ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বঞ্চিত ন্যাশনালিস্ট পার্টি- বিএনপি

প্রকাশিত: ০৪:২২ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রায় দেড় বছর আগে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি হয়েছিল। পরে ওই কমিটির বিভিন্ন পদে ১৫৩ জনকে অনুমোদন দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সময় যারা মন মতো পদ পাননি, বা যারা কমিটিতেই ঠাঁই পাননি, তারা কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ দেখান।  সে সময় দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরসহ কয়েকজনকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে। তাদের দাবি অছাত্র, খুনি, মাদক ব্যবসায়ী ও আদুভাইদের নিয়ে গঠিত কমিটি বাতিল করতে হবে। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গিয়ে দফায় দফায় ছাত্রদল কার্যালয়ে তালা লাগানোর পাশাপাশি বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে। এমনকি বিএনপি কার্যালয়ের গেটে দলের ক’জন প্রভাবশালী নেতাকেও নাজেহাল করেছে। মির্জা আব্বাসসহ বেশ ক’জন বিএনপি নেতা বেশ ক’বার তাদের সঙ্গে বৈঠক করেও বাগে আনতে পারেননি।

এরকম প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের ৩৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১ জানুয়ারি রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ‘শিগগিরই’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের ঘোষণা দেন । অবশেষে গত রোববার ৭৩৬ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পদবঞ্চিতদের ঠাঁই দিতে এত বিরাট আকারের কমিটি ছাত্রদল কেন যে কোনো সংগঠনের ইতিহাসেই নেই। এরপরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ভাংচুর হয়েছে বিএনপি ভবন। তবে এবার তারা আরো একধাপ এগিয়েছে, এবার তারা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ও খালেদা জিয়ার ছবি ভাংচুর করেছে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকারের এজেন্টরাই’ একাজ করেছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জন্মের পর থেকেই জনপ্রিয় একটি সংগঠন হয়ে ওঠেছিল। যে কোনো ছাত্র সংগঠনের চেয়ে তাদের কর্মী ও সমর্থক সংখ্যা বেশি ছিল। বিশেষ করে আশির দশকে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের আধিপত্য দেখা যায়। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ছাত্রদলের নেতারাও টেন্ডার ভাগাভাগি, ঠিকাদারিসহ নানা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। এরপর আর সংগঠনটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। যে ছাত্রদলের ওপর ভর করে বিএনপি আন্দোলন সফল করার চিন্তা করতো, সেই ছাত্রদল গত কয়েক বছরে যেন হারিয়ে গেছে।

এর কারণ হিসেবে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলছেন ছাত্রদলের কোনো অভিভাবক নেই, সংগঠনটি দেখভাল করার কোনো নেতা নেই। অথচ ছাত্রলীগের হাজারো বদনাম থাকার পরেও নেতৃত্ব নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। গত কয়েক বছর ধরে তুলনামূলক কমবয়সীরা পাচ্ছেন সংগঠনের দায়িত্ব। কর্মকাণ্ড যাই করুক না কেন অনেকটা নিয়মের মধ্যে এসে গেছে নেতৃত্ব নির্বাচন। আর ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসার জন্য বহু বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ করে নানা কোর্সে ভর্তি হয়ে ছাত্র পরিচয় ঝুলিয়ে রাখে অনেকেই। তাদের বেশিরভাগই ব্যবসা-বাণিজ্য করে সংসার সামলাচ্ছেন। তাই ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর দেখা যায় তাতে অছাত্র, বিবাহিত ও বয়স্কদের প্রাধান্য।

প্রশ্ন হলো সাত শতাধিক কর্মীকে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা করা হলেও দলের কার্যালয় ভাংচুর করা হয় কিভাবে, বিদ্রোহী বা পদবঞ্চিত কতোজন? দলের সাধারণ নেতাকর্মীরওতো দরকার পড়ে না। বিদ্রোহীদের প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় কমিটিই যথেষ্ট। সাতশ কর্মী যদি কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাহাড়া দিত তাহলে নিশ্চয়ই জিয়া বা খালেদার  ম্যুরাল, ছবি ভাংচুর করা যেতো না। তাহলে কী ছাত্রদলে আসলেই কোনো ত্যাগী নেতা নেই? নাকি রিজভীর ভাষায় তাদের অনেকেই সরকারের এজেন্ট হয়ে গেছে।

রিজভীর ওই অভিযোগটি গুরুতর। তিনি বলতে চেয়েছেন সরকারের হয়ে একদল বহিরাগত বিএনপি অফিসে হামলা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা অস্বাভাবিক নয়, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যদি কেউ এটা করেও থাকে তাহলে বিএনপির প্রাণ ছাত্রদলের কর্মীরা কোথায় ছিল। ৭৩৬ জনকে দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে কমিটি করার পরও যদি সংগঠনে বিদ্রোহ হয়, সেই বিদ্রোহীদের নিয়ে ব্র্যাকেটবন্দি ছাত্রদল করার সুযোগতো সরকার নিতেই পারে। বিএনপি সরকারকে সেই সুযোগ দেবে কেন?

বিএনপি যদি শিগগিরই ছাত্রদলজনিত সমস্যা কাটিয়ে ওঠতে না পারে তাহলে আগামী মার্চে বিএনপির কেন্দ্রিয় যে কাউন্সিল হবে সেখানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন যারা কমিটি থেকে বাদ পড়বে তারাও নিশ্চয়ই ছাত্রদলের বঞ্চিতদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। তখন কী বঞ্চিত ন্যাশনালিষ্ট পার্টি- বিএনপি নামে আরেকটি সংগঠনের জন্ম নিবে? সরকারের এজেন্টারাতো তৎপর আছেনই!

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন