ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

উদ্বেগজনক

প্রকাশিত: ০৪:৩৩ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

জঙ্গিতৎপরতার অভিযোগে ২৭ বাংলাদেশিকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পাঠানোর ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশ্বব্যাপী উগ্রবাদের উত্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের বিদেশের মাটিতে গিয়ে এই ধরনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও দেশে পাঠানোর প্রতিক্রিয়া হবে নানামাত্রিক। এখন বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিদেশে বিশেষ করে সিঙ্গাপুরে কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। এমনকি জনশক্তি রপ্তানিতেও এই ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হচ্ছে এই জনশক্তি রপ্তানি। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সেই অর্থনীতির গতিপ্রবাহ অনেকটাই ঠিক থাকে। কাজেই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে এই ঘটনা কোনো প্রভাব না ফেলে।
 
এ সংক্রান্ত সংবাদ থেকে জানা যায়,  উগ্রবাদে বিশ্বাসী ২৭ বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরের মাটিতে বসে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা করছিলেন- এমন অভিযোগ করেছে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৬ জনকে গত ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। আরো একজন ফেরার অপেক্ষায়। তবে বাংলাদেশ বলছে, ২৭ জনই ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাকি ১৩ জনকে আত্মীয়দের জিম্মায় দেওয়া হলেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সিঙ্গাপুর সরকারের আনা অভিযোগ পুলিশ খতিয়ে দেখছে। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ- ওই বাংলাদেশিদের কাছে জিহাদি বই, ভিডিও এমনকি সন্ত্রাসীদের শিবিরে শিশুদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ভিডিও পাওয়া গেছে। কয়েকজন সদস্যের কাছে বিভিন্ন উপায়ে গুপ্তহত্যা চালানোর নির্দেশনারও ছবি পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাপারে বাংলাদেশের পুলিশ বলছে  ‘যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনুসারী হিসেবে স্বীকার করেছে এবং তদন্তে তাদের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।’ ‘জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে মসজিদে তারা নামাজ পড়ত এবং অন্যদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করত। তবে তাদের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগাযোগ নেই।’

জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিরাট সমস্যার নাম। বাংলাদেশও এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। যদিও সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে, কিন্তু জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না। এখন তো বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলো। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। সিঙ্গাপুর সরকার যে অভিযোগ করছে সেটির সত্যাসত্য নিয়েও জোর তদন্ত চালাতে হবে। ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তা ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। বলা হচ্ছে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাহলে বিদেশ যাওয়ার সময় এদের ব্যাপারে পুলিশ রিপোর্ট কী ছিল। পুলিশ কি তখন জানতো না। এখন থেকে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যারা দেশের বাইরে কাজ করতে যায় তারা শুধু অর্থনৈতিকভাবে অবদানই রাখে না, তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। কাজেই কেউ কোনো নেতিবাচক কাজ করলে দায়টা পড়বে কিন্তু অনেকের উপর। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকরা জঙ্গিতৎপরতার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তার মাশুল কিন্তু ভয়ানক। এ  ব্যাপারে প্রবাসী ও বৈদেশিক শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয়,  স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দপ্তর ও সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিদেশের মাটিতে গিয়ে কেউ যাতে হয়রানির শিকার হয় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন