ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর

ঢাকা-দোহা সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক

ইরিনা হক | প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ২৩ মে ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে কাতার ইকোনমিক ফোরাম-২০২৩ এ যোগ দিতে তিনদিনের সরকারি সফরে সোমবার দোহার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ২৩-২৫ মে অনুষ্ঠেয় ‘তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরাম: এ নিউ গ্লোবাল গ্রোথ স্টোরি’ শীর্ষক ফোরামে যোগ দেবেন।

কাতার ইকোনমিক ফোরাম মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর, যা বৈশ্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য নিবেদিত। বিশ্বব্যাপী চলমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকট এবং এর ফলে উদ্ভূত বিরূপ অর্থনৈতিক পরিণতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করাই এই ফোরামের মূল উদ্দেশ্য।

শেখ হাসিনা ২৩ মে তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন, দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন এবং কাতারের জ্বালানিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবি এবং সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল ফালিহর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করবেন।

২৪ মে প্রধানমন্ত্রী ফোরামে যোগ দেবেন, আমিরি দিওয়ানে কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং আওসাজ একাডেমি (একটি বিশেষায়িত স্কুল) পরিদর্শন করবেন। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এই সফর সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণ রয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করছে। কেন এই সফর নয় তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক। একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কাতারের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ফলে বলা যায়, এই সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার সফর করেন, জাতিসংঘের পঞ্চম এলডিসি সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এটি দুবার স্থগিত হওয়ার পর এবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে এটি ২০২৩ সালের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সম্মেলন স্থগিত করার মূল কারণের মধ্যে এর গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। এটি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি। এই সম্মেলনের অর্জনগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কথা তুলে ধরেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শ্রম অভিবাসন (৮০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক ও ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স), জ্বালানি সহযোগিতা (১৫ বছর মেয়াদি জি-টু-জি এলএনজি চুক্তি) এবং রোহিঙ্গাদের অব্যাহত সমর্থনসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে কাতার এবং ওমান থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় অব্যাহত রেখেছে এবং বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন টন তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করে।

কাতারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০৩২ সালে এবং ওমানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৯ সালে। কাতার বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কাতারের সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি এলএনজি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে ইউক্রেন সংকট, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং পরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

কাতার মধ্যপ্রাচ্যের একটি তেলসমৃদ্ধ দেশ। দেশটি তার অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য মূলত বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। কাতারের ৮৯.৫ শতাংশ বাসিন্দা বিদেশি নাগরিক। এর বিপরীতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রম রপ্তানিকারক দেশ। সেখানে প্রায় ৪ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন, যা কাতারের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। তেলসমৃদ্ধ দেশটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে প্রবাসী ও অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কাতার চ্যারিটি বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্কুল, এতিমখানা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে। ২০১৭ সালের জুনে বাংলাদেশ কাতারের কোম্পানি রাসগ্যাসের সঙ্গে আগামী ১৫ বছরের জন্য বছরে ২৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে কাতার থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যেহেতু বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটে ভুগছে, তাই ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কাতার বাংলাদেশের পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে বছরে আরও ১০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গত ৫ মার্চ কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশ সম্পর্কিত জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনের ফাঁকে দেশটির আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের আমির বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের অনুরোধের পর কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমি আমাদের জ্বালানিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিচ্ছি। আপনি (শেখ হাসিনা) দেশে ফেরার আগে আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করব এবং এর মধ্যে কী করতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেব। আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

বাংলাদেশ ও কাতার সম্প্রতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করেছে। কাতারের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত, এলপিজি স্টোরেজ টার্মিনাল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জরুরি এলএনজি সরবরাহের জন্য কাতারের কাছে আবেদন করেছে এবং তুলনামূলকভাবে কম দামে সরবরাহের জন্য ঋণ বাড়িয়েছে। কাতার রিফাইনারি খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। ওআইসির সদস্যপদ এবং মুসলিম পরিচয় এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মানচিত্রে নিজের জায়গা করে নিতে কঠোর পরিশ্রম করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অন্যদের মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানির অভাবে রফতানিমুখী পোশাক কারখানার জন্য বৈদেশিক অর্ডার হারাতে পারে। অন্য শিল্পেও উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে বর্তমান জ্বালানি সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে বিভিন্ন দেশ যেভাবে এর ভয়াবহ প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে তার প্রেক্ষাপটে এই সহযোগিতা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে শুধু আর্থিক সহযোগিতাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এসব দেশের সক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং উন্নত বিশ্বে কর্মরত এসব দেশের মানবসম্পদের কাজের আরও কার্যকর মূল্যায়ন ইত্যাদি। সামনে নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেন।

তবে এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আমরা জানি, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গত এক দশকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। যদিও কাতার ও বাংলাদেশ বরাবরই বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু ইদানীং এই সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে। একসময় বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্ককে শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাজার হিসেবে দেখা হতো। তবে এখন এই সম্পর্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশ পেয়েছে।

দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ একটি শক্তিশালী অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। এই সফরের সময় জ্বালানি সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ চায় কাতার আরও এলএনজি সরবরাহ করুক। বাংলাদেশ এখন ৪০ কনটেইনার বা ১.৮ থেকে ২.৫ এমটিএ মূল্যের বিদ্যুৎ আমদানি করে।

বাংলাদেশ আরও একটি এমটিএ চায়, যা ১৬-১৭ কনটেইনারের সমতুল্য। সহযোগিতার দ্বিতীয় ক্ষেত্র হচ্ছে কাতারে বসবাসরত প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশিকে সহায়তা করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করা। বাংলাদেশ আশা করে কাতার প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে আরও অনুকূল আচরণ করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীদের গ্রহণের পথও যেন উন্মুক্ত করা হয়, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আমরা জানি, বাংলাদেশ ও কাতারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ একই সুরে কথা বললেই বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা হতে পারে এবং এই সফর প্রমাণ করে যে কাতারের আমির অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছেন। এসব আলোচনার প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু বিবেচনায় মনে হয় কাতার বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ তার নিজের গুরুত্ব সঠিকভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। কাতার বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং একে ধরে রাখা, সামগ্রিক অবস্থান যা বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং এখনও এশিয়ায় তৈরি করেছে তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে, যা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য সহায়ক এবং তা হলো ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা, যেখানে ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।

বাংলাদেশ জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া বা ভারতসহ কয়েকটি দেশের জন্য বিনিয়োগের জন্য কিছু অঞ্চল উন্মুক্ত করেছে। একইভাবে কাতারের জন্য এ ধরনের একটি অঞ্চল উন্মুক্ত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ, বিশেষ করে শ্রমঘন অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ সবসময় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দক্ষ নেতৃত্ব। এসব বিষয় একত্রিত করে বাংলাদেশ বর্তমানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশের একটি বড় বাজারও রয়েছে। তাই কাতারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বিজনেস সামিটে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি কাতারের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। সুতরাং, একটি বড় অগ্রগতি আশা করা যেতে পারে।

এছাড়া কাতারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও কাতার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোকে অভিন্ন অবস্থান থেকে দেখছে। স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কাতার আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে যখন রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন হ্রাস পাচ্ছে, তখন ওআইসিভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে আসতে পারে এবং কাতার এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কাতারের কাছ থেকে নতুন সমর্থন আশা করা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া থেকে।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কাতার বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছে। কাতার তার ভৌগোলিক অবস্থান, শক্তি এবং নরম শক্তির কারণে একটি বিশেষ কূটনৈতিক মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই কাতারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ করে আরব বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আরও দ্রুত হওয়া উচিত। কারণ আশির দশকের বাংলাদেশ এখন আর নেই। এই বাংলাদেশ ভিন্ন এক বাংলাদেশ। কাতারসহ সমগ্র আরব বিশ্বের উচিত বাংলাদেশকে ভারত, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো একই চোখে দেখা। ১৯৮০-এর দশকের মতো বাংলাদেশ এখন আর শ্রমনির্ভর অর্থনীতি নয়। আর এর প্রতিফলন দেখা যায় বাংলাদেশের প্রতি কাতারের আমিরের আচরণে।

পাশাপাশি বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক পুরোনো, ১৯৭৪ সালে ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এর সূচনা হয়। চার দশকেরও বেশি সময় অতিক্রম করে এই সম্পর্ক এখন আরও শক্তিশালী কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উভয় দেশই এখন জয়-জয় পরিস্থিতি তৈরিতে কাজ করছে। তাই বাংলাদেশ ও কাতার পারস্পরিক বিশ্বাস এবং নির্ভরতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একসাথে এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাতার যেমন শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে, তেমনি কাতারের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুদৃঢ় করতেও বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। দুই দেশের মধ্যকার অংশীদারত্ব অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

আরও পড়ুন