ইউপি নির্বাচনে জনপ্রত্যাশা পূরণ হোক
প্রথম বারের মতো দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২২ মার্চ। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ছয় ধাপের এই নির্বাচনে প্রথম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নির্বাচন পেয়েছে নতুন মাত্রা। সেইসঙ্গে নতুন নতুন অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন কতোটা অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ হয় এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সবার সম্মিলিত দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারবে নির্বাচন কমিশন এটিই সকলের প্রত্যাশা।
দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা মত থাকলেও আমাদের দেশে কোনো নির্বাচনই যে দলীয় প্রভাবের বাইরে থাকে না সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এবার সরাসরি দলীয় ভাবে নির্বাচন হওয়ায় নতুন কিছু বিষয়ও সামনে চলে এসেছে। এতে দলীয়ভাবে নির্বাচনের যে মূল উদ্দেশ্য জনগণের ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা- সেটি কতোটা বাস্তবায়িত হয় তাই এখন দেখার বিষয়। ২২ মার্চের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ৭৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সবকটিতে প্রার্থী দিয়েছে। অপরদিকে বিএনপি ৭০টিতে কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। অন্যান্য দলও প্রার্থী দিয়েছে খুব কম ইউনিয়নে। এ অবস্থায় ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
দেখা যাচ্ছে দলভিত্তিক নির্বাচন হওয়ায় প্রধান দুই বড় দলের প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নকেই বিজয়ী ধরে নিচ্ছে মনোনয়ন পাওয়া অনেক প্রার্থী। এতেও একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে অন্যদলের প্রার্থীদের মধ্যে। এই চাপ ভোটারদের মধ্যেও যে পড়বে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া অনেক ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হলেও বড় বড় দলগুলো সেটিও মানছেনা অনেক ক্ষেত্রে। অভিযোগ উঠেছে মনোনয়ন বাণিজ্যেরও।
এতদিন সামাজিকভাবে যাদের ভাল ইমেজ রয়েছে এমন প্রার্থীদেরও নির্বাচনে জয়লাভের একটি সুযোগ ছিল। এখন দলীয় ডামাডোলে তারাও হারিয়ে যাচ্ছে। এতে যোগ্যপ্রার্থীদের নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা কমে আসবে। যদি দলগুলো মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্যদের বেছে নেয় তবেই এর একটি সুরাহা হতে পারে।
মনে রাখা প্রয়োজন, যে কোনো পরিবর্তন একটি ইতিবাচক লক্ষ্যকে সামনে রেখেই করা হয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনও জনসাধারণের ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ জন্য নির্বাচনটি অবশ্যই হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে দায়িতত্বশীলতার পরিচয় দেবেন-এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
এইচআর/পিআর