ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

‘আগামী নির্বাচন দিনেই হবে, রাতে নয়’

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ৩০ মে ২০২২

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। ২০০৮ সালে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তারপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনেও জয় পায় আওয়ামী লীগ। তবে পরের দুটি নির্বাচন ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য ছিল না।

২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশই নেয়নি। ভোটারবিহীন তো বটেই, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংকট ছিল প্রার্থীরও। ভোটগ্রহণের আগেই আসলে ক্ষমতায় চলে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কারণ ১৫৪ আসনে তারা জয় পেয়েছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিএনপি আসেনি বলে, আওয়ামী লীগের খুব কিছু করারও ছিল না। বিএনপি পেট্রলবোমা আর সন্ত্রাসে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও পারেনি। নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ভুল করেছে, সেবার এমন প্রচারণা ছিল ব্যাপক।

সেই ভুল শোধরাতে তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করে নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি জিততে চায়, এমনটি মনে হয়নি কখনোই। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। তাদের প্রস্তুতিতেও জেতার আকাঙক্ষা পরিস্ফুট হয়নি। মনে হয়েছে, নির্বাচনকে বিতর্কিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। সে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে দারুণভাবে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, পুলিশ আর প্রশাসনের অতি উৎসাহ বিএনপি যতটা চেয়েছিল, নির্বাচনকে তারচেয়েও বেশি বিতর্কিত করে তোলে। ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার মতো ঘটনা ঘটেছিল সে নির্বাচনে। জেতার জন্য যতটা দরকার, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশে খারাপ নির্বাচনের তালিকা করলে ২০১৮ সালের নির্বাচন থাকবে ওপরের দিকেই। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার কৌশলে দারুণ সফল হয় বিএনপি।

নিজেদের ভরাডুবি ঘটলেও নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ করা গেছে এটিই তাদের সাফল্য। সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে, এমন ধারণা ব্যাপক প্রচার পায়। ধারণা কখনো কখনো সত্যের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তবে ‘নিশিরাতে ভোট হয়েছে’ এ ধারণা প্রচার করতে পারলেও বিএনপি এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি, না মাঠে, না ট্রাইব্যুনালে, না উচ্চ আদালতে; নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোনো শক্ত প্রতিরোধের চেষ্টাও তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। প্রথমে শপথ নেবো না বললেও শেষ মুহূর্তে সংসদে যোগ দিয়ে বিএনপি বরং সে নির্বাচনকে একধরনের বৈধতাই দিয়েছিল। ‘আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’ এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেই বিএনপি সন্তুষ্ট ছিল। এখন সেই সন্তুষ্টি কাজে লাগিয়েই বিএনপি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি এখন তাদের মূল দাবিতে ফিরে গেছে- নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়।

তবে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাঠের বাস্তবতা কী বলে? বিএনপি যদি প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে সংবিধান সংশোধনে বাধ্য করতে পারে তাহলেই কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সে চেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি আওয়ামী লীগবিরোধী সব দলকে এক কাতারে আনার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিদেশি শক্তিগুলোও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে। সেখানে বিএনপি ভরসা করছে অনেক বেশি। কিন্তু কূটনীতিকরা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে যতটা সচেষ্ট, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে ততটা নয়।

বিএনপির সামনে আসলে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু গত এক যুগে বাংলাদেশে রাজনীতির চিত্রই পাল্টে গেছে। আন্দোলন করে দাবি আদায় করা যাবে, এমনটা মাঠের বাস্তবতা নয়। আন্দোলনের মাঠের বাস্তবতা পরীক্ষা করতে ছাত্রদলকে আগে মাঠে নামিয়েছে বিএনপি। কিন্তু মাঠে নেমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের হাতে ব্যাপক মার খেয়েছে ছাত্রদল। উল্টো এখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।

আমার আশঙ্কা, ছাত্রদলের এই মাঠে নামার চেষ্টার ফলে দায়ের করা মামলা দিয়েই তাদের দৌড়ের ওপর রাখবে সরকারি দল। অন্যায়ভাবে মার খেয়ে ছাত্রদল জনগণের বিপুল সহানুভূতি ছাড়া আর কিছু পায়নি। সেই সহানুভূতিকে কি ছাত্রদল বা বিএনপি সম্ভাব্য আন্দোলনে কাজে লাগাতে পারবে। আওয়ামী লীগকে পছন্দ করুক আর না করুক, দেশের মানুষ কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

বিএনপি নির্বাচনে গেলে হয়তো ভোট পাবে, কিন্তু আন্দোলনের মাঠে জনগণকে কতটা পাশে পাবে, তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কৌশল কী হবে? তারা কি নির্বাচনে যাবে নাকি যাবে না? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও কারও জানা নেই। এর উত্তর পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হোক আর নিরপেক্ষ সরকার; নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো নির্বাচন কমিশনের। হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন এরই মধ্যে কথার লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন। তবে এখনও তাদের কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে তাদের প্রথম পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উতরে যেতে পারলে সামনের দিনগুলোতে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারবে তারা। তবে শুধু কথা দিয়ে যদি আস্থা অর্জন করা যায়, তাহলে বলতেই হবে তারা সফল।

সম্প্রতি মাদারীপুরের এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট দিনেই হবে। রাতে কোনো ভোট হবে না।’ আনিছুর রহমানকে ধন্যবাদ, তিনি দিনে ভোট করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তার এই বক্তব্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতে ভোট হয়েছে, সেই ধারণার একধরনের স্বীকারোক্তিও আছে।

আনিছুর রহমানকে আবারও ধন্যবাদ, সত্যটা স্বীকার করার জন্য। আগামী নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, কারা অংশ নেবে, কারা জিতবে; জানি না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যদি দিনের ভোট দিনে করতে পারে এবং মানুষ যদি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তাহলেই আমরা খুশি। এটুকুই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। আশা করি, হাবিবুল আউয়াল কমিশন তাদের দায়িত্বটুকু নিরপেক্ষতা, সততা ও দৃঢ়তার সাথে পালন করবেন।
২৯ মে, ২০২২

লেখক: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

আরও পড়ুন