ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সার্থক করতে হবে শহীদের আত্মদানকে

প্রকাশিত: ০৫:১৫ এএম, ০১ মার্চ ২০১৬

শুরু হলো স্বাধীনতার মাস মার্চ। এই মাসেই প্রতিরোধ সংগ্রামের ডাক এসেছিল পাকিস্তানি জান্তাদের বিরুদ্ধে। গোটা বাংলা জ্বলে উঠেছিল। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একাত্তরের মার্চ ছিল উত্তাল। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দীর্ঘ আকাঙ্খিত মুক্তির ডাক এসেছিল। এই মার্চেই তাই বাঙালি নতুন করে শপথ নেয়। শানিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে।

মূলত দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মার্চ মাসেই শুরু হয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে প্রতিরোধ সংগ্রাম। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে মানুষ হত্যার এক বিভীষিকাময় মিশনে নামে পাকসেনারা। নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয় ঢাকাকে। রাজারবাগে পুলিশ ক্যাম্পে চালানো হয় বর্বর হত্যাকাণ্ড।

এর আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রতিরোধ সংগ্রামের ডাক দেন। ‘যার হাতে যা আছে’ তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে তার ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল দিকনির্দেশনামূলক। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বলে তিনি স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। এরপর ২৫ মার্চের কাল রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে তিনি স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। তার অবর্তমানে তারই নামে সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম আর ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

স্বাধীনতার লাভের ৪৫ বছরে অর্জন যেমন আছে তেমনি আছে অপূর্ণতাও। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ হচ্ছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। শিক্ষা, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যখাতেও হয়েছে প্রভূত উন্নতি। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। অনেকের দণ্ডও কার্যকর হয়েছে।  তবে এখনো অনেক অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে। দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে অনেক মানুষ। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও এখনো সারাদেশে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বেকারত্ব, যানজট, পরিবেশদূষণ, নদীদখলের মতো সমস্যা রয়েই যাচ্ছে।  ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। নগরায়ণের কারণে মানুষজন শহরমুখি। কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। দুর্নীতি রোধ করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নতি ঘটেনি। সন্দেহ-অবিশ্বাসের কারণে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একমত হতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে জঙ্গিবাদের সমস্যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। সামাজিক অসহিষ্ণুতা, অবক্ষয়, কুসংস্কার দূর হচ্ছে না। লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, শিশুহত্যার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের মরণ থাবা বসাচ্ছে। এই অবস্থায় একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, দুর্নীতি ও শোষণ-বঞ্চনাহীন দারিদ্রমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে হবে চেতনাদীপ্ত মার্চে। সার্থক করতে হবে শহীদের আত্মদানকে।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন