ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আমার বইমেলা

কেনা পড়া উপহারে বই থাকুক সবার ঘরে

রফিক আহমদ খান | প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আমি মূলত প্রবাসী। গত ১৫ বছর নিয়মিত প্রবাস জীবনযাপন করেছি। এরপর থেকে দেশে-বিদেশে মিলেই আছি। প্রবাসে যাওয়ার আগে ঢাকায় অমর একুশে বইমেলায় যাওয়া হয়নি কখনো। তখন চট্টগ্রামে বইমেলা হতো মুসলিম হলের সামনে। কখনো আবার লাল দিঘির মাঠে বা ডিসি হিলে। ছোট ছোট বইমেলা ছিল সেগুলো।

২০২০ সালে প্রথম আমি ঢাকায় অমর একুশে বইমেলায় যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করি। বলতে পারেন, বইমেলায় যাওয়া আবার সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো? আমি বলছি হ্যাঁ, কারণ- এর আগে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলার খবর, বইমেলার ওপর ফিচার, বইমেলা নিয়ে লেখক-পাঠকদের অনুভূতি কেবল খবরের কাগজে পড়েছি।

২০২০ সালে ঢাকার বইমেলায় যাওয়া সুযোগের সাথে প্রাপ্তি যোগ হয়েছিল আমার প্রথম বই প্রকাশের আনন্দ। প্রবাস থেকে লেখা জাগো নিউজ, দৈনিক প্রথম আলো ও বিডিনিউজে প্রকাশিত লেখাগুলো মলাটবন্দি করে ‘প্রবাসের ব্যালকনি’ নামের বইমেলায় এনেছিল বলাকা প্রকাশন।

ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও আগের চেয়ে বড় বইমেলা হচ্ছে এখন। দুই বইমেলায়ই মনের আনন্দে সময় কাটিয়েছি প্রথমবার বড় বইমেলায় যাওয়া ও প্রথম বই প্রকাশের মহা-আনন্দ উৎফুল্ল হৃদয়ে। তবে বইমেলা শেষে যেটা বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো এই দেশে আসলে পাঠকসংখ্যা খুবই কম। এতো জনসংখ্যার দেশ! অথচ ভালো ভালো লেখকদের বইও বেচাকেনা হয় কম। মেলায় যে পরিমাণ মানুষের সমাগম হয় সে অনুপাতে বেচাকেনা যা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি হওয়া দরকার। যদিও যা বেচাকেনা হয় তাতে আমাদের দেশের প্রকাশক বা স্টল মালিকরা সন্তুষ্ট হন হয়তো।

প্রবাসে মালয়েশিয়ায় তাদের বইমেলায় দেখেছি, মেলায় আগত ছোট-বড় সবার হাতে বইয়ের প্যাকেট। দুই হাতভর্তি বইয়ের প্যাকেট। খালি হাতে সেখানকার মেলায় পাঠক ঘোরাঘুরি করেন না। কেবল সময় কাটানোর জন্য তারা বইমেলায় যান না। বিষয়টা দেখে ভীষণ ভালো লাগে। ওখানে মেলায় নারী-পুরুষের সংখ্যা সমান সমান। বড়দের চেয়ে শিশু-কিশোরের সংখ্যাও কম নয়। ও দেশের কথা এখন থাক। স্বদেশের বইমেলার কথায় আসি।

২০২০ সালের বইমেলার পরপরই চলে এলো মহামারি করোনাকাল। এই সময়ের মানুষের জীবনের এক দুঃস্বপ্নের দুটো বছর পেরিয়ে গেছে স্তব্ধতায়, নীরবতায়, মেলাহীন, খেলাহীন! মহামারির পর ২০২৩ এ আবারও জমকালো অমর একুশে বইমেলা ফিরেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

এদিকে চট্টগ্রামেও জমজমাট বইমেলা হচ্ছে এবার। ঢাকার মেলায় ২ তারিখেই গিয়েছি একবার, আবার যাব দু-একদিনের মধ্যে। এবারও বই এসেছে আমার। মালয়েশিয়া ভ্রমণকাহিনি নিয়ে লেখা বইটির নাম ‘মালায়ুর দেশে’। নিজের বই থাকলে বইমেলার উৎসবে একটা আলাদা প্রাপ্তিযোগ হয়। ভীষণ আনন্দে সময়গুলো কাটছে। যদিও বইটি মেলায় আসতে একটু দেরিই হয়েছে। ১৯ তারিখ বইটি এলো। অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে বইমেলায় চলে এসেছে এজন্য প্রকাশককে ধন্যবাদ দিয়েছি। বইমেলা ছাড়াও নানাভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। পরিচিতজনদের মধ্যে আগ্রহী পাঠক যাঁরা ব্যস্ততার কারণে মেলায় গিয়ে বই কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না, তারা ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে বই সংগ্রহ করছেন। এটা ভালো লাগে।

বই বিক্রি করে লেখক কখনো তার মেধা ও সময়ের মূল্য পান না, পাবেনও না। তারপরও লেখালেখি যাঁরা করেন, তাঁরা অধিকাংশ এই নেশায় আসক্ত হয়ে বুঁদ হয়ে থাকেন বলে লেখেন, বইও করেন। সেই বই একজন পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারলেই সার্থকতা আসে। মেলা বা মেলার বাইরেও বই বিক্রি করে বই পাঠকের পাঠ-টেবিলে পৌঁছানো দরকার; প্রকাশকের গুদামঘরে বই ঘুণপোকায় না কাটুক। প্রকাশক-লেখক-পাঠকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বইয়ের ক্রেতা বাড়ুক, পাঠক বাড়ুক।

ঢাকা বইমেলায় সবচেয়ে ভালো লেগেছে স্টলগুলো দেখে। অনেক প্রকাশনা সংস্থা অত্যন্ত চমৎকার ও নান্দনিকভাবে তাদের স্টল সাজিয়েছে। এসব প্রকাশককে ধন্যবাদ জানাই, যাঁরা তাদের স্টল শৈল্পিক কারুকাজে সাজিয়েছেন। বইমেলা মূলত সৃজনশীল ও মননশীল মানুষের মেলা। বইমেলার স্টলগুলো এমন মনোমুগ্ধকর হওয়ারই কথা। তবে মাঠে ধুলাবালি যেন একেবারে না থাকে সেরকম ব্যবস্থা করা প্রয়োজন আগামীতে।

মেলায় মাঝে মাঝে বসার সিট করে দিলে ভালো হতো। ছোটরা অনেক সময় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বসতে চায়। এ সময় অভিভাবক বেকায়দায় পড়ে যান হঠাৎ। নারীদেরও বসার প্রয়োজন হয়। লেকের পাড়ে বসা যায়, জানি। সেটা ছাড়াও ভেতরে মাঝে মাঝে আরও অস্থায়ী বেঞ্চ করে দেওয়া যায়। দীর্ঘ সময় মেলায় থাকলে ঘুরে-বসে সময় ভালো কাটবে। ঢাকা বইমেলায় এত এত স্টল! আহা! ডানে-বামে স্টল। স্টলে স্টলে সাজানো নানা বই। নতুন নতুন বই৷ সদ্য প্রকাশিত বই। নতুন নতুন বই, অসংখ্য লেখকের বই, নানা ধরনের বই, ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনীর ভিন্ন ভিন্ন বাঁধাই, আহা! বড় রোমাঞ্চকর ব্যাপার- অসংখ্য নতুন বইয়ের ভিড়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলা।

বইমেলায় সময় গড়িয়ে যায় গড় গড় করে, তবুও নতুন বই দেখার সাধ মেটে না। তাই তো মাসব্যাপী বইমেলায় পুনঃপুন যেতে হয়। পকেটের আর্থিক সীমার মধ্যে কোন বই ফেলে কোন বইগুলো কিনি এই এক মধুর দ্বন্দ্ব। এত এত পছন্দের বই। কত শত বই কিনতে ইচ্ছে করে! সব তো আর কেনা যায় না। কিছু কিছু কেনা হয়। বাকিগুলো কেনার লোভ সংবরণ করতে হয়।

ঢাকা বইমেলার মতো চট্টগ্রামের বইমেলার স্টলগুলোও নান্দনিকভাবে সাজানো দরকার। স্টলগুলো চমৎকারভাবে সাজানো হলে দর্শনাথী বাড়বেই ৷তাতে বইয়ের ক্রেতাও বাড়বে বলা যায়। ঢাকার প্রকাশনা সংস্থা যে কয়টি চট্টগ্রামে স্টল দিয়েছে সেগুলোও যেনতেন ভাবে স্টল সাজিয়ে। নান্দনিকতা নেই তেমন। অনেকেই বলতে পারেন, সুন্দর স্টল দিয়ে কী হবে? ভালো বই থাকলেই হলো! আসলে সুন্দর স্টল মেলার সৌন্দর্য বাড়ায়। মননশীল মানুষ তো সুন্দরের পূজারী। যেদিকে সুন্দর সেদিকে মানুষ আকৃষ্ট হবেই।

সবশেষে যেটা বলছি, সেটা বইমেলায় আগত পাঠকদের উদ্দেশ্যে- আসুন, আমরা বইমেলায় কেবল দর্শনার্থী না হয়ে পাঠক হই। পাঠক হলে বই কিনতে হবে, বই পড়তে হবে, বই উপহার দিতে হবে। ভালো বই পাঠেই আলো আসে, ভালো বইয়ে জ্ঞান অর্জিত হয়। পৃথিবীর তাবৎ অভিজ্ঞতা বইয়ের পাতায় পাতায় লেখা। তাই আসুন বই কিনি উদার মনে। বই কিনলে গরিব হয়ে যাব না। বরং মনের দিক দিয়ে ধনী হবো- সমৃদ্ধ হবো। জানায়, জ্ঞানে বড় হবো।

লেখকের কাছ থেকে তার নিজের বই উপহার চাইব না। পারলে কিনে নেব। তাহলেই লেখক-পাঠকদের উৎসবের মাসে একজন লেখক নিরুৎসাহী হবেন না। ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানাই, লেখক-পাঠকদের।

লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও ভ্রমণ-লেখক।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

আরও পড়ুন