ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সততাই অধিকার প্রয়োগের শর্ত

এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন | প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

'সৎ থাকলে একটা সুবিধা আছে; ভয় পাওয়ার কিছু থাকে না'- বলেছিলেন আমার স্নেহাস্পদ বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র, সজীব ওয়াজেদ জয়। ক'বছর আগে বলেছিলেন তিনি। সে প্রসঙ্গে লেখার মাঝভাগে আসছি। এর আগে একটু পেছনে যাই।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বলি। একজন অতি মানবিক সত্তা হয়ে তিনি বাংলার মানুষকে কেন 'তুমি' কিংবা 'তোমরা' সম্বোধনে থাকতে পারতেন ? এমন পর্যায়ে যেতে হলে, বস্তুত, তা অর্জন করতে হয়। তিনি বলতে পেরেছিলেন যে, তোমাদের যা কিছু আছে, শত্রুর মোকাবিলা কর। এই যে তাঁর দেশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে অধিকার নিয়ে বলার ক্ষমতা- আর কি কেও এমন করে দেখাতে পেরেছে ?

একজন শেখ মুজিবুর রহমানকে ছাপিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে বড় কোনো রাজনৈতিক সত্তার জন্ম হয় নাই। প্রশ্ন হল, কেমন করে তা অর্জিত হয়েছিল। গভীর বিশ্লেষণে গেলে, একজন শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তি সততাই ছিল তাঁর নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠ গুণ।

নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলির মধ্যে সততা, দেশপ্রেম, দক্ষতা, দূরদৃষ্টি ও চরিত্র রয়েছে। যা জাতির জনকের চরিত্রে ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় জনশ্রেণিকে বুঝতে হবে যে, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন তেজোদ্দীপ্ত উচ্চারণে থেকে বলতে পারেন, দেশ এগোচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কারণ, তিনি নিজেও সততার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সৎ থাকতে পারছেন বলেই তিনি মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্রসমূহের উদ্দেশ্যে বলতে পারেন, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যের ভাল দেখতে যাব না।

একজন শেখ হাসিনা তাই বাংলাদেশের নামধারী রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে পারেন যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য, বাঁধা হয়ে কেহ দাঁড়াবেন না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলতে চান, কোন রাজনৈতিক অপশক্তির কাছে মাথানত করতে পারব না। সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান কর্তৃক 'হ্যাঁ -না' ভোটের কৃষ্টিকে তুলে ধরে বলে দেন, গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে কী তা পড়েছিল ?

আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথাতে ফিরি। কতটা তাঁর কথায় ইনোসেন্স এবং একই সঙ্গে সত্যান্বেষী পর্যায়ের ব্যক্তিসত্তা হওয়ার শর্ত পূরণ করে তাঁকে উত্তীর্ণ করায়! একটি মাত্র বাক্য ছোঁড়ার মধ্য দিয়ে তিনি বলতে চাইলেন, তাঁর গর্ভধারিণীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জয় তাঁর কথার মধ্য দিয়ে বলছেন, আমরা কাউকে ভয় পাই না। কারণ, সৎ থাকার মধ্য দিয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে জানি ও পারি।

তবে, পুরো বাংলাদেশকে সৎ হতে হবে। অর্থাৎ, দায়িত্বশীল পদ নিয়ে আঁকড়ে থাকতে গেলে জনপ্রতিনিধিদের কিংবা আমলাদের প্রথমত সৎ হতে হবে। কাজেই বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে সকল কতিপয় ব্যক্তিবর্গ সততার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকতে পারছেন না, রাজনীতি থেকে তাঁদের বিতাড়িত করতে হবে।

সততা প্রদর্শনব্যতিত ফলত জীবনকে অনগ্রসর বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে। বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেয় না। চলার পথকে সুমসৃণ করে না। তবে এটাও ঠিক, আমাদের নামের পাশে টানা পাঁচবারের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হওয়ার তকমা নেই। কাজেই টানা প্রায় পনের বছরের কাছাকাছি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকেও আমরা কলংকমুক্ত হয়েই রাজনীতির বিছানায় থেকে মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে সচেষ্ট আছি। আইনের শাসন বলবত রয়েছে। জোর করে যা তা বলে ফেললেই তো হবে না। প্রমাণ দেখাতে হবে। যা নেই মুলত।

 

রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক পর্যায়ে সৎ ব্যক্তির আধিক্য ধরা দিলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে বাধ্য। দেশের শীর্ষ অভিভাবক হিসাবে শেখ হাসিনার বিকল্প হিসাবে কাউকে দেখা যায়নি। যাচ্ছে না। কেন তৈরি হয়নি ? কারণ, তাঁর সততাকে ডিঙিয়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক বলয়ে তেমন চরিত্র দাঁড় হতে পারেনি, পারছে না। গেল এক যুগের সমীকরণ তা ভাষ্য দেয়।

 

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির কাছে আমার জিজ্ঞাসা যে, এই যে সারাদেশের মধ্যকার যোগাযোগ খাতের যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র- সেই সেতু, ফ্লাই ওভার, মেট্রো রেল ইত্যাদি ইত্যাদি- এতদ কিছু পরিভ্রমণ করার পরে আপনাদের কি মনে হয় না যে, বঙ্গবন্ধু তনয়া বিপ্লব করতে পেরেছেন? মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে কত রকমের ভাতা প্রদান করার যে উদ্যোগ, তা দেখে কি শেখ হাসিনাকে জননেত্রী বলতে ইচ্ছে করে না? হৃদয়কে পরখ করে প্রশ্ন করুন নিজেকে। উত্তর মিলে যাবে। সে জন্যই আওয়ামী লীগের মধ্যেও একটা সাহস আছে। যে সাহসের মূল ভিত্তি হল, শেখ হাসিনা ও তাঁর সত্যিকারের পরিবারের সততা।

সততার বিকল্প নেই। সৎ সত্তায় বিভোর থেকেই রাজশাহীর জন্য লড়ে যাচ্ছি। আগামীতে বাংলাদেশের জন্য লড়তে চাই। বৃহৎ পরিসরে যদি কাজ করার সুযোগ পাই। সর্বত্র আমাদের সৎ ব্যক্তিবর্গের অনুসন্ধানে থাকতে হবে। সততার গন্তব্য কিন্তু সাফল্যে সমাপ্তি টানে ।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে, আমি যেমন খুবই ক্রীড়াপ্রেমিক। ফুটবল, ক্রিকেট, খুবই উপভোগ করি। বাংলাদেশ ফুটবল হয়তো প্রত্যাশিত সাফল্যে পৌঁছুতে পারছে না। আশা করি, সৎ ব্যক্তিবর্গ দ্বারা একদিন পরিচালিত হয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারব। ক্লাব ফুটবলে আমাদের আবাহনী, মোহামেডানের পর শেখ জামাল, শেখ রাসেল কিংবা দেশের এই মুহূর্তের শ্রেষ্ঠ দল বসুন্ধরা নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারছে। বাফুফের সহসভাপতি ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে বসুন্ধরা কিংস খুবই ভাল করছে। নিশ্চয়ই বসুন্ধুরা যোগ্য একজন ব্যক্তির কাছে তাঁদের ক্লাবের নেতৃত্ব প্রদান করেছে। খুবই ভাল করছেন তিনি।

একইভাবে যে যেভাবেই বলুন না কেন, আমাদের আজকের নাজমুল হাসান পাপন খুবই আধুনিক পর্যায়ের একজন নেতা। ক্রিকেটে তো বাংলাদেশ একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। সেটা বৈশ্বিক পর্যায়েই। আমাদের একসময়ের সাবের হোসেন চৌধুরীও ছিলেন দুর্দান্ত পর্যায়ের সংগঠক। সত্যি বলতে, সাবের হোসেন, নাজমুল হাসান পাপন কিংবা ইমরুল হাসানেরা ব্যক্তি পর্যায়ে সততার সম্বলকে পুঁজি করেই নিজেদের জাত চেনাতে পেরেছিলেন বা পারছেন।

রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক পর্যায়ে সৎ ব্যক্তির আধিক্য ধরা দিলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে বাধ্য। দেশের শীর্ষ অভিভাবক হিসাবে শেখ হাসিনার বিকল্প হিসাবে কাউকে দেখা যায়নি। যাচ্ছে না। কেন তৈরি হয়নি ? কারণ, তাঁর সততাকে ডিঙিয়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক বলয়ে তেমন চরিত্র দাঁড় হতে পারেনি, পারছে না। গেল এক যুগের সমীকরণ তা ভাষ্য দেয়।

শেখ হাসিনার যারা প্রবল প্রতিপক্ষ হিসাবে নিজেদেরকে দাবী করার অনুশীলনে আছেন, দেখুন তাঁদেরকে, একটু লক্ষ্য করে- তাদের কেহ এতিমদের অর্থ আত্মসাত করেছেন, নতুবা, ব্যক্তি বিশেষের গায়ে দুর্নীতির বরপুত্র নামক স্টিকার লেগে আছে। শত চেষ্টা করার পরেও তারেক সাহেবেরা সেই স্টিকার তুলতে পারছেন না। জাতীয় নির্বাচন এলেই তাঁদের প্রাণশক্তি বেড়ে যায় ! তখন যে তাঁদের মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়!

সততা, জনস্রোতের প্রক্রিয়াগত জোয়ার সৃষ্টে সবিশেষ অধিকার অর্জনেরও প্রধান দৃশ্যমান অস্ত্র- এমন একটি মতবাদ বাংলাদেশি এক দার্শনিকের। অধিকার নিয়ে পরিবারের অভ্যন্তরে সন্তানদের প্রতি তখনই আদেশক্রমে অনুরোধে যাওয়া যায়, যখন আমি নিজে সামাজিক নৈতিকতার শর্ত পূরণ করে চলছি।

অধিকার তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় পর্যায়ে একজন রাজনৈতিক নেতার, যখন তিনি নিজে সৎ হয়ে দেশে মানুষের অগ্রসর জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানে সংগ্রামী সত্তা হয়ে লড়তে জানেন। আমরা গর্বিত যে, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছিলাম। যিনি বলতে জানতেন রাজনৈতিক কবির মত করে যে, তোমরা আমার ভাই, তোমরা আমার বোন!

এই 'তোমরা' বলার অধিকারে কার্যত শেখ হাসিনাও পৌঁছে গেছেন। তিনি বাংলাদেশকে স্বনির্ভর, উন্নত রাষ্ট্র করার সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমার পক্ষ থেকে বলতে পারি, প্রিয় দেশবাসী, আপনারা ভাগ্যবান, এক মহীয়সী নারী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পেয়েছেন, যিনি অদম্য এক রাজনৈতিক সত্তা, সততা তাঁর অস্ত্র আর সাহসের উৎস জন্মগত ক্ষেত্র থেকে আগত। জয় বাংলা!

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন