয়েছে। আইসিটি আইনের ধারাসমূহ স্মরণে রেখেই ‘র‌্যাব’ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাইবার-ক্রাইমের অন্তর্ভুক্ত বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদি উদ্ধার করার কৃতিত্ব রয়েছে র‌্যাবের। ২৯৬টির বেশি মামলা এবং সাড়ে চার’শ গ্রেপ্তার করে সরকারকে বিপুল রাজস্ব ফাঁকির হাত থেকে রক্ষা করেছেন এ বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিষ্ঠার পর চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ও ভিডিও পাইরেসি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৯০০টির মতো। সাড়ে সাত’শ মামলা করা হয়েছে এবং পেন ড্রাইভ ৪৯টি, ১৮টি ল্যাপটপ, ব্লক্স সিডি ২২,৩০১টি, ৯১১টি সিপিহউ, ১ হাজার ২৭০টি সিডি/ডিভিডি রাইটার, ৯৬টি হার্ডডিক্স, ১ হাজার ৩৮২টি মনিটর, পোস্টার ৬৯ হাজার ৭৩০টি ব্লুফিল্ম, কাটপিচ রিল  ৩১৭টি ও ৪ লাখ ৮০ হাজারটি সিডির নকল লেভেল ইত্যাদি উদ্ধার করেছেন তারা। তার মধ্যে  ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬১টি পাইরেটেড সিডি উদ্ধার ও আড়াই হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার অন্যতম ঘটনা। ২০১৪ সালে র‌্যাবের অভিযানে টাঙ্গাইল থেকে আল-কায়দার অডিও-ভিডিও বার্তা প্রচারকারী রাসেল বিন সাত্তার আটক আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

আধুনিক অপরাধীরা অনেকক্ষেত্রে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে সব পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই র‌্যাব সাইবার-ক্রাইম রোধে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ৪০ হাজার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য র‌্যাবের তথ্যভাণ্ডার ‘ক্রিমিনাল-ডেটাবেইজ’ এখন নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে যুক্ত। র‌্যাবে’র প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যভাণ্ডারের যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। দেশের ৬৭টি কারাগারের মধ্যে ৬৪টি কারাগারের ২৮ হাজার সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর তালিকা এই তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় র্যাবের হাতে আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পর এবার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির (বিআরটিএ), ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধন তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গেও ‘ক্রিমিনাল- ডেটাবেইজ’ এর যোগাযোগ ঘটানোর কাজ চলছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেইজের সঙ্গে যুক্ত হবে সংস্থাটি। ফলে অপরাধীদের সনাক্ত করাও সহজ হয়ে আসবে। অপরাধীরা ঘন ঘন নাম পরিচয় পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব।

সাইবার-ক্রাইমের অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশই ভুয়া ফেসবুক আইডি, হ্যাকড ফেসবুক, ই-মেইল আইডি হ্যাকড, বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট বা ব্যক্তিগত ছবি পর্নোসাইট ছেড়ে দেওয়া সংক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ ফেসবুককেন্দ্রিক। আর এই ফেসবুককেন্দ্রিক অভিযোগগুলো এসেছে নারীদের কাছ থেকে। একদল নিজের অজান্তেই সাইবার ক্রাইম করছে। প্রতিহিংসা বা একান্ত কৌতূহলের কারণেই তারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আরেক দল জেনেশুনেই অন্যের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে সাইবার-ক্রাইম করছে। ফেক আইডি হলেও আইপি অ্যাড্রেস ডিটেক্ট করার মতো যথেষ্ট স্মার্ট সফটওয়্যার র‌্যাবের কাছে আছে। আইপি অ্যাড্রেস থেকে ট্র্যাক করা সম্ভব। যদি মোবাইল থেকে করা হয় মোবাইলের আইএমইআই ধরা সম্ভব। ভাইবারের মাধ্যমে অপরাধ ঘটলেও সেটা ধরা সম্ভব হচ্ছে।   

র‌্যাব সাধারণত যে সব আইডি বা পেজগুলোর বিষয়ে অভিযোগ পায়, সেগুলোর ব্যবহারকারীকে ধরে। এ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে কেউ যদি প্রতারণার মাধ্যমে টাকা দাবি বা আদায় করে, সে সব অপরাধীদের বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। অশ্লীল-নোংরা ছবি বা তথ্য দিয়ে ব্যবহৃত আইডি কিংবা পেজের মাধ্যমে অপরাধ দমনে র‌্যাবের নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। প্রতিমাসে ডজনখানেক অভিযোগ আসে র‌্যাবের কাছে। এ ধরনের অপরাধ রোধে অভ্যন্তরীণভাবে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম নিয়মিত কাজ করে থাকে। সাইবার-ক্রাইমের অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪’শ ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৭৫টি দেশীয় পর্নো ওয়েবসাইট, বাকিগুলো দিয়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হতো। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওয়েবসাইটের তথ্য চুরি করে ওয়েবসাইটটি বিকল করে দেয় কয়েকজন সাইবার অপরাধী। তবে এই অপরাধ বন্ধে র‌্যাব সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। ফেসবুকে নগ্ন ভিডিও আপলোডসহ যারা অনলাইন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত ও আটক করতে র‌্যাব আগেও কাজ করেছে, এখনো করছে। সাইবার অপরাধ দমনে র্যাব সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

৪. সাইবার অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি, যা দমনে আমাদের দেশের র‌্যাব বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখছে এই ক্ষেত্রে শুধু কঠোর শাস্তির বিধান করেই কোনো আইন যে কার্যকর করা যাবে এমনটি আশা করা ঠিক নয়। সাইবার আইন এ দেশে নতুন একটি বিষয়। ফলে এই আইনে বিচার ও তদন্ত করার ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। আইসিটি আইনে দেশে অনেক মামলাও হয়েছে ও বিচারাধীন অবস্থায় আছে। কিন্তু সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ে বিচার করতে বিচারকদের প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ। যাতে মামলার ফল পেতে একজন ভুক্তভোগীকে যেন আবারো ভুগতে না হয়।  

সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষায় আড়াই হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে সাইবার-যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ‘লিভারেজিং গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের’ আওতায় সাইবার নিরাপত্তায় প্রশিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) আইটি শাখায় কর্মরত সদস্যরাও রয়েছেন এতে। বাজেটে সাইবার নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে, যেমনটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় সরকার। সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের ভিত্তিতেও এ বিষয়ে কাজ করা যায়। আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমেও কাজ করা যেতে পারে। সাইবার অপরাধ দমনে র‌্যাবে নিযুক্ত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি। র‌্যাব সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি কৌশল গ্রহণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ তাদের কাজকে গতিশীল করতে পারে।  

সম্প্রতি দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার থেকে সুস্পষ্ট হচ্ছে প্রচলিত আইনটি কার্যকরভাবে সাইবার অপরাধ দমনে সক্ষম। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ দমনে লালবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে সাইবার থানা। আমাদের দেশে এমন কোনো থানা বা পুলিশের আলাদা কোনো বিভাগ না থাকলেও সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে কাজ করছে র‌্যাব। বিভাগীয় শহরগুলোতে তারা আলাদা প্রযুক্তি বিষয়ে কার্যকর ইউনিট গড়ে তুলেছে। সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ দমন ও এই সমস্ত অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে কাজে তাদের দক্ষতা অর্জিত হয়েছে। তাদের অনেকেরই আছে উচ্চ প্রশিক্ষণ। কেবল তথ্য ও প্রযুক্তির ওপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

৫.খালেদা-নিজামী জোট আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালনাকালে হার্ট অ্যাটাকের নামে ৫৮ জন এবং ক্রসফায়ারের নামে র্যাব ও পুলিশ কর্তৃক ২০ মে ২০০৬ পর্যন্ত ৬২০ জন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের হেফাজতে কয়েকশত মানুষ নিহত হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক স্থানীয় প্রভাবশালী, ত্যাগী ও সৎ নেতা-কর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যা এবং এসব হত্যাকাণ্ডের মামলা গ্রহণ না করা; বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড সম্পর্কে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। জোট সরকারের নির্দেশনায় বিনা বিচারে মানুষ হত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে অভিযোগ উত্থাপন এবং তাদের বিচার করা যাবে না- এই মর্মে ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি’ আইন পাশ করা হয়, যা সংবিধানের মৌলিক চেতনার পরিপন্থি ছিল। সুখের বিষয় ২০১২ সালের ২৯ জুলাই হাইকোর্ট আইনটি বাতিলের জন্য রুল জারি করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে সেই আমলে কিছু সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় জনমনে আনন্দ জেগেছিল। দুর্ধর্ষ আসামি গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় জনমনে স্বস্তি অনুভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ক্রসফায়ার কেবল বাংলাদেশের ‘র‌্যাবে’র ইতিহাস নয়। অনেক দেশে এ ধরনের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত সরকারি কোন সংস্থা কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য বিচার বা আইনের সম্মুখীন করার পরিবর্তে হত্যা করা হলে তাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলা হয়। এটি বেআইনি এবং বিচারের বিধি লঙ্ঘন হিসেবে পরিগণিত। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ট্রেড ইউনিয়নের নেতা, রাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থানকারী ও ভিন্নমত পোষণকারী সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিরা পুলিশ অথবা সামরিক বাহিনী দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে। মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং আফ্রিকার অনেক দেশে; জামাইকা, কসোভো, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে; রাশিয়া, উজবেকস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপিনস প্রভৃতি দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বেশি এবং এখনও কোন কোন দেশে তা অব্যাহত রয়েছে। ১৯৩০ সালের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিস্ট ব্লক ভিন্নমত পোষণকারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে অসংখ্য। আর্জেন্টিনা ও চিলির সামরিক জান্তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে ষাট ও সত্তর দশকে। আশির দশকেও অনেক দেশে ‘ডেথ স্কোয়াড’ গঠন করে হত্যা করা হয়েছে অনেককে। ভারত, ইরান, ইরাক এর মধ্যে অন্যতম দেশ। অনেক আগে থেকেই জাতিসংঘ, মানবাধিকার কর্মী এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

তবে বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যে কমে এসেছে তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের শেষ তিন বছরে মোট গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শতকরা ২.২৪ ভাগ অর্থাৎ ৩৪০ জন এনকাউন্টারে নিহত হয়। সামরিক তত্বাবধায়ক সরকারের সময় ০.৭৪ ভাগ অর্থাৎ ২০৬ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ধারা বর্তমান সরকারের সাত বছরে নেমে আসে ০.২৩ ভাগে অর্থাৎ ১১৭ জন মারা পড়ে এনকাউন্টারে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বর্তমানে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। ভয়ঙ্কর অথবা সাধারণ যে কোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্তকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গত চার বছরে শাস্তি দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ১৪২৯ জন র্যাব সদস্যকে তদন্ত, বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা হয়। ফৌজদারি আদালত এবং প্রশাসনিক শাস্তির ফলে ৫২৫ জনের জেল ও ৯০৪ জনকে বরখাস্ত কিংবা বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আগেকার সরকারের র্যাবের মতো সংস্থাটির অপরাধী সদস্যদের অব্যাহতি দেয়ার সংস্কৃতি বদলে গেছে। বর্তমানে যে কোন র‌্যাব সদস্য অপরাধী হিসেবে গণ্য হলে কিংবা অপকর্মে লিপ্ত হলে তাকে জেল, পাওনা ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং সিভিল কোর্টে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। এছাড়া র‌্যাব সদস্যদের আরও বেশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ```Internal Enquiry Cell` (IEC)। এ সেলটি স্বাধীনভাবে ডিজি’র (র‌্যাব) অধীনে কাজ করছে। র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন নাগরিকের অভিযোগকে তদন্ত করা সেলটির অন্যতম দায়িত্ব। পূর্বেই বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এসেছে। কারণ র‌্যাব সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত র‌্যাবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিসংখ্যান হলো- র‌্যাবের এখতিয়ারে ১৩২৭ জন, ১২ জন ক্রিমিন্যাল কোর্টে, ৩৯২ জনকে অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক বিচার করা হয়েছে। র‌্যাব কর্তৃক ১ জন ও ক্রিমিন্যাল কোর্টে ৫জন বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। গুরুতর অপরাধের জন্য জেল হয়েছে ৫২৫ জনের, ছোটখাট অনিয়মের কারণে ৯০৪জন শাস্তি ভোগ করছে।

বিভিন্ন সরকারের সময় খুনের পরিসংখ্যান থেকে আমরা কি দেখতে পাই? কারা মারা পড়েছে? এরা কি রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয়েছে? নাকি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হিংসা-দ্বেষ, ভূমি সংক্রান্ত দ্দ্বন্দ্ব-বিবাদ থেকে খুন হলে সেটা ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয়। তার জন্য সরকার, বিরোধী দল, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ কেউ-ই দায়ী নন। এর প্রধান কারণ নৈতিক অবক্ষয়; মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের অবনতি। অথচ বাইরের রাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা র‌্যাব বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছে; আমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় এটি! বর্তমান সরকার কি গণ-বিরোধী শাসক? র‌্যাবের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে জনগণের মঙ্গলের জন্য। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমার আপনজন নিহত হলে আমরা কি বলব? প্রতিটি ব্যক্তির বেডরুম পাহারা দিতে সরকার পারবে না এটা আমরা জেনে গেছি; জনে জনে মানুষের নিরাপত্তা দিতেও সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ অন্যতম উপায় হতে পারে। জঙ্গিদের আইনের হাতে সমর্পণ করে শাস্তি নিশ্চিত করলে ব্যক্তি পর্যায়ে নিরাপত্তা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। অপরাধীরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসে পুনরায় অপরাধে যুক্ত হতে যেন না পারে; সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া দরকার। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকার সংবাদ থেকে আমরা জানতে পেরেছি সুব্রত বাইনের মতো কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশে ফিরেছে। অর্থাৎ আন্ডারওয়ার্ল্ড আবার সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট আমলে এরা দিনের পর দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে; এমনকি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। এ ধরনের অপরাধী ছাড়া পায় বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘র‌্যাবে’র মতো এলিট ফোর্সের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ এ ধরনের ফোর্স সামাজিক অবক্ষয় ও বিচার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে আরও বেশি আস্থাশীল সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে বিরোধী গোষ্ঠীর নানা তৎপরতা সত্ত্বেও র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়েছে। কারণ ‘র্যাব’ বাংলাদেশের অন্যতম ‘এলিট ফোর্স’। বিশ্বের অনেক দেশে এলিট ফোর্সের অস্তিত্ব রয়েছে।

৬. বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে সারা দেশে সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। সন্ত্রাসী চক্রের নেটওয়ার্ক বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জোট সরকারের ওপর চাপ আসতে থাকে। ফলে এলিট ফোর্স ‘র‌্যাব’ গঠন করে পরিস্থিতি সামলাতে সচেষ্ট হয় প্রশাসন। কিন্তু অনেকের ধারণা, জামায়াতে ইসলামীর ধর্ম-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হাসিল এবং তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে দমানোর জন্য ‘র‌্যাব’ সৃষ্টি করা হয় এবং ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লজ্জাজনক ঘটনা ঘটে। জোট সরকার ও বিএনপি-জামায়াতের মদদে ৫৪টি উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন এবং ইসলামি এনজিওর আড়ালে বিদেশি জঙ্গি-মৌলবাদী সংগঠন দেশব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকে অনিরাপদ রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেশের সুনাম, মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নস্যাৎ হয়। তৎকালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জোট সরকার তাদের আশ্রয়ে থাকা কয়েকজন জঙ্গি নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার নাটকের অবতারণা করে। ধৃত জঙ্গি নেতারা আদালতে সরকারের সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় ফাঁস করে দেওয়ায় জঙ্গি গ্রেফতার বন্ধ হয়ে য়ায়। জেলা/উপজেলা কমান্ডার ও সার্বক্ষণিক (এহসার/গায়েবে এহসার) কর্মীসহ এখনও সহস্রাধিক জঙ্গি জামায়াত-বিএনপির নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছে। আগামী নির্বাচনে এই জঙ্গিদের দিয়ে আওয়ামী লীগ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর হামলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেই পরিকল্পনা অনেকাংশে নস্যাৎ করে দিয়েছে র‌্যাব। জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনকে আইনের কাছে উপস্থিত করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। বর্তমানে তাদের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিরল একটি ঘটনা। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় র্যাব ২,১৮,৩৩২ জনকে বিভিন্ন অপরাধে আটক করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে : ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, অর্থ পাচার ও প্রতারক, নারী ও শিশু পাচারকারী এবং অপহরণকারী। তাদের তৎপরতায় ৯৫২০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসী গ্রেফতারের অভিযানে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ১৩ র‌্যাব সদস্য নিহত এবং দু’শরও বেশি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।

মূলত র‌্যাব প্রতিষ্ঠা থেকে বর্তমান পর্যন্ত ধর্মীয় জঙ্গি গ্রেফতার ও অস্ত্র-গোলাবারুদ বা বিস্ফোরক উদ্ধারের পরিসংখ্যানটি দীর্ঘ। র‌্যাব কর্তৃক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে ১০০০জন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ জেএমবি সদস্য ৫৭৭ জন। এর পরই রয়েছে হিযবুত তাহরীরের ১৭৮ এবং হিযবুত তাওহীদের ১২৯ জন। জঙ্গি তৎপরতায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামায়াত ইসলাম, জয়েস-ই-মোহাম্মদ, হিযবুল মুজাহিদীন, খেলাফত মজলিস, হুজিবি, লস্কর-ই-তৈয়াবা’র উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী রয়েছে। নাশকতার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন - গ্রেনেড, বোমা, ককটেল(২০৪টি), বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র(৭৫টি), বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ(২৯২৯ রাউন্ড), বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক(১৮১১ কেজি), গ্রেনেড বডি(৬২৪টি), বিভিন্ন প্রকার ডেটোনেটর(৯০১৮) এবং বিপুল সংখ্যক সাংগঠনিক বই, সিডি, লিফলেট ও পোস্টার উদ্ধার করেছেন র‌্যাব সদস্যরা। কেবল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান নয় তাদের গোপন কার্যক্রম ও গতিবিধির উপর নজরদারি করছে র‌্যাব।

র‌্যাবের নিয়মিত অভিযানের ফলে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ পাকাপোক্তভাবে খুঁটি গেড়ে বসতে পারছে না দেশের মাটিতে। যদিও ২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে ৭১-এর রাজাকার-আলবদরদেরকে মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে আসন পেতে সাহায্য করেছিল বিএনপি। পাকিস্তানপ্রেমী গণধিক্কৃত যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশ নিয়ে ভিত আরও শক্ত করে নিয়েছে। তারা কেউ কেউ আবার আত্মস্বীকৃতিতে ১৯৭১-এ তাদের কর্মকাণ্ড প্রচার করেছিল। জঙ্গিদের জন্য জামাতের পক্ষ থেকে মাসিক নির্ধারিত বরাদ্দ প্রায় ২ কোটি টাকা। জামায়াতের বরাদ্দ করা অর্থ নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির ৫০ হাজার সদস্যকে জনপ্রতি ৪শ টাকা করে দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে জেএমবির জন্য বরাদ্দ করা হয় এই অর্থ। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জামাতের সাবেক কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও জেএমবি আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমানের দেয়া জবানবন্দিতে জানা যায় এসব তথ্য। জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের দলীয় তহবিল, কর্মী কল্যাণ তহবিল ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা তহবিল নামে তিন স্তরে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে জামাত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতেও বিশেষ বরাদ্দ তহবিল রয়েছে জামায়াতের। বর্তমান সরকার ক্ষমতা লাভের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে মাঠে থাকার শর্তে সামপ্রতি জেএমবির জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছিল জামাত। সরকারের সকল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের মতো অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। কারণ জামাত-শিবির বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে বিডিআর সদর দপ্তরে রোমহর্ষক ঘটনা, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা দেয়ার নামে জঙ্গি হামলা, সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সবকিছু একইসূত্রে গাঁথা। এখন সব জঙ্গি কর্মকাণ্ডের গডফাদাররা জামায়াতের হাতে। র‌্যাব সদস্যরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, কাজের ধরন, ঘটনার পূর্বসূত্র নিয়ে গবেষণা করে তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। তাদের তথ্য থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ হরকাতুল জিহাদের একাউন্টে যত টাকা আসত, তা ছিল পৃথিবীর অনেক জঙ্গি সংগঠনের টাকার ভাগ। এরা সরাসরি ‘হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম’ নামে এবং ‘বাংলাদেশ জাগো মুজাহিদ’ পত্রিকার নামে ইসলামি ব্যাংকে একাউন্ট করেছিল। ২০০৫ সালের জঙ্গি তৎপরতা পর্যন্ত এটি সচল ছিল। দেশের মধ্যে জামায়াত ও মৌলবাদীরা বিদেশি এনজিওর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে কয়েক’শ ইসলামী এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছে জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার জন্য। ২০০৫ সালের ২ অক্টোবর ‘এশিয়া টাইমস’ সূত্র মতে ইসলামী এনজিওকে অর্থ সরবরাহকারী মধ্যপ্রাচ্যের ১০টি দাতা সংস্থা হলো- রাবেতা আল ইসলামী, রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি, সোসাইটি অব সোশ্যাল রিফরম, কাতার চ্যারিটেবল সোসাইটি, আল মুনতাদা আল ইসলামী, ইসলামিক রিলিফ এজেন্সি, আল-ফোরকান ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল রিলিফ অরগানাইজেশন, কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি, মুসলিম এইড বাংলাদেশ। কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয় ইউরোপ থেকে পাঠানো দাতাদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা দিনে দিনে বৃদ্ধি করছে সমর্থক ও কর্মীবাহিনী। ব্রিটিশ ইসলামী এনজিও ‘গ্রিন ক্রিসেন্টে’র অর্থ সাহায্যে পরিচালিত ভোলার এক মাদ্রাসায় ২০০৯-এর ২৪ মার্চ র‌্যাব খুঁজে বের করেছে এক বিশাল অস্ত্র ভাণ্ডার। মূলত র‌্যাব দেশের সকল এলাকা থেকে জঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাপ্ত তথ্য তাদের ইন্টেলিজেন্স উইং নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ও নিশ্চিত করার পর দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে।

র‌্যাবের দায়িত্ব ও কর্তব্য দিন দিন আরও বাড়ছে। কারণ ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাবের সাফল্যের পাশেই রয়েছে নতুন নতুন সন্ত্রাসী তৎপরতা। যেমন, দেশের জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহিদের সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, হরকত-উল-জিহাদ এবং জয়েশ-ই মোহাম্মদ এক হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য সংগঠিত হচ্ছে। জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য ও বাংলাদেশের কিছু অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন করা। নতুন নামে জঙ্গিদের আবির্ভাব ঘটছে বলে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বা জেএমবি এখন সংঘঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে ‘জামাআতুল আরাকান’ নামে। বান্দরবান জেলার আলীকদমে দুর্গম পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে জেএমবি’র একাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গোষ্ঠীদের একত্র করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কিছু সদস্য পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান যাওয়ার চেষ্টা করার সময় পুলিশ টের পেয়ে চারজনকে গ্রেফতার করেছে। বিদেশি জঙ্গিদের লেখা ও সাক্ষাৎকার বাংলায় পড়ে উজ্জীবিত হতো এরা। তাদের কাছে এ ধরনের পত্রিকা ও পুস্তিকা পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সঙ্গে দেশীয় জঙ্গিদের সম্পর্কের বিষয় এ থেকে স্পষ্ট। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও ব্যাটলিয়নসমূহের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় র‌্যাবের নিয়মিত টহল ডিউটি রয়েছে। এই টহল আরও বিস্তৃত করার সময় এসেছে। কারণ তাদের ওপর সরকারসহ সাধারণ জনগণের আস্থা রয়েছে।

৭. জঙ্গিবাদ তৎপরতা এমনই বিপজ্জনক বিষয় যে, এই শক্তিকে নির্মূল বা অকার্যকর করার উদ্যোগে শৈথিল্যের কোনো সুযোগ নেই। এটা ঠিক যে র‌্যাবের নজরদারির ফলে জঙ্গিবাদীদের তৎপরতা অতীতের তুলনায় এখন দৃশ্যত নেই বললেই চলে। কিন্তু ভিন্নভাবে ও ভিন্নরূপে এই শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই এ ধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবল তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে। আইনের শাসন কার্যকর করার জন্য নিবেদিত প্রাণ শাসক আমাদের দরকার। এ দেশের সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সন্ত্রাস সম্পর্কে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী বর্তমান সরকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অবমাননাকর ও জঘন্য অপরাধ। একারণে তাদের ব্যক্তি অধিকারের সীমারেখা ও প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য সচেতন থাকতে হবে। জীবনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিধানের অধিকার রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের। কাউকে নৃশংস অত্যাচার ও খুন করা স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত পর্যায়। বর্তমানে এসব বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা। তারা অপরাধ দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন- এ ধরনের অভিযোগ আর নেই। এখন ‘র‌্যাব’ মানুষের নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

৮.বস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও জনসেবার জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারসহ নানা স্বীকৃতি পেয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের কর্মকর্তাগণ পেয়েছেন নানান পদক। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এজন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা। ‘র‌্যাব’ এক্ষেত্রে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করবে- এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : অধ্যাপক  এবং পরিচালক জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন