ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বৃক্ষমানবের চিকিৎসায় মানবতার জয় হোক

প্রকাশিত: ০৩:০০ এএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আবুল বাজনদা। ২৫ বছরের টগবগে এক যুবক। খুলনার পাইকগাছার এই যুবক বিরল রোগে আক্রান্ত। তার দুই হাত ও দুই পা সাধারণ মানুষের মতো নয়। তার দুই হাতের তালুসহ দশটি আঙ্গুল অদ্ভুত ধরনের গাছের শিকড়ের মতো বড় বড় মাংসপিণ্ডের শ্বাসমূল। পায়ের অবস্থাও তাই। গত দশ বছর ধরে বিরল এ রোগটিতে ভুগছেন তিনি। প্রথমে হাতে একটি ছোট আচিলের মতো গোটা হয়। ধীরে ধীরে গাছের শিকড়ের মতো দুই হাত ও পায়ে ছড়ায়। বিরল অথচ যন্ত্রণাদায়ক এই রোগের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তার জীবন। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি।

চিকিৎসকের মতে,  ‘ইপিডারমোডি ইসপ্লাসিয়া ভেরোসিফারমিস’ নামক এক ধরনের বিরল ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার এই অবস্থা হয়েছে। এ ধরনের অসুখ বাংলাদেশে এই প্রথম এবং গোটা বিশ্বে বিরল। ইতিপূর্বে ২০০৭ ও ২০০৯ সালে মাত্র দু’জন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এদের একজন ইন্দোনেশিয়া ও অপরজন রোমানিয়ান। এ ধরনের রোগীকে ‘বৃক্ষমানব’ বলা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রচারের পর এ নিয়ে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশ্ব মিডিয়ায়ও স্থান পেয়েছে তার খবর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও পাওয়া গেছে সহায়তার আশ্বাস। তবে তা এখনো পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।

বাংলাদেশে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। আবুল  বাজনদারের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বিদেশে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সম্ভব নয়। আবুল বাজনদারের রোগটি বিরল প্রকৃতির। শুধু একজন নাগরিকের চিকিৎসার দায় বোধ থেকেই নয় এই রোগ সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা, সর্বোপরি চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থেও তার পাশে সংশ্লিষ্টদের দাঁড়ানো উচিত। একটি মানবিক রাষ্ট্র কখনো এই ধরনের বিরল রোগে আক্রান্ত তার নাগরিককে অবহেলায় ফেলে রাখতে পারে না। গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর পরই সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া উচিত ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি দেখতে পারতো। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে পারতেন।

আমরা আশা করবো দরিদ্র পরিবারের এই অসহায় মানুষটির চিকিৎসার স্বার্থে সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে আবুল বাজনদারের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জটিল-কঠিন হিসাব শেষে জয় হবে মানবতার। মানুষের।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন