এই অপতৎপরতা বন্ধ করতেই হবে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গোটা জাতি যখন স্মরণ করছে ভাষা-শহীদদের, দেশের সব মানুষের পথ যখন এসে মিশেছে শহীদ মিনারে, ঠিক সেই সময়ে পঞ্চগড়ে অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতা যে থেমে নেই এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে সেটি আবার প্রমাণ হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কি চলতেই থাকবে, নাকি এর কোনো প্রতিকার আছে?
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার করতোয়া সেতুর পশ্চিম পাশের মঠ সন্তগৌরীয় এর পুরোহিত মহারাজ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যার ঘটনাটি ঘটে গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে। সকালে ওই মঠের পুরোহিতসহ তিন সাধু পূজা আর্চনা করছিল। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে চাপাতি দিয়ে জবাই করে তারা। এ সময় গোপাল চন্দ্র পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তার পায়ে এবং হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। আরেক পুরোহিতের উপর ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতেই যে একের পর এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকজনদের ওপর হামলা করা হচ্ছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকার হোসেনি দালান, বগুড়ার শিয়া মসজিদ, রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া মসজিদ, চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর একটি মসজিদের সাম্প্রতিক হামলাগুলো একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কান্তজিউর মন্দিরের সামনে আগত পুণ্যার্থীদের ওপর বোমা হামলা, পাবনার ঈশ্বরদীতে একজন ধর্মযাজককে গলাকেটে হত্যা করা সম্প্রদাযিক উস্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়।
সর্বশেষ পঞ্চগড়ের হত্যাকাণ্ডটিও চালানো হয়েছে একই কায়দায়। মোটরসাইকেলে তিন আরোহী এসে মাত্র তিন থেকে ৪ মিনিটের অপারেশন চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে বিদেশি নাগরিক হত্যা, লেখক-প্রকাশক-ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটলেও কোনো কিছুর কিনারা হচ্ছে না। একেকটি ঘটনার পর আইএসসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়। পঞ্চগড়ের ঘটনায়ও আইএসের পক্ষে দায় স্বীকার করা হয়েছে।
চারটি দেশের ২৮টি জঙ্গি সংগঠন একজোট হয়ে বড় আকারের হামলার পরিকল্পনা করছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এই জোটে আছে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী, হুজি, জামা`আতুল মুজাহিদীনসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত অনেক জঙ্গি সংগঠন। তার আলামতও পাওয়া গেল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের মধ্যদিয়ে।
সরকার জঙ্গি ইস্যুতে জিরো টলারেন্স দেখালেও জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এতে বিশেষ করে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব নাগরিকদের সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে হবে যাতে এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা শুরুতেই নস্যাৎ করে দেওয়া যায়। আর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তো কোনো বিকল্পই নেই। এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
এইচআর/পিআর