ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দেশের প্রকৃত সম্পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:১৯ এএম, ১৪ জুলাই ২০২৩

তাহেরা সেহেলী

একটা জীবিত প্রাণের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে খাদ্যাভাবে অভুক্তের যন্ত্রণা। এর থেকে বড় জ্বালা আর কিছু হতে পারে না। কারও বিশ্বাস না হলে নিজেই চেষ্টা করে সর্বোচ্চ অভুক্ত থেকে মিলিয়ে নিতে পারেন।

বাঙালির পরিচয় সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় তার খাবারে, এটা প্রমাণিত। যেখানেই যাই পাতে- ভাত, মাছ চাই-ই চাই। তাই দেখে অবাঙালিরা বলে, ‘বাঙালি মানেই মাছʼ। আমাকেও শুনতে হয়েছে, শুনতে ভালোও লাগে। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এই পরিচয় বর্তমানে ইতিহাস হয়ে গেছে বাংলাদেশীদের জন্য। তা এখন রূপ নিয়েছে ‘পোল্ট্রি মুরগি ভাতে বাঙালি’। দুঃখজনক এবং হাস্যকর হলেও এটাই এখন বাস্তবতা।

একটা দেশের মূল বা শিকড় অথবা ভীত হচ্ছে দেশটির শিশু-সন্তানরা। আর তাদের সুস্থভাবে শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ, সুবুদ্ধির বিকাশের জন্য মৌলিক প্রথম ও প্রধান উপাদান হচ্ছে- সুষম খাদ্য। প্রকৃতপক্ষে, পরিমিত মৌলিক সুষম খাদ্য ছোটবেলা থেকেই নিশ্চিত করতে হবে সব শিশুর সবার জন্য, যেমন- শর্করা, মাছ, ডিম, মাংস, ডাল, দুধ, শাক-সবজি, মৌসুমি ফল ইত্যাদি। এগুলোর বেশি বা কম না পরিমিত সমন্বয়েই হয় সুষম খাদ্য। মৌলিক সুষম খাদ্য হচ্ছে সেই খাবারগুলো যেগুলো খাবার আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অনিবার্য।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ত্বরিতগতিতে উন্নয়ন করে যাচ্ছে। যেমন- যাতায়াত ব্যবস্থা, কল-কারখানা, আমদানি-রপ্তানিতে। কিন্তু আমাদের প্রকৃত সম্পদ হচ্ছে, এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যদি তাদের সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে সার্বিক বিকাশ না হয় তাহলে দেশের এ উন্নয়ন ধারার হাল ধরবে কারা?

কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের কাজের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। একশ্রেণির মানুষ মস্তিষ্কের কাজ করে, অন্য শ্রেণির লোক শারীরিক শ্রম দেয়, কেউ কেউ মাঝারি ধরনের কাজের উপযোগী। এই সবাই মিলেই যেকোনো কাজ সুসম্পন্ন করে; যতই শক্তিশালী হোক না কেন কারও একার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।

সেজন্য সবারই নিয়মিতভাবে পরিমিত মৌলিক সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। কিন্তু সব বিত্তের মানুষ তা জোগাড় করতে পারছে না। যেমন- ডিমের হালি চল্লিশের উপরে যায়। এর কম, হয় কম। গরুর খাঁটি দুধ কতজন বাচ্চার জন্য তার অভিভাবক ব্যবস্থা করতে পারছে? সর্বনিম্ন দাম ৬০ টাকা কেজি প্রতি, তাও যে খাঁটি হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নাই।

মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের মাংস মানেই, পোল্ট্রি মুরগি। খাসির মাংসের কথা বলাই বাহুল্য। গরু বা মহিষের মাংসের দামের যে বহর তাতে বেশিরভাগ লোকের বছর কেটে যায় খাওয়ার অপেক্ষায়। অগণিত পরিবার ঈদেও গরুর মাংস কিনতে পারে না। শাক-সবজি পুরোনো হলে ৪০ টাকা, নতুন হলে ৮০ থেকে একশ টাকা তো হবেই। কীভাবে সম্ভব একজন মধ্যবিত্তের এ দামে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা?

আমাদের নিজেদের দেশীয় ফল ষাট থেকে একশ টাকা দিয়ে অনেক অর্থবান লোক কিনে খায় না কিন্তু বিদেশি ফল দুইশ থেকে ছয়শ টাকা সাবলীলভাবে কিনছে। যারা প্রয়োজনীয় খাবার পায় না তাদের জন্য এই বিলাসিতাও অসম্ভব। বাজারে অজস্র মাছ কিন্তু মধ্যবিত্তরা চড়া দামের কারণে একটা আস্ত মাছ কেনার সামর্থ্য রাখে না। তাদের প্রয়োজনও নাই একটা আস্ত মাছের! কেটে বিক্রি করলেই তো তারা পছন্দের মাছ প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে নিতে পারে। ‘ইলিশের’ কথা তো বলাই বাহুল্য।

 

সামাজিক মাধ্যমের সুবাদে আমরা আরও বেশি জানতে পারছি যে, অনেক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবক-সেবিকাকর্মী শিশু-সন্তানদের, এতিম, অসহায় মানুষদের খাবার জোগাড় করে দিচ্ছে নিয়মিতভাবে, যা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এ দায়িত্ব কোনো গোষ্ঠী, সংগঠন বা কারও একার নয়, এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে, ‘প্রতিটা মানুষ যেন জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে- মৌলিক সুষম খাবার পায় এর কোনো অন্যথা নয়।ʼ এটাই হবে দেশ উন্নতির প্রথম ও প্রধানতম ধাপ।

 

আবার অনেকে বাংলাদেশের জাতীয় ও বিশেষ মাছ ‘ইলিশʼ চড়া দামে ঝুড়ি ভর্তি কিনে নেয়। এটা তো চরম বৈষম্যতা। সমাজ থেকে এই বৈষম্যতা দূর করতে হবে; আমরা কি পারি না, মাছ কেঁটে যার যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু, যার যার সামর্থ্য মতো কিনতে! যখন ক্রেতারা সবাই এক হয়ে, আপত্তি জানাবো আস্ত মাছ কিনতে তখন বিক্রেতাদেরও কিছু করার থাকবে না। কিন্তু সুবিধা পাবে সব বিত্তের মানুষ। এটাই হবে চরম সৌন্দর্য, সৌহার্দ্যপূর্ণতার। একটা সময়ে এ ব্যবস্থায় ছিল কেনাকাটায়। কিন্তু বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার বাড়ছে যেভাবে ঠিক সেই হারে বাড়ছে অসচেতনতা, হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক, হচ্ছে ছন্নছড়া।

সত্যি বলতে কি, ‘ইলিশ মাছ এখন বড়লোকের মাছ, কারও জন্য স্বপ্ন আর কারও জন্য বিলাসিতাʼ। মানুষ হয়ে মানবিকতা হারানো কোন বাহাদুরী নয় বরং লজ্জার। আমাদের একটু সচেতনতা পারে অজস্র পরিবারকে নির্মল তৃপ্তি দিতে, তাতে দারুণ কর্মক্ষম হয়ে উঠতে পারে পুরো সমাজ।

আমাদের দেশের মানুষের অসচেতনতায় সৃষ্টি করছে- সন্ত্রাস, অবৈধ কাজ, অনৈতিক কর্মযজ্ঞ, দুর্নীতিবাজ মানুষ- এসব একাকী তৈরি হয় না, ঠিক তেমনি যেমন কোনো ভালো কাজ কেউ একা করতে পারে না; অনেকের সমন্বয়ে, সমর্থনে, পারস্পরিক সহায়তার ভিত্তিতে গঠিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটা বাচ্চা একই সাথে যখন শিশুশ্রম দিচ্ছে, সে তখন দেখছে তারই বয়সী অন্য বাচ্চা খেলছে, সুস্বাদু খাবার খাচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে তারমধ্যে তখন ঠিক ওই চাহিদাগুলো উপস্থিত কিন্তু সে পাচ্ছে না, সে বিষণ্ণতায় ভোগে, হতাশ হয় এবং সে বা তার মতো অনেকেই ওই একই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বুঁদ হয়ে থাকে, অনেকেই জেদ ধরে যেভাবে হোক চাই-ই-ই।

এত অল্প বয়সে মনের যে এতগুলো নেতিবাচক রূপ থেকে চলে আসে অল্প কাজে অনেক টাকা এবং কম সময়ে ধনী হওয়ার তীব্র তাড়না, জড়িয়ে যায় অবৈধ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসে। ‘দায়ী কে বা কারা- আমরা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ।ʼ মানুষের বৈশিষ্ট্য যদি হয়, ‘আকাশ মনি ও ইউক্যালিপটাস গাছের’ মতো (এই গাছগুলো মাটির রস, পুষ্টি এমনভাবে শুষে নেয় যে, আশে পাশের গাছ পরিপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাটি শুষ্ক হয়ে প্রাণহীন হয়ে যায় যা প্রকৃতির জন্য ভয়ংকর) তাহলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনোভাবেই কারোই ভালো কিছু হচ্ছে না, সবই ক্ষতি খাতে।

আগেও ছিল তবে সামাজিক মাধ্যমের সুবাদে আমরা আরও বেশি জানতে পারছি যে, অনেক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবক-সেবিকাকর্মী শিশু-সন্তানদের, এতিম, অসহায় মানুষদের খাবার জোগাড় করে দিচ্ছে নিয়মিতভাবে, যা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এই দায়িত্ব কোনো গোষ্ঠী, সংগঠন বা কারও একার নয়, এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে, ‘প্রতিটা মানুষ যেন জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে- মৌলিক সুষম খাবার পায় এর কোনো অন্যথা নয়।ʼ এটাই হবে দেশ উন্নতির প্রথম ও প্রধানতম ধাপ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও শিশুদের নিয়ে ভাবতেন কারণ ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্ম-ই মূলত দেশের প্রকৃত সম্পদʼ। যে জাতির পেটে খাবার নাই সে জাতির শিক্ষাই মেরুদণ্ড কীভাবে হবে! দৈহিক মেরুরজ্জু মজবুত, শক্তিশালী করে তারপরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জ্ঞান আরোহনে মনোনিবেশ করা যায়, বিকল্প কোনো পন্থা আছে কি জ্ঞানী-গুণীজনদের কাছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জানা নেই।

লেখক: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

আরও পড়ুন