ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

পদই নেই আবার উন্নতি

প্রকাশিত: ০৫:০৩ এএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেখছি আমলাতন্ত্র বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের বিশেষ কদর বেড়েছে। বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে এখন পদের চেয়ে কোনো কোনো স্তরে কর্মকর্তার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। পদ না থাকলেও পদোন্নতির কমতি নেই। বেশিরভাগ কর্মকর্তাই উচ্চ পদে আসীন হয়েও নিম্মপদেই কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে আবার পাঁচশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এখন যাদের পদোন্নতি দেয়া হবে তাদের বেশির ভাগের অবস্থাও এমনই হবে।

প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩০টি পদ থাকলেও বর্তমানে এ পদে কর্মকর্তা আছেন ২৬০ জন। তাদের মধ্যে ১০০ জনের মতো কর্মকর্তা আগের পদে কাজ করছেন। ৪৩০টি যুগ্ম সচিব পদের বিপরীতে কর্মকর্তা আছেন ৯০৭ জন। এরমধ্যে প্রায় আড়াইশ কর্মকর্তা আগের পদে অর্থাৎ উপসচিব পদে কাজ করছেন। ৮৩০টি উপসচিব পদের বিপরীতে আছেন এক হাজার ৩১৩ জন। এই স্তরে প্রায় ৫০০ কর্মকর্তা অতিরিক্ত।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এভাবে চলতে চলতে কোনো এক সময় সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েও সহকারী সচিবের কাজ করে যেতে হবে। হয়তো তখন থানা নির্বাহী কর্মকর্তার আদলে ইউনিয়ন নির্বাহী কর্মকর্তা এরপর গ্রাম নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হবে। নয়তো এত কর্মকর্তাকে কোন পদে বসানো হবে? তখন সচিবরা হবেন জেলা প্রশাসক আর অতিরিক্তি সচিবরা হবেন থানা প্রশাসক, যুগ্ম সচিবরা হবেন ইউনিয়ন প্রশাসক, উপসচিবরা হবেন গ্রাম প্রশাসক। প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তার আধিক্যের পাশাপাশি নিচের স্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব পর্যায়ে এখনো অনেক পদ ফাঁকা।

এই গত এপ্রিলেই স্থায়ী পদ না থাকলেও উপসচিব, যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবের তিন স্তরে একসঙ্গে ৮৭৩ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এবার আবারো পদোন্নতি দিতে হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গত বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জনপ্রশাসনের ৯৮৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ যেদিন সরকার গঠন করে এর পর দিন অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি যুগ্ম-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে ৮০ জনকে পদোন্নতি দেয়। এর আগে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রশাসনের ২ হাজার ৫২৮ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবারই পদোন্নতির সময় দেখা গেছে পদোন্নতি না পাওয়া কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

পদোন্নতির এই হিড়িকে ওপরের স্তরে কর্মকর্তার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে জনপ্রশাসন। এবার বলা হচ্ছে আগে যারা পদোন্নতি বঞ্চিক হয়েছেন তাদের ক্ষোভ কমানোর জন্য পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই আলোচনায় মনে হতে পারে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কী ন্যায্য পদোন্নতি দেয়া হবে না? তারা কী একই পদে কাজ করে যাবেন জীবনভর? বিষয়টি তা নয়। প্রশ্ন হলো যোগ্য ও মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে কিনা? আর পদ সৃষ্টি না করেই কেন পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনে পদোন্নতি বঞ্চিত এই কথাটির সৃষ্টি হলোই বা কেন?  

সরকার যন্ত্রকে পরিচালনা করবেন একদল দক্ষ মানুষ, যারা রাজনৈতিক সরকারের রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়ন করে যাবেন। যারা রাস্ট্র ব্যবস্থা সচল রাখবেন। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তাদের কাজ কিভাবে জনগণের সেবা করা যায়। সংবিধানেও বলা আছে সেকথা। কিন্তু আমরা বরাবরই দেখে আসছি এক শ্রেনির আমলা সরকারের খুব কাছের লোক হয়ে যান। সরকার যেমন তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধ করে নেয়ার জন্য তাদেরকে কাজে লাগায়, তারাও সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়ে থাকেন। এই দুষ্টুচক্রের মধ্যেই পড়ে আছে আমাদের আমলাতন্ত্র। মাঝখান থেকে জনগণ তার প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেটা দেখার কেউ নেই। বলা হয়, বঞ্চিতদের অবশ্যই পদোন্নতি দিতে হবে, এটা তাদের অধিকার। কিন্তু জনগণ যে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, জনগণের সেই অধিকার আদায় হবে কীভাবে?

সরকার যদি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয় তাহলে প্রশাসনের ওপর এতটা নির্ভর করে থাকতে হত না। তারা নিয়োগ ও পদোন্নতির নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে পারত। তা না করে মেধার চেয়ে এখন অন্যান্য পরিচয়কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। সবাই কেবল পদোন্নতির দাবিই করছেন তারা কোনো স্বচ্ছ নীতি অনুসরণের দাবি করছেন না। সরকারও যেন কোনোভাবে তাদের পদোন্নতি দিতে পারলেই বাঁচে! এভাবে চলতে চলতে যে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে বের হয়ে আসা এরইমধ্যে কঠিন হয়ে পড়েছে, আর কিছুদিন পর হয়তো দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। একটি মেধাবী আমলাগোষ্ঠি তৈরি করতে হলে প্রশাসন থেকে দলীয় রাজনীতির চিন্তা বাদ দিতেই হবে। আর স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। সরকার যদি মনে করে জনগণ সাথে না থাকলেও চলবে তাহলে এই সমস্যার সমাধান কোনোদিনই হবে না।

pintu

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন