ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অমর একুশে মুসলিম বইমেলা!!

প্রকাশিত: ০৩:৪৫ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলা একাডেমির বইমেলায় `ইসলাম বিতর্ক` নামে একটি বইয়ে ইসলাম ধর্ম ও নবী মুহাম্মদকে (সঃ) নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের অভিযোগে এর প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বইমেলায় তার স্টলটিও পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জানিয়েছেন বইটিতে ইসলামের নবী সম্পর্কে কুৎসিত ও জঘন্য কথাবার্তা রয়েছে যার কারণে বইমেলা চালিয়ে যাওয়াটাই হুমকির মুখে পড়তো। তিনি যদি বিশ্বাসই করেন বইটিতে অমন কিছু উপাদান রয়েছে তাহলে নিজেই প্রকাশককে অনুরোধ করতে পারতেন বইটি আপাতত মেলা থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু আমরা দেখেছি কিছু ধর্মান্ধ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে বাংলা একাডেমিকে প্রভাবিত করেছে।  

একজন লেখক ও প্রকাশককে কিছু মৌলবাদি অন্ধ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে শুধু আটকই নয় তাকে রিমান্ডেও নিতে হল। প্রকাশক যদি বইটি প্রত্যাহার না করতেন তাহলে বাংলা একাডেমি বিশেষজ্ঞ দিয়ে বইটি বিশ্লেষণ করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করতে পারতো। যদিও আমি যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। যার যা ইচ্ছে লিখবে, মানুষ ইচ্ছে হলে পড়বে ইচ্ছে না হলে পড়বে না। কারো ইচ্ছে হলে ওই বইয়ের প্রতিউত্তর তৈরি করে আরেকটি বই লিখবে। অর্থাৎ বইয়ের জবাব হবে বই। মানুষ তখন তুলনা করে ভালোমন্দ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখলাম পুলিশ দিয়ে স্টলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আমরা যদি একটু পেছন ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে লেখক, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০১৩ সালে বইমেলায় আগুন দেওয়া হয়। গত বছর  ধর্মান্ধদের আবদারে বাংলা একাডেমি রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেয়। মেলা ভাঙ্গার দুদিন আগে বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়। এরপর অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। আরেক প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আরো কয়েকজন প্রকাশককে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। যে হারে লেখক প্রকাশক হত্যা করা হচ্ছে আর প্রকাশনা সংস্থার স্টল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে তাতে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আর লেখক খুঁজে পাওয়া যাবে না, লেখক জন্ম নিলেও প্রকাশক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মৌলবাদিরা একের পর এক এতগুলো ঘটনা ঘটনানোর পর একবারও বাংলা একাডেমি কোনো প্রতিবাদ করেনি। উল্টো একাডেমির মহাপরিচালক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বই প্রকাশ করা যাবে না, লেখা যাবে না। আমি নিশ্চিত তার ওই ঘোষণার পরই মৌলবাদিরা আরো উস্কানি পেয়েছে।

বাংলা একাডেমির যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সর্বশক্তি নিয়োগ করার কথা সেখানে তারা মৌলবাদিদের পক্ষেই অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা প্রমাণ করেছে অমর একুশের ভাষা শহীদদের চেতনাস্নাত বাঙালির সর্বজনীন বই মেলাকে ধীরে ধীরে মুসলিম বই মেলায় পরিণত করে চলেছে। বাংলা একাডেমির কী এতটুকু জ্ঞান হয়নি লেখক প্রকাশককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া মানে লেখক ও প্রকাশকের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে দেয়া? আমার আশঙ্কা  যেভাবে মৌলবাদিদের কাছে আমরা সবাই হার মেনে চলেছি, আগামী দুচার বছরের মধ্যে সত্যি সত্যি একুশে বইমেলা একটি মুসলিম বই মেলায় রুপ নিতে পারে।

তাই বলছি একুশের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সকল লেখক-প্রকাশক ও মুক্তচিন্তার মানুষকে এখনই এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে সব প্রকাশক বাংলা একাডেমিকে জানিয়ে দিতে পারে তারা মেলায় কোনো স্টল নিবে না। যোহেতু রাষ্ট্রযন্ত্র বা সরকার মুক্তমনাদের প্রতি এখন পর্যন্ত অবস্থান নিতে পারেনি তাই লেখক প্রকাশকদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি কঠোর ভূমিকা নিতে না পারেন তাহলে একদিকে চাপাতির কোপ আরেকদিকে রিমান্ডে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন।

pintu

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন