ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

তনু হত্যার বিচার : অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না

প্রকাশিত: ০৪:৫২ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৬

উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হলো। নানা শপথও উচ্চারিত হলো দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নেওয়ার। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। যেখানে থাকবে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার। থাকবে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা। বিশেষ করে সমাজের সর্বস্তরের নারীরা থাকবে নিরাপদ। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলো। অবকাঠামোগত উন্নতিসহ অনেক ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের চিন্তাচেতনায় মনমাসসিকতায় আমরা কতোটা এগিয়েছি এ প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে কুমিল্লায় কলেজ শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার একটি কালো অধ্যায়কেই তুলে ধরছে। প্রশ্ন উঠছে ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে দেশটির অভ্যুদয় সেই স্বাধীন দেশে কেন তনুরা নির্যাতনের শিকার হবে। আর কেনই বা অপরাধী এত বড় জঘন্য নিষ্ঠুর পাশবিক অপরাধের পরও থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে- এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু একটি অসচ্ছল পরিবারের মেয়ে। কিন্তু দারিদ্রতা তাকে দমাতে পারেনি। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য টিউশনি করে লেখারপড়ার খরচ জোগাতো সে। পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চায়নি। লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল সে। পড়াশোনার পাশাপাশি জড়িত ছিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও। কিন্তু হিংস্র হায়েনার নখর ছোবলে সবকিছু ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।

গত ২০ মার্চ রোববার অন্যান্য দিনের মতো টিউশনি করতে গিয়েছিলেন তনু। টিউশনি শেষে ছাত্রের বাসা থেকে বেরিয়েছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর আর সে বাড়ি ফিরেনি। অনেক রাতে বাসার পাশের একটি কালভার্টের কাছ থেকে মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন বাবা। পাশবিক নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই পৃথিবীতে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী বস্তু। আর সেই সন্তানটিকে যদি হিংস্র দানবের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?

তনুর হত্যার পর একসপ্তাহ হয়ে গেলো। কিন্তু এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে। অভিযো্গ রয়েছে, মামলার পর উল্টো পরিবারের সদস্যদেরই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে দফায় দফায় তুলে নেয়া হচ্ছে তাদের। তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সেনানিবাসের মতো একটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কি করে এ ধরনের একটি পাশবিক হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারলো সেটি ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। আর ঘটনার একসপ্তাহ পরও কেন অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেটি নিয়েও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খুব শিগগিরই অপরাধী ধরা পড়বে। এ ধরনের আশ্বাস বাণীতে আশ্বস্ত হতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তনু হত্যার প্রতিবাদে নিন্দার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে। এসবের পরও আমরা বিশ্বাস করতে চাই তনু হত্যাকারী কোনোভাবেই রেহাই পাবে না। অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে হত্যা ধর্ষণের মত অপরাধের বিচার না হলে এই সামাজিক ব্যধি থেকে নিস্তার নেই। অন্ধ হলেই কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন