ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দাম্পত্য সম্পর্ক হোক সম্মানের

প্রকাশিত: ০৩:৫১ এএম, ০১ মার্চ ২০১৬

জীবনের রং ছুটে গেছে সেই কবে। আজ আর মনেই পড়ে না। সাদাকালোর পৃথিবীতে নীরা ছুটে চলেছে কেবলই। কিসের আশায়? জানে না। নির্যাতনের করাল গ্রাসে নীরা নিথর। কাছের মানুষ আজ অচেনা অপরিচিত বহুদরের। এ দ্বন্দ্বের দোলাচলেই কেটে যাচ্ছে হাজারো দম্পতির জীবন। নির্যাতন যেন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কখনো মানসিক আবার কখনো তা শারীরিক। আর তখনই প্রশ্ন জাগে ভালোবাসা তাহলে কোথায়?

নীরার বয়স তখন ২২। জীবনের রংময়তায় প্রজাপতির পাখায় ভর করে প্রেম এসে উঁকি দেয় জীবনে। এক রকম বাবা-মায়ের অমতেই বিয়ে করেছিল রাহুলকে। সংসারের পথ পরিক্রমায় দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১৮টি বছর। নীরার দুই সন্তান, ছেলে নীড় এবার কলেজে পা দিয়েছে। আর মেয়ে তুলতুল ক্লাস সেভেনে। সাজানো সংসারে সবকিছুই যেন বেশি বেশি আছে। শুধু কোথায় যেন নীরার প্রতি রাতুলের ভালোবাসায় ঘাটতি অনুভব করে চল্লিশোর্ধ নীরা।  

স্বাবলম্বী নীরা চেষ্টা করে নিজের চাকরি সন্তান সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। এবং রাতুলের আচরণকে নিজের ভাবনার ভুল বলে ভাবতে। কিন্তু না। আজকাল প্রায়ই রাতুল খুব রুঢ় ব্যবহার করে। এমনকি সেদিন ছেলেমেয়ের সামনেই চিৎকার করে উঠল নীরার সাথে। লজ্জা অপমানে নীরা চোখ তুলে তাকাতে পারেনি সন্তানদের দিকে। নীড় তুলতুলও যেন ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব। ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহুবার ঝগড়া হয়েছে। কটু কথা শুনিয়েছে রাতুল। দুএকবার যে গায়ে হাত তুলেনি তাও নয়। তারপরেও নীরবে সয়ে গেছে নীরা সব। কারণ নীরার জীবন জগৎ সব জুড়েই রাতুল। আর নীরা বিশ্বাস করে রাতুলের ভালোবাসা শুধু নীরার জন্য। কিন্তু গত রাতের পর নীরার পৃথিবী যেন বদলে গেছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রাতুল অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করার এক পর্যায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিল নীরাকে নাকি সে অনেক সহ্য করেছে আর সহ্য করতে পারবে না। রাতুলের সংসারে থাকতে হলে নীরাকে বোবা হয়ে থাকতে হবে। কোনো প্রশ্ন, প্রতিবাদ, কথা বলা চলবে না। আর যদি নীরা তা না মানে তবে এ সংসারে তার আর প্রয়োজন নেই। কতো সহজে কথাগুলো বলে ফেলে একজন পুরুষ। অথচ ১৮ বছর তিলতিল করে শ্রম নিষ্ঠা ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা এ সংসার নাকি নীরার নয়। শরীরের ক্ষত একদিন মিলিয়ে যায় কিন্তু মনের?

গবেষণায় দেখা যায় বিশ্বব্যাপি প্রতি তিনজনে একজন নারী তার জীবনে সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন নির্যাতের শিকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০০১ অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ ভাগ বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর হাতে নিগৃহীত হন। এর বাইরেও রয়েছে বাল্যবিবাহ, অসম বিবাহ, যৌতুকের কারণে হামলা মামলা, হত্যা, নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারী পুরুষ বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনা, রাষ্ট্রের, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য, অসম আচরণ ইত্যাদি। পৃথিবীর সর্বত্রই বিভিন্ন মাত্রার নারী নির্যিাতন রন্ধ্রে রন্ধ্রে নারীর প্রতি অবিচার অনাচার, শোষণ ও বঞ্চনা। আর এর প্রধানতম কারণ পুরুষতান্ত্রিকতার একচ্ছত্র আধিপত্য। শিক্ষা- অশিক্ষা, জ্ঞান- অজ্ঞানতা, সংস্কার- কুসংস্কার কোনোকিছুই যেন নারীকে হেয় করতে পিছপা নয়।  

দৃশ্যমান সহিসংতার পরিসংখ্যান চিত্র যদিওবা পাওয়া যায় কিন্তু অদৃশ্য সহিংসতা? প্রতিনিয়ত যে নারীর মনের ওপর জোরজুলুম, সহিংস আচরণ, তার পরিসংখ্যানওতো অদৃশ্যই বটে। অথচ নারীর মনের এ ক্ষত দুমড়ে মুচড়ে দেয় নারীর অস্তিত্ব। এ সহিংসতার রোধে সোচ্চার হতে হবে প্রথমত নারীকে। জাগাতে হবে কণ্ঠ আর সহযাত্রী হিসেবে চাই প্রকৃত মানুষদের। যখনই একজন নারী মানসিকভাবে নির্যাতিত বিপর্যস্ত বোধ করবেন, চুপ করে না থেকে বিষয়টি যে মেনে নেবার নয় তা জানিয়ে দিন। যদি ঐ মুহূর্তে তা সম্ভব না হয় তবে পরবর্তীসময়ে কোনো ভালো মুহূর্তে অবশ্যই স্পষ্ট ও জোরালোভাবে বলুন যে এ ধরনের আচরণ আপনি মেনে নিবেন না।

এমন কোনো কাছের মানুষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন অথবা তাকে বলুন যিনি আপনার বিশ্বাসভাজন, দায়িত্ববান বন্ধু। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে। নিজেকে হালকা লাগবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস জোরালো করুন। স্বনির্ভরতা নারী মুক্তি ও সকল সহিংসতার উপযুক্ত জবাব হতে পারে। পাশাপাশি আপনার পুরুষ সঙ্গীটি যে বহুক্ষেত্রেই আপনার ওপর নির্ভরশীল তা মার্জিতভাবে তুলে ধরুন। ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার প্রতিনিয়ত যত্ন নিন। নিজের স্বতন্দ্র ব্যক্তিত্বকে অমায়িকভাবে আপনার কাজ কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ করুন। সম্পর্ক যতোই ভালোবাসার হোক না কেন নিজের প্রতি ভালোবাসা যেন হারিয়ে না যায়। সবসময় সবকিছুতে আপস করার বা মেনে নেয়ার মতো মনোভাব দেখাবেন না। মেনে নিতে গিয়ে নিজেরই অজান্তে কখন যে মনে নিয়ে মনকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলবেন তার হদিস থাকবে না।

কখনোই কোনো রকম নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিবেন না। তা হোক মৌখিক, শারীরিক বা মানসিক। মনে রাখবেন, আজকের সামান্য কটু কথা আগামীতে আপনার মৃত্যর কারণও হতে পারে। সর্বোপরি মানসিক আঘাত পুষে রাখার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হন, অন্যের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন জীবনকে সুন্দর করার জন্য সম্পর্ক। আর সম্পর্ককে সুন্দর করার জন্য চাই সুন্দর মন, জীবন নয়। জীবনকে ভালোবাসুন, সকল প্রকার সহিসংতাকে ‘না’ বলুন। নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। নারী মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করুক।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন