ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

যুদ্ধাপরাধ বিচারে আরেকটি মাইলফলক

প্রকাশিত: ০৫:২৩ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এই রায় দেন। এই রায়ের মধ্যদিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারে আরো একটি মাইলফলক স্থাপিত হলো। কলঙ্কমোচনের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ওই আপিলের শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। পরে রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ তারিখ ধার্য করেন আদালত।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গঠন করা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১০টি প্রমাণিত হয়। ১০ টির মধ্যে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যার দায়ে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বাকি আটটি (২,৩, ৪,৬, ৭,৯, ১০ ও ১৪ নম্বর) অভিযোগে ১৭ জনকে নির্যাতনের দায়ে তাঁকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাসেম একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম বদল করে ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। মীর কাসেম ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওই সময় থেকে তিনি জামায়াতের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে দলটির অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। অভিযোগ আছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখঅনার নাম করে দান এনে সেই টাকা জামায়াতকে শক্তিশালী করার পেছনে ব্যয় করেন। ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এদেশীয় পরিচালক হন। এ ছাড়া তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য। ধীরে ধীরে তিনি জামায়াতের অর্থের মূল জোগানদাতায় পরিণত হন।

স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিলো একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশ আবার পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ স্রোতে। এসময় জেলে আটক যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন সামরিক শাসক জিয়া। শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেন জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে তুলে দেন শহীদের রক্তখচিত লাল-সবুজ পতাকা। কিন্তু সবদিন সমান যায় না। অবেশেষে ঘাতকের দিন শেষ হতে থাকে। জনরায় নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করেন। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের। ইতিমধ্যেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, এম কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সবশেষ মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকলো আপিলে। এর মধ্যদিয়ে জাতি একে একে কলঙ্কমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায়।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে জাতি। অপরাধ করলে যে কেউ পার পায় না এই বার্তাটিও পৌঁছে যাচ্ছে সমাজে। এরমধ্য দিয়ে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। গণতন্ত্র আরো মজবুত ভিত্তি পাবে। শোষণ, বঞ্চনাহীন অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য হোক সেই দিকে।  

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন