ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

পুঁজিবাজার : সংকট ও সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০২:৪১ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এখনই বিনিয়োগের সঠিক সময়। কারণ পুঁজিবাজারে এখনও অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক কম রয়েছে। যেখানে বিনিয়োগ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রফিট করতে পারবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বাড়াতে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন করার সুযোগ করে দিচ্ছে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ। আর কিছু দিনের মধ্যেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজে আইডি ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই লেনদেন করতে পারবেন।

একটানা সূচক এবং লেনদেনের নিম্নমুখি প্রবণতার পর ফেব্রুয়ারি মাস বিনিয়োগকারীদের নতুন আসার সঞ্চার করেছে। নতুন বছরে ৩ জানুয়ারি  ২০১৬ সালে প্রথম লেনদেন ছিলো ৩শ’ ৬৬ কোটি টাকা এবং সূচক ছিল ৪ হাজার  ৬২৪ দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট।  এরপরে  পুরো মাস জুড়ে সূচক এবং লেনদেনে ছিলো ব্যাপক ওঠানামা। এরপর ১৯ জানুয়ারি সর্বোচ্চ ২০১৬ সালে রেকর্ড পরিমান ৭শ’ ২০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়।  ১৯ জানুয়ারির পর থেকে সূচক এবং লেনদেন দুটোরই পতন শুরু হয় এবং ১০ কার্যদিবসে সূচক এবং লেনদেন উঠা নামার পার্থক্য ছিল অনেক বেশি। জানুয়ারি মাসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতার সংকট ছিল। ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের  পরে পুরো বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও ২০১৬ সালের এক মাসের  বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তেমন জায়গা করতে পারে নি।

পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের পরে  হঠাৎ করেই ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগের ফলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব এখনও চলমান আছে। এছাড়াও মার্জিন লোন নেতিবাচক হয়ে যাওয়ায় নতুন করে লোন নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এরইমধ্যে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করলেও তাদের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। নতুন বছরের এই বাজারে কারসাজিকাররাও পুরো এক মাস জুড়ে সুক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, ছোট সম্পদ মূল্যের কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ছিল উলম্ফন। আর এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে অনেক বেশি। কারণ স্টক একচেঞ্জ এবং সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ কমিশনের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল ছিলো।

সাম্প্রতিক সময়ে সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনের একজন কমিশনার পদত্যাগ করলেও এখনও নতুন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এছাড়াও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা না হলেও তার বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এবং সিএসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছুটিতে থাকায় সিএসি’র কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এদিকে, ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের ৩ বছর মেয়াদ শেষ হবে ২০১৬ সালের এপ্রিলের ১৫ তারিখ। এ কারণে দুই স্টক একচেঞ্জের সর্বোচ্চ পদে এবং সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার  নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ অনেক সময়ই বিনিয়োগকারীরা মনে করেন এই বাজার অভিভাবকহীন।

পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড  একচেঞ্জ কমিশন, ব্রোকারারস এসোসিয়েশন, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন, লিস্টেড কোম্পাানি, নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট, লিজিং এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ের মধ্যমে সঠিক কর্ম-পরিকল্পনাই পারে বাজারে বর্তমান অস্বাভাবিক আচরণ থেকে একটি  স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক বাজারের পরিবেশ ফেরাতে। তবে, আইসিবি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সবসময়ই বাজারে সুযোগ দেখে বিনিয়োগ করে বিধায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সমস্যার সম্মুখীন হয়। আইসিবির উচিত পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত  করতে বাজারের স্বার্থে শেয়ার কিনে বাজারকে সাহায্য করা।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ঝুলে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হলেও স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কাছে ২০১০ সালের মামলাগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য বলছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আবার ফেব্রুয়ারি মাসেই বুক বিল্ডিং পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে একমি ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের বিষয়ে নিলাম কার্যক্রম শুরু করে। সবমিলিয়ে ২০১৬ সালের পুঁজিবাজারকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি বিনিয়োগবান্ধব বাজার হিসাবে দেখতে চায়। তারই ধারাবাহিকতায় আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের সুদের হার কমানো হয়েছে। পুঁজিবাজারে সারাদেশের বিনিয়োগকারীদের সংযুক্ত করতে নতুন নতুন শাখা খোলার কথা বললেও সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনে দক্ষ জনবল না থাকায় বিএসিসির পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করার পরিকল্পনা থাকলেও তা করতে পারছে না। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর অবসানের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায়  মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভোগান্তি বাড়ছে।

শেয়ার বাজারে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে রয়েছে নেতিবাচক পরিস্থিতি। খাতভিত্তিক লেনদেনে পিছিয়ে আছে ব্যাংকিং খাত। কিছু কিছু ব্যাংকের শেয়ার ৪ টাকা থেকে ৮টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। যার করণে ২০১০ সালে যে সকল বিনিয়োগকারী অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনে আটকে গেছেন, দীর্ঘ ৫ বছর শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ২০১৬ সালে এসেও তারা সেসকল শেয়ার থেকে বের হতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার অনেক ব্রোকারেজ হাউজ গুলোতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেতে চাইলেও বাজারের অসহনীয় পরিস্থিতি দেখে অনেকেই বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে বাজারের পরিস্থিতি।

তবে, ২০১৬ সালে  রাজনৈতিক পরিস্থিতি এভাবে স্বাভাবিক থাকলে মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশন, এফবিসিসিআই, স্টক একচেঞ্জ, ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন, আইসিবি বাজারের স্বার্থে তাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে গেলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার হতে পারে ২০১৬ সালে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাময় সময়। আর এজন্য দরকার সারা বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করা এবং গুজব নির্ভর শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকা। বিদেশী বিনিয়োগকারী যারা আসতে চায় তাদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিতে নতুন ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। আর এজন্য শুধু সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনই না বাজারকে ঢেলে সাজাতে সরকার, অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্তরিকতা পুঁজিবাজারের গতিশীলতা আরো বাড়াতে পারে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল জায়গায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঠিকভাবে কাজের বণ্টন পুঁজিবাজারে অনেক নেতিবাচক সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে।

লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা

এইচআর/এমএস