ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সংযমের চেতনা সমুজ্জ্বল থাকুক

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ১১:১৮ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৩

রমজান সংযমের মাস। ধারণাটাই হলো, রমজানে মুসলমানরা তাদের সব ইন্দ্রিয়ের সংযম পালন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা নিছক সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকাকেই রমজান হিসেবে পালন করি। রমজানে দিনের বেলা আমরা সবধরনের খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকি। এমনকি গোপনেও কেউ পানিও পান করি না। অথচ এই রমজানেও প্রকাশ্যে ঘুস খাই, দুর্নীতি করি, ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কাটে। রমজান বা ঈদকে সামনে রেখে ঘুসের রেট বেড়ে যায়, রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। রমজানে যারা রোজা রেখেও ঘুস খায়, চাঁদা নেয়, দুর্নীতি করে, ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম আদায় করে; তাদের রোজা আল্লাহ কবুল করবেন কিনা জানি না।

দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া না করা বেশি পুণ্যের নাকি দুর্নীতি করা বেশি পাপের; সেটাও আল্লাহ ভালো বলতে পারবেন। তবে একজন ভালো মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর সব আদেশ পালন করা। ইসলাসের পাঁচ ফরজ পালন তো আবশ্যিক। সাথে সত্য কথা বলা, দুর্নীতি না করা, মানুষের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় না করা, অন্যের ক্ষতি না করা, অন্যের বিশ্বাসে আঘাত না করা, অন্যের সম্পত্তিতে লোভ না করা, সবাই মিলে ভালো থাকা; একজন ভালো মুসলমানের বৈশিষ্ট্য।


বলছিলাম রমজানে সংযমের কথা। প্রাথমিক সংযমটা হলো খাওয়া-দাওয়ার। কিন্তু রমজান এলে বাংলাদেশের সকল আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় খাওয়ায়। চারদিকের আলোচনা শুনলে মনে হতে পারে, খাওয়া ছাড়া রমজানে আর কোনো কাজ নেই। দিনের বেলা না খেলেও ইফতার, রাতের খাবার এবং সেহরি মিলে যা খায় মানুষ; তা অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। বিশেষ কিছু খাবার আছে, যা শুধু রমজান এলেই খাওয়া হয়। রমজান এলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। ফলে খাদ্রদ্রব্য কেনার পেছনে খরচ বাড়ে। তাই সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে সংযমের মাস রমজান প্রবল চাপ হয়ে আসে।


সংযমের মাস রমজানে অপচয় হয় অনেক বেশি। সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে এবার প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ইফতার আয়োজন বাতিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো অনেকেই ইফতার পার্টি বাতিল করেছেন। তারপরও অনেক ইফতার পার্টি হচ্ছে প্রতিদিনই। বড় বড় হোটেলে বা ইফতার পার্টিতে ইফতারের নামে যে অপচয় হয়, তা রমজানের সংযমের ধারণার সাথে সম্পূর্ণ বেমানান। ৫০ আইটেমের ইফতারের সাথে কমপ্লিট ডিনার। দুয়েকবার এমন ইফতারে গিয়ে দেখেছি, আমি ৪/৫ আইটেমের ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ইফতার শেষে বাকি আয়োজন নষ্ট হয়। অথচ প্রতিদিন কত মানুষকে স্রেফ পানি বা একটু ছোলা দিয়ে ইফতার সারতে হয়। ইফতার পার্টির সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে সেহরি পার্টি। পুরান ঢাকার ও গুলশানের কিছু রেস্টুরেন্টে ভোর রাতে আসন পাওয়া যায় না। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সংযমের কথা বলেছেন এবং মেনে চলেছেন। কিন্তু তার কথা মানি না।


রমজান মাস মানেই মানুষের ভোগান্তির মাস। প্রতিদিন ইফতারের আগে আগে রাস্তাঘাট স্থবির হয়ে যায়। অনেক মানুষকে রাস্তায় ইফতার সারতে হয়। আর কদিন পর শপিংমল এলাকায় মানুষের ঢল নামবে। একটা নতুন জামা না পেলে ঈদের আনন্দই পুরো হয় না আমাদের। কিন্তু আমার বাসার সহকারী বা তার মেয়েটি নতুন জামা পেলো কিনা, সেটা দেখার সময় থাকে না আমাদের। ইসলাম কিন্তু বলে, ধনী-গরীবে ভেদাভেদ না রাখতে, সবাই মিলে ভালো থাকতে, সবাইকে ভালো রাখতে।


ঈদের আগে আগে বাড়ি ফেরা নিয়ে যে হুজ্জতটা হয়, তা অবর্ণনীয়। তারপরও প্রিয়জনের সাথে ঈদ করার আনন্দে আমরা ভুলে যাই পথের সব কষ্ট। চাইলেই কিন্তু সরকার একটু আগে থেকে সতর্ক থাকলে, রাস্তাঘাট মেরামত করলে, বাড়তি গাড়ির ব্যবস্থা করলে বাড়ি ফেরাটা আনন্দময় হতে পারে, অন্তত ভোগান্তি কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি, এবারও বাড়ি ফিরতে মানুষের ভোগান্তি হবে। তখন সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা ঘুরে ঘুরে নানা আশ্বাসের কথা শোনাবেন, আগামীবার ভোগান্তি হবে না বলে আশ্বস্ত করবেন। কিন্তু এবার ভোগান্তি কমাতে হলে আরো আগে থেকেই কাজ করা উচিত ছিল। অন্তত এখনও যদি জরুরি কিছু করা হয়, তাহলেও ভোগান্তি কিছুটা কমানো সম্ভব। রেলের টিকেট নিয়ে এবার কী হাহাকার হবে, সেটা ভাবতেই আমার ভয় লাগছে।
সব মিলে সংযমের রমজান আর আনন্দের ঈদ আমাদের জন্য বয়ে আনে খরচের বোঝা আর ভোগান্তি। আমরা চাই রমজানটা যেন সত্যি সত্যি সংযমের হয়, ঈদটা যেন আনন্দের হয়।

২ এপ্রিল, ২০২৩
লেখক: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন