ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ধর্ম

হিজরি নববর্ষ: বয়ে আনুক ঐক্য-সম্প্রীতি

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ২১ জুলাই ২০২৩

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় আমরা ১৪৪৫ হিজরি বর্ষে প্রবেশ করার তাওফিক লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। আরবি হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম মাস। এই মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাস আল্লাহতায়ালার নিকট অনেক সম্মানিত ও মর্যাদার একটি মাস। এ মাসে বহু ঐতিহাসিক ফজিলতপূর্ণ ঘটনা ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে।

৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন। তার শহীদ হওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আশুরার গুরুত্ব পেলেও ইসলামের ইতিহাসে এইদিনে অসংখ্য তাৎপর্যময় ঘটনা রয়েছে। এ কারণে মুসলমানরা দিনটিকে বিশেষ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে স্মরণ করে থাকেন।

মহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস হওয়ায় এ মাসে আল্লাহতায়ালার নিকট প্রতিটি মুসলমানের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে বছরজুড়ে রহমত বরকত ও কল্যাণ দ্বারা ঢেকে দেন। যদিও ইসলামের অনেক আগে থেকেই এ মাসের ১০ তারিখ অতি সম্মানিত এবং ফজিলতপূর্ণ। কেননা এ দিনে আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেন আর এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেন। হজরত নুহ (আ.)-এর জাতির লোকেরা আল্লাহর গজব মহাপ্লাবণে নিপতিত হওয়ার পর ১০ মহররম তিনি নৌকা থেকে ঈমানদারদের নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর ১০ মহররম সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেন।

হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর মহররমের এ দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেন। এ ধরণের আরো অনেক ফজিলতপূর্ণ ঘটনার সাথে মহররম মাস জড়িত। ইসলামে মহররম মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেই এ মাসে রোজা রাখা মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ।

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সংস্কৃতিতে ও মুসলমানদের জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ হিজরি সন কবে আসে কবে যায়, তা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা থাকে না। ইসলামী আরবি বর্ষপঞ্জিকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের পুণ্যময় স্মৃতি, তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের কাছে হিজরি সাল অনেক গুরুত্ব বহন করে আসছে।

যদিও মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, কোরবানিসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান যুগে তা কেবল রমজান ও ঈদের হিসাব রাখার মধ্যেই যেন সীমিত। আমাদের অধিকাংশ সন্তানরাই হয়তো আজ জানেনা হিজরি সাল কি আর আরবি মাসগুলোর নাম। আরবি মাসগুলো-মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জুমাদাল উলা (জমাদিউল আউয়াল), জুমাদাল উখরা (জমাদিউস সানি), রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হিজরি সনের শুভ সূচনা হয়। ইসলামি সন তথা হিজরি সন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় ঘটনার অবিস্মরণীয় স্মারক।

আল্লামা শিবলি নোমানি রহমতুল্লাহ আলাইহি সুপ্রসিদ্ধ আল ফারূক গ্রন্থে উল্লেখ করেন: হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনের শাবান মাসে খলিফার কাছে একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়, পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল; সনের উল্লেখ ছিল না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, পরবর্তী কোনো সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছিল?

 

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং রমজান মাসের রোজার প্রতি।’ (বুখারি) আমাদের প্রত্যাশা, হিজরি নতুন বছর বিশ্ববাসীর জন্য বয়ে আনবে, ঐক্য, সম্প্রীতি, শান্তি-সৌহাদ্র আর দূর হবে ধর্মের নামে রক্তপাত-হানাহানি।

 

অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা মুতাবিক ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু। (বুখারি ও আবু দাউদ)

বর্ষগণনার ক্ষেত্রে হিজরতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণ কী? অথচ মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তিসহ আরো একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সনগণনা শুরু করা যেত। এ প্রশ্নের উত্তর আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) এভাবে দিয়েছেন: সুহাইলি (রহ.) এ বিষয়ে রহস্য উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম সনগণনার বিষয়ে হিজরতকে প্রাধান্য দিয়েছেন সুরা তওবার ১০৮ নম্বর আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে।

সেখানে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। এই ‘প্রথম দিন’ ব্যাপক নয়। এটি রহস্যাবৃত। এটি সেই দিন, যেদিন ইসলামের বিশ্বজয়ের সূচনা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিরাপদে, নির্ভয়ে নিজ প্রভুর ইবাদত করেছেন। মসজিদে কোবার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। ফলে সনগণনার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম সেই দিনকেই বেঁচে নিয়েছেন। (ফতহুল বারি : ৭/২৬৮)

হিজরি বছরের প্রত্যেকটি মাসেরই রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। ইসলামে এ মাসের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। মুহাররম মাস শুধু কারবালার ঘটনা স্মরণ করার মাস নয় বরং মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাস ।

ইসলামের ইতিহাসে এই মাসটি এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যে স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাইতো এ মাসের ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখে ২টি রোজা রাখা উত্তম।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং রমজান মাসের রোজার প্রতি।’ (বুখারি)
আমাদের প্রত্যাশা, হিজরি নতুন বছর বিশ্ববাসীর জন্য বয়ে আনবে, ঐক্য, সম্প্রীতি, শান্তি-সৌহাদ্র আর দূর হবে ধর্মের নামে রক্তপাত-হানাহানি।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন